পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

86b. রমেশবাবু তখন অন্য পথ ধরিলেন । বলিলেন— বিপিনের কথা আমি অবিশ্বাস করতে পারি না । তোমার বিশু হয়ত অন্য জিনিষে দু-পয়সা মেরেছে, পটলের বেলায় মিথ্যে করে শস্ত দেখিয়ে ভালমানুষ সাজছে! আমার বিপিন— —তোমার বিপিনটি একটি চোর, ওই ডোবাবে তোমায় } অতঃপর তর্কের বিযয় আর পটল রহিল না, বিপিন চোর, না বিশু চোর ইহাতে পর্য্যবসিত হইল । তাহার পর ক্রমশঃ সাধুতা কি, অসাধুতা কি, তাহার পর রামায়ণমহাভারতের উদাহরণ, ক্রমশ: বেদ-বেদান্ত—এই ভাবেই রোজ চলে। রোজই একট। তুচ্ছ বিযয় হইতে মুরু হইয়া বিষয়াস্তরে উপনীত হয় এবং ক্রমশ তুমুল হইতে তুমুলতর হইতে থাকে। রমেশবাবু এবং প্রতাপবাবু বাল্যবন্ধু, শৈশবে একসঙ্গে খেলা করিয়াছেন, পাঠশালায় একসঙ্গে পড়িয়াছেন, একসঙ্গেই এক জন ডাক্তারি এবং এক জন মোক্তারি পাস করিয়াছেন, একসঙ্গে একদা গঙ্গাস্বান করিয়া প্র্যাকটিস ত্যাগ করিয়াছেন এবং বর্তমানে প্রত্যহ একসঙ্গে বসিয়া তর্ক করেন । কাহারও সঙ্গে কাহারও মতের বিন্দুমাত্র মিল নাই, তথাপি কেহ কাহাকেও ছাড়িয়া এক দণ্ড থাকিতে পাবেন না। ঐ পুরাতন কাঠের চৌকিটিতে উপবেশন করিয়া একট-না-একটা কিছু লইয়। উভয়ে দিনের পর দিন কলহ করিয়া চলিয়াছেন । লোকে ইহাদের নাম দিয়াছে ‘মাণিকজোড়’ । বিমলের সহিত প্রতিবেশী হিসাবে ইহাদের মৌখিক আলাপ মাত্র হইয়াছে, তাহার বেশী কিছু নয় । আজ সহসা প্রতাপবাবু বিমলকে ডাকিয়া বলিলেন— ডাক্তারবাবু রমেশের বগলের এই ফোড়াটা দেখুন তো পেকেছে কি না ? রমেশবাবু তীব্র প্রতিবাদ করিলেন –কি মুশকিল, আমার ফোড়া আমি বুঝতে পারছি না, বলছি পাকে নি । —আহা, ডাক্তারবাবুকে দেথতেই দাও না । —দেখুন, বেশী টিপবেন না যেন। বিমল দেখিয়া বলিল—প্রায় পেকেছে । প্রবাসী t Soo প্রতাপবাবু বলিলেন—৪ই দেখ। রমেশবাবু বলিলেন—প্রায় পেকেছে, আর পেকেছে, এক কথা নয়, দেখব আবার কি ? —আমি বলছি তুমি তোকমারি দাও । —তোকমারি দেওয়ার অবস্থা এখনও হয় নি, পুই পাতায় গরম ঘি লাগিয়ে আরও দু-এক দিন বেঁধে রাখতে হবে । বিমল বলিল—কেটে দিলেই চুকে যায়। রমেশবাবু বলিলেন—আপনি সরে যান তো মশায় । বিমল একটু হাসিয়া পরেশ-দার বাড়ীর দিকে অগ্রসর হইল । বেশ আছে এই বৃদ্ধ দুইটি । ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার স্বদ হইতে সংসার চলে এবং সময় কাটাইবার জন্য তর্ক আছে, নাইবা থাকিল সে তর্কের মাথামুণ্ড, সময় ত কাটে ! পোস্টাপিসে যাইবা মাত্র পরেশ-দা বলিলেন — এই নাণ্ড মণিমালার চিঠি ! পরেশ-দা পুনরায় বলিলেন—খুব যদি উত্তেজিত না হয়ে ওঠ তাহলে ঐ কোণের টুলটায় বসে পড়তে পার, হরেন ততক্ষণ চা করুক । বিমল হাসিয়া বলিল—উত্তেজিত হ2লই বা কি ? কাছেই কালির — টুলটা মজবুত নয়, তাছাড়া বোতলট রয়েছে। বিমল হাসিয়া টুলটিতে উপবেশন করিয়া পত্ৰখানি খুলিল । ...তোমার চিঠি পেয়ে সুখী হলাম । তুমি কিন্তু আমার চিঠির একটি কথারও উত্তর দাও নি, ভাল পাণ্ডও কেন নি। একটুও ভালবাস না তুমি আমায় । ওখানকার বাড়ীটা কেমন, কিছু লেখ নি, বাথরুম আছে ত । গঙ্গার ঘাট থেকে কত দূর, পাড়াপড়শার কেমন লোক, সব লিখে। এবার । তোমাদের সিভিল সার্জনের মেয়ে তরঙ্গিণী আমাদের সঙ্গে পড়ত, একসঙ্গেই পরীক্ষা দিলাম এবার । সে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী গেছে, এখন ঐখানেই থাকবে । আমি গেলে এবার তার সঙ্গে দেখা করব, কেমন ? আমি কিন্তু এ মাসট। এখানে থাকতে চাই। এ কমাস তো পরীক্ষা পরীক্ষা করেই কেটেছে