পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিৰ্ম্মোক “বনফুল” & অতি প্রত্যুষে দাতন-হস্তে বদিবাবু আসিয়া দর্শন দিলেন। —ডাক্তার বাবু, আপনি একটা ভারি অ-রাজনৈতিক কাজ ক’রে ফেলেছেন । —কি বলুন তো ? —শুনলাম মথুর মুখুজ্যেদের ক্লাবে গিয়ে আপনি মিশেছেন ! —মিশলেই বা । বদিবাবু নীরবে কিছুক্ষণ দাতন ঘষিলেন, তাহার পর হাসিয়া বলিলেন—আর কিছু নয়, চালে একটু ভুল হয়েছে! আমাদের সমস্ত জীবনটাই তো একটা দাবাখেলা, চালে ভূল হলেই মাৎ হয়ে যেতে হবে! ব্যাপারটা কি খুলে বলুন দেখি — বিমল ব্যাপার সমস্ত খুলিয়া বলিল এবং উপসংহারে বলিল-আমর আমার অনেক দিনের বন্ধু, তার অনুরোধ এড়ানো একটু শক্ত, কিন্তু বন্ধুত্বের জন্যে এ-কাজ আমি করি নি, আমি করেছি হাসপাতালের জন্যে। থিয়েটার থেকে শ-দুই আড়াই হ’তে পারে ! হাসপাতালে একেবারে ওষুধ নেই যে, আমি আমার নিজের মাঠনে দিয়ে ওষুধ কিনে চালাচ্ছি—সবই তো জানেন আপনি ! বদিবাবু এতক্ষণ কিছু বলেন নাই, এই বার ফতুয়ার পকেট হইতে একটি কাগজ বাহির করিয়া বিমলের ইস্তে দিয়া বলিলেন—এই নিন। বিমল সবিস্ময়ে দেখিল পাচ শত টাকার একথানি চেক ! -এ কোথা পেলেন ? বদিবাৰু কিছু না বলিয়া স্মিতহাস্তে দাতন ঘষিতে লাগিলেন । — আজই ওষুধের অর্ডার দিয়ে দিন । —টাকাটা পেলেন কি ক’রে ? –বিমল চাটুজ্যের পক্ষে যদি এক মাসের মাইনেট দিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়, বদি চাটুজ্যের পক্ষে পাচ-শ টাকা জোগাড় করা কিছু অসম্ভব নয় ! বিমল হাসিতে লাগিল বদিবাবু বলিলেন-ওটা খুব দামী চাল দিয়েছিলেন আপনি একটা, ভেরি গুড ষ্ট্ৰোক-কিছু বেগ পেতে হয় নি আমাকে, যার কাছে চেয়েছি সে-ই দিয়েছে— —চাদা করে তুললেন নাকি ? —ভিক্ষে । বামুনের ছেলের ভিক্ষে করতে তো লজ্জা নেই! তবে বেশী লোকের কাছে যেতে হয় নি। ওপারের সৌরীনবাৰু, জমিরুদিন, হীরালালবাবু, এ-পারের নন্দী-মশায় আর বর্দি চাটুজ্যে এক-শ টাকা ক’রে দিয়ে দিলাম প্রত্যেকে, মিটে গেল। আপনি একটা রসিদ দিয়ে দিন আমাকে, আর আজই ওষুধের অর্ডার দিয়ে দিন । —নিশ্চয়ই । কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া বদিবাবু বলিলেন—পাশের বাড়ীর টাইফয়েডটা কি আপনার চিকিৎসাতেই ছিল ? —ভূধরবাবুও দেখছিলেন। একটু চুপ করিয়া থাকিয়া বদিবাবু বলিলেন-মর্ফিয়াটা খুব ডেন্জারাস্ ওষুধ নয় ? —আমাদের সব ওষুধই ডেনজারাস্! কিন্তু কি করা যায় বলুন, সিরামটা পাওয়া গেল না, একটা কিছু তো করতে হবে, তাছাড়া মর্ফিয়া তে এর ওষুধই। বদিবাবু কিছু বলিলেন না, গম্ভীরভাবে দাতন ঘষিতে লাগিলেন। ভাবটা যেন আমি তর্ক করিতে চাহি না, কিন্তু মফিয়াট না দিলেই যেন ভাল করিতেন ! —ওরা কান্নাকাটি করছে না, সব চুপচাপ যে ?