পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অহিংসা ডক্টর শ্রমুরেন্দ্রনাথ দাসগুপ্ত প্রায় সকল দেশের সাহিত্যেই যুদ্ধের এবং বীরত্বের প্রশংসা দেখিতে পাওয়া যায়। আরিষ্টটল সাহসের ( • on ag : ) কথা বলিতে গিয়া বলিয়াছেন যে, যদিও নানা ক্ষেত্রে নানা জাতির সাহসের পরিচয় পাওয়া যায়, তথাপি মৃত্যু ভয়ে ভীত না হওয়াই সাহসের প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু রোগ বা অন্যপ্রকার আকস্মিক বিপংপাতে যে মৃত্যুর সম্ভাবনা আছে তা হাতে ভীত না হওয়াকে সাহসের উৎকৃষ্ট উদাহরণ বলা যায় না , কেবলমাত্র যুদ্ধে প্রাণভয়ে ভীত না হওয়াকেই সাহসের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলা যায় { রোগে বা আকস্মিক দৈবকারণে যে মৃত্যু ঘটে, সেখানে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করাকে কোনও হিসাবে সাহস বল। যায় বটে, কিন্তু সে সাহসের বিশেষ কোনও মূল্য নাই, কারণ সে সাহসের দ্বারা সেখানে কিছু সাধন করিবার নাই এবং রোগশয্যায় মৃত্যুকে কোনও মহত্বমণ্ডিত মৃত্যু বলা যায় না—কেবলমাত্র যুদ্ধে মৃত্যুকেই যথার্থ গৌরবের মৃত্যু বলা যায়। যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করিয়া শক্রকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন না করিয়া যে যুদ্ধে অগ্রসর হয়, সেই-ই যথার্থ সাহসী । গীতায় আঠারটি অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ অৰ্জ্জুনকে যে সমস্ত গভীর বিষয়ে উপদেশ দিয়াছেন, তাহাতে অনেক আধ্যাত্মিক তথ্যের আলোচনা করা হইয়াছে সন্দেহ নাই, কিন্তু ঐ সমস্ত বাক্যের মূল উদেশ্ব অৰ্জ্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করান। কৃষ্ণ বলিয়াছেন–নিহত হইলে স্বর্গে যাইবে এবং জয়লাভ করিলে পৃথিবীর রাজা হইবে। ধৰ্ম্মযুদ্ধ অপেক্ষা ক্ষত্রিয়ের আর কোন উচ্চতর আদর্শ নাই। ক্ষত্রিয়ের যুদ্ধই ধৰ্ম্ম । কিন্তু ক্ষত্রিয়ের যুদ্ধই যদি ধৰ্ম্ম হয়, তবে ধৰ্ম্মযুদ্ধ কাহাকে বলে ? গীতার অধিকাংশ টকাকারই এ বিষয়ে নীরব । রামানুজ বলেন—ম্ভায়সঙ্গত কারণে প্রবৃত্ত যে 6tb---Yo, ইহার সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য বল যুদ্ধ তাহাকেই ধৰ্ম্মযুদ্ধ বলে । শঙ্কর বলেন-প্ৰজাপালন ও ধৰ্ম্মরক্ষার জন্য যে যুদ্ধ করা যায় তাহাকেই ধৰ্ম্মযুদ্ধ বলে । বেদের মধ্যে হিংসা করিও না—ম মা হিংসী, অর্থাৎ পরস্পরকে হিংসা করিও না—এই উপদেশ দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই যজ্ঞে পশুবধেরও বিধান দেখা যায় অহিংসা বাক্যের সহিত যায় যে হিংসার সাধারণ নিষেধ থাকিলেও বৈধ হিংসায় পাপ নাই । অৰ্জ্জুন যখন যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া আত্মীয়স্বজনকে বধ করিতে হইবে এই চিন্তায় অবসর হইয়া পড়িলেন, তখন কৃষ্ণ তাহাকে তিরস্কার করিয়া বলিলেন যে র্তাহার কার্য্য আৰ্য্যজনোচিত নহে এবং তাহাতে সকলেই তাহাকে নিন্দ করিবে । যুদ্ধক্ষেত্রে আসিয়া আত্মীয়হিংসা বা নরহিংসা করিতে হইবে ভাবিয়া যুদ্ধ হইতে বিরত হওয়ার চেষ্টাকে ক্লীবতা ও কাপুরুষতা ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। যুদ্ধস্থলে সম্মুখসমরে প্রাণিহিংসা করিলে কোনও পাপ হয় ন; শ্ৰীকৃষ্ণের বাক্যের তাৎপৰ্য্য এই যে যুদ্ধ বৈধ হিংসা। অন্তবিধ বৈধ হিংসায় যেরূপ পাপ হয় না, তেমনই যুদ্ধেও কোনও পাপ হয় না । রামায়ুজ যজ্ঞে পশুবধের সহিত যুদ্ধে মনুষ্যবধের তুলনা করিতে গিয়া বলিয়াছেন যে, যুদ্ধে নিহত পশু ধেরূপ মৃত্যুর পর দিব্য কলেবর ধারণ করে, যুদ্ধে নিহত মনুষ্যও তেমনই নূতন দেহে স্বগারোহণ করে। সকল ধৰ্ম্মশাস্ত্র ও পুরাণাদিতে যুদ্ধের ও যুদ্ধভূমিতে সাহস প্রদর্শনের ভূয়সী প্রশংসা দেখা যায়। অথচ অধ্যাত্ম-শাস্ত্র পাঠ করিলে দেখা যায় যে, সাৰ্ব্বভৌম অহিংসাই সৰ্ব্বশ্রেষ্ঠ ধৰ্ম্ম । বৌদ্ধ ও জৈন শাস্ত্র অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত এই মতেরই পোষকতা এবং