পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অন্তদেবতা স্ত্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দুঃখের প্লাবন বইল আজ সমস্ত পৃথিবী জুড়ে । ইতিহাসের কত স্থায়ী চিহ্ন দিল ভাসিয়ে, সভ্যতার কত পুরাতন সীমানা দিচ্ছে লোপ করে, প্রচ্ছন্ন বর্বরতার আবরণ বিদীর্ণ হয়ে দেখা দিচ্ছে তার নগ্ন বীভৎস মূতি। ম্পর্ধিত হয়ে প্রকাশ পেল তার বিনাশমত্ততার নির্লজ্জ ব্যঙ্গ সমস্ত মতুয্যত্বের বিরুদ্ধে । মামুযের পীড়িত চিত্ত হতে প্রশ্ন উঠছে এমন হয় কেন । ক্রুদ্ধ স্বরে বলছে, বিশ্ববিধানে এই দারুণ অগ্ন্যুৎপাতের মধ্যে কল্যাণস্বরূপকে স্বীকার করি কেমন করে। সংশয়ীদের আমি এই কথা বলি যে, বিশ্বস্তুষ্টির কেন্দ্রস্থলে কল্যাণের তত্ত্ব না থাকবে যদি তবে দুঃসহ বেদনার আতরবে যুগাবসানের প্রলয়ভেরী বাজে কেন । প্রাণের মধ্যে স্বাস্থোর স্বারাজ্য সত্য ব’লেই কি অস্বাস্থ্যের আক্রমণে দুঃখ দেয় না। দুঃখই তো অস্বীকৃতি, স্বাস্থ্যই সত্য ব’লে দেহ উাকে একান্ত স্বীকার করে নেয়, তার জন্যে লড়াই করে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত । অস্বাস্থ্য যদি দুঃখ না দিত তাহলেই নিন্দ করতুম প্রাণশক্তিকে প্রবঞ্চক ব’লে । চারদিকে আজ লড়াই জেগে উঠেছে। কে জাগালে সেই লড়াইকে । বিশ্বের অপমানিত কল্যাণশক্তি। এই অপমান বহুকাল ধরে সঞ্চিত হয়ে উঠছিল দূর-প্রসারিত প্রতাপের আশ্রয়ে, স্তরে স্তরে পুঞ্জীকৃত্ত ঐশ্বর্যের অন্তরালে। রিপুর থেকে রিপুকে জাগাল, লোভের থেকে ঈর্ষাকে । লুঠের মালে ভাণ্ডার যার ভরে উঠেছে সে ততো ভদ্রাণি পশুতি, সে বলতে লাগল এতেই তো কল্যাণ, তত: সপত্নান জয়তি, বিপক্ষদের সে দলিত ক’রে রাখলে, বললে, ঈশ্বর আছেন আমাদেরই দলে, আমাদেরই লুঠের মাল আগলিয়ে ; তারপরে সমূলস্ক বিনগুতি, বিনাশের ধাক্কা লাগতে থাকল মূলের দিকে । তারপর থেকে আর আরাম নেই, সমস্ত জাতির কলেবর জুড়ে কেবলি সৈন্য জমতে থাকে, অস্ত্র বাড়তে থাকে, মারণের উপকরণ স্ফীত হয়ে ওঠে রক্তবর্ণ বিস্ফোটকের মতে, পরস্পর সন্দেহ এবং দুশ্চিন্তার অন্ত থাকে না , এই সন্দেহ-কলুষিত মন থেকে কণ্টকিত হয়ে উঠতে থাকে পীড়নের কুংসিত কৌশল, পেষণের কপট চক্রান্ত ভগু ভদ্রতার আত্মগোপন ; রাষ্ট্রনীতির মধ্যে প্রবেশ করে অসত্য এবং শাসনলীতির মধ্যে অত্যাচার । যুদ্ধ যদি বা থামে অশান্তি থামে না, আগামী ভূমিকম্পের ঘর্ঘর শব্দ ইতিহাসের নিম্নস্তরে দিনরাত্রি ব্যাপু ক’তে থাকে । মাতুষের পরস্পরের মধ্যে যাতায়াতের সহজ পথ আজ উত্তরোত্তর দুৰ্গম ক’রে তোলা হচ্ছে, এবং মানব-সমাজে এই কাটার বেড়া দেওয়া অনাতিথ্যের অনাত্মীয়তঃ যে ক্রমশ প্রবধ মান অসভ্যতার প্রমাণরূপে কুশ্রী হয়ে উঠল, অসংকোচে সে কথা মাতুয তুলে যাচ্ছে । বেদনাহীন এই ভোলাহ সব চেয়ে বড়ো দুর্লভ। এই সব মৃত্যু-ভারবাহক দুলক্ষণ আর যে গোপন থাকছে না তার কারণই এই যে, ইতিহাসের প্রহরীশালায় কল্যাণধর্মের দগুনীতি উদ্যত । যেমন শরীরে তেমনি সমাজে আত্মরক্ষার একটি সাধনা আছে । সেই আত্মরক্ষণ মহুযুত্ব রক্ষা, তার সতর্ক উপায় মামুষের নিজেরই শ্ৰেয়: শক্তিতে। তার কোনো ক্রটি ঘটলেই মানুষ দুঃখ পেয়েছে এবং সেই দুঃখের প্রাস্তে দেখা দিয়েছে মৃত্যু। এই দুঃখ যদি না দেখতুম তাহলে সন্দেহ করতুম বিশ্ববিধানের প্রতি । পৃথিবীতে অনেক জাতি মরেছে, হয় দুর্বলতার অপরাধে, নয় বলদৃপ্ত প্রবলভার পাপে। মৃত্যুসভায় আজও যে কোনো জাতের হিসাব তলব হয় নি তা এখনি বলা যায় না। বর্তমানের সমস্ত সাক্ষ্যের প্রতিকূলেও এমন দারুণ কথা দৃঢ়বিশ্বাসে বলতে পারি কেননা ইতিহাসের রাজকক্ষে ধম"জাগ্রত আছেন, বজ্ৰমুস্ততং । এবং