পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গদ্যকাব্য শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কতকগুলি বিষয় আছে যার আবহাওয়া অত্যন্ত সূক্ষ্ম, কিছুতেই সহজে প্রতিভাত হ’তে চায় না। ধরাছোওয়ার বিষয় নিয়ে তর্কে আঘাত-প্রতিঘাত করা চলে । কিন্তু বিষয়বস্তু যখন অনির্বচনীয়ের কোঠায় এসে পড়ে তখন কী উপায়ে বোঝানো চলে তা হৃদ্য কি না। তাকে ভালো-লাগা মন-লাগার একটা সহজ ক্ষমতা ও বিস্তৃত অভিজ্ঞতা থাকা চাই। বিজ্ঞান আয়ত্ত করতে হ’লে সাধনার প্রয়োজন । কিন্তু রুচি এমন একটা জিনিস যাকে বলা যেতে পারে সাধন-দুলভ, তাকে পাওয়ার বাধা পথ ন মেধয়া ন বহুনা শ্রতেন। সহজ ব্যক্তিগত রুচি অকুযায়ী বলতে পারি যে এই আমার ভালো লাগে । সেই রুচির সঙ্গে যোগ দেয় নিজের স্বভাব, চিস্তার অভ্যাস, সমাজের পরিবেষ্টন ও শিক্ষা । এগুলি যদি ভদ্র, ব্যাপক ও সূক্ষ্ম বোধশক্তিমান হয় তাহলে সেই রুচিকে সাহিত্যপথের আলোক ব’লে ধরে নেওয়া যেতে পারে । কিন্তু রুচির শুভ সম্মিলন কোথাও সত্য পরিণামে পৌছেছে কিনা তাও মেনে নিতে অন্য পক্ষে রুচিচর্চার সত্য আদশ থাকা চাই। স্বতরাং রুচিগত বিচারের মধ্যে একটা অনিশ্চয়তা থেকে যায়। সাহিত্যক্ষেত্রে যুগে যুগে তার প্রমাণ পেয়ে আসছি । বিজ্ঞান দর্শন সম্বন্ধে যে মানুষ যথোচিত চচা করে নি সে বেশ নম্রভাবেই বলে, মতের অধিকার নেই আমার । সাহিত্য ও শিল্পে রসস্বষ্টির সভায় মতবিরোধের কোলাহল দেখে অবশেষে হতাশ হয়ে বলতে ইচ্ছে হয়, ভিন্ন রুচিহি লোক: । সেখানে সাধনার বালাই নেই ব’লে স্পধর্ণ অাছে অবারিত, আর সেই জন্যেই রুচিভেদের তর্ক নিয়ে হাতাহাতিও হয়ে থাকে। তাই বররুচির আক্ষেপ মনে পড়ে, অরসিকেষু রসস্ত নিবেদনম্ শিরসি মা লিখ মা লিখ মালিথ। স্বয়ং কবির কাছে অধিকারী ও অনধিকারীর প্রসঙ্গ সহজ । তার লেখা কার ভালো লাগল কার লাগল না শ্রেণীভেদ এই যাচাই নিয়ে। এই কারণেই চিরকাল ধ’রে যাচনদারের সঙ্গে শিল্পীদের ঝগড় চলেছে। স্বয়ং কবি কালিদাসকেও এ নিয়ে দুঃখ পেতে হয়েছে সন্দেহ নেই ; শোনা যায় না কি ‘মেঘদূতে স্কুলহস্তাবলেপের ইঙ্গিত আছে । যে সকল কবিতায় প্রথাগত ভাষা ও ছন্দের অনুসরণ করা হয় সেখানে অন্তত বাইরের দিক থেকে পাঠকদের চলতে ফিরতে বাধে না । কিন্তু কখনো কখনো বিশেষ কোনো রসের অনুসন্ধানে কবি অভ্যাসের পথ অতিক্রম ক’রে থাকে। তখন অন্তত কিছু কালের জন্য পাঠকের আরামের ব্যাঘাত ঘটে ব’লে তারঃ নূতন রসের আমদানীকে অস্বীকার ক’রে শাস্তি জ্ঞাপন করে। চলতে চলতে যে পর্যস্ত পথ চিহ্নিত হয়ে না যায় সে পর্যন্ত পথকর্তার বিরুদ্ধে পথিকদের একটা ঝগড়ার হষ্টি হয়ে ওঠে। সেই অশাস্তির সময়টাতে কবি স্পধর্ণ প্রকাশ করে, বলে তোমাদের চেয়ে আমার মতই প্রামাণ্য । পাঠকরা বলতে থাকে, যে লোকট। জোগান দেয় তার চেয়ে যে লোক ভোগ করে তারই দাবীর জোর বেশি । কিন্তু ইতিহাসে তার প্রমাণ হয় না। চিরদিনই দেখা গেছে নূতনকে উপেক্ষা করতে করতেই নূতনের অভ্যর্থনার পথ প্রশস্ত হয়েছে। কিছু দিন থেকে আমি কোনো কোনো কবিতা গদ্যে লিখতে আরম্ভ করেছি। সাধারণের কাছ থেকে এখনি যে তা সমাদর লাভ করবে এমন প্রত্যাশা করা অসংগত । কিন্তু সদ্য সমাদর না পাওয়াই যে তার নিষ্ফলতার প্রমাণ তাও মানতে পারি নে। এই দ্বন্দ্বের স্থলে আত্মপ্রত্যয়কে সম্মান করতে কবি বাধ্য । আমি অনেক দিন ধ’রে রসস্থষ্টির সাধনা করেছি, অনেককে হয়তো আনন্দ দিতে পেরেছি, অনেককে হয়তো বা দিতে পারি নি। তবু