পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- ৩২ প্রেবাসী Yê8& বলিতেন, দূর! সেখানে যত ভাল ভাল লোক পাল৷ লিখছেন—আমার লেখা ঠাই পাবে কেন । আমি যা লিখব, তা শোনাব শুধু তোমাকে। 'না, পালা-গান লিখতেই হবে তোমাকে ।’ উমার জিদ দেখিয়া মনোহর দাস হাসিতেন এবং এক সময়ে প্রতিজ্ঞ করিয়া বসিতেন, পালা-গান তিনি লিখিবেন। কিন্তু উম যাহাতে মুগ্ধ হইয়া যায়, জনসাধারণ তাহার ঠিকমত মূল্য দিল না। নূতন কবির অপটু বাণী সুরসঙ্গীতের সঙ্গে খাপ খাইল না । মনোহর দাস স্নান হাসিয়া বলিলেন, ‘দেথলি টা: ’ উমা ক্রুদ্ধ মুখের দৃষ্টি বাহিরের পানে হানিয়ু বলিল, "ওরা বোঝে তো ছাই ? দুঃখের বর্ষাধারায়ও অনেক জীবন এক রূপ কাটিয় যায়, মনোহর দাসেরও হয়তো কাটিত । উমার কোমল মনে দুঃখের রেখাগুলি ক্রমশ গভীর ভাবে দাগ কাটিতে লাগিল। নিজের ছেড়া ময়লা কাপড়, রুক্ষ চুল ও অলঙ্কারবিীন দেহের পানে চাহিয়া মাঝে মাঝে সে বলিত, হ্যাগ, তোমার মুখেই তো শুনি—মানুষের দুঃখ বা মুখ কিছুই চিরকাল সমান ভাবে থাকে না। আমাদের কি এমনি ভাবেই দিন কাটবে ? হাসিয়া মনোহর দাস বলিতেন, ‘কাটলই বা, উমা । ভগবানের যা দেওয়া তা তো মাথা পেতে নিতে হবে।’ মূঢ়ের মত উমা প্রশ্ন করিত, তা ভগবান এক জনকেই বা এত দুঃখকষ্ট দেন কেন ? ‘কৰ্ম্মফল |’ ‘কৰ্ম্মফল কি ? বুঝাইতে গেলেও উমার সহজ বুদ্ধিতে জন্মাস্তর-রহস্ত প্রহেলিকা বলিয়াই বোধ হইত। একটু থামিয়া হয়তে বলিত, “আচ্ছা এ কথা কি সত্যি যে যারা ভগবানকে ডাকে তাদেরই তিনি বেশী বেশী করে দুঃখ দেন f' স্থ্য, সত্যিই তো।” ‘কেন দেন ? ‘মুখে থাকলে মাহুষ ষে সব ভুলে স্বাক্ষ-স্তকে পৰ্য্যন্ত । তাই তিনি তার ভক্তকে দুঃখ দিয়ে তার উপর ভালবাসা ভুলতে দেন না।’ ‘ইস, তা বই কি ! ধর, আমাদের চালাখানা যদি কোঠা হয়, আমরা যদি রাজভোগ খেতে পাই, তাহলেও তাকে মনে রাখব।” ‘মনে রাখবে না বলেই তো তিনি আমাদের এত দুঃখ দিচ্ছেন।’ কোনদিন বা আকাশের পানে চাহিয়া নিৰ্ব্বোধ উম প্রশ্ন করিত, ‘আচ্ছ, ঐ আকাশের উপরে তো দেবতারা রয়েছেন—তারা কেন আমাদের দুঃখ দূর করছেন না ? “কি জানি, হয়তো তাদের খেয়াল |’ এ-কথায় উমা খুশি হইত না। মুখ ঘুরাইয়া প্রসঙ্গাস্তরে আসিত, ‘আজ মিত্তিরদের ন-বউয়ের গলায় সোনার চিক দেখে এলাম ; চমৎকার গড়েছে।’ মনোহর দাস বা - , তোমার অমন চিক নেই বলে ? উমা বলিত, 'দুর—তা কেন হবে। মিত্তির-বউ আমার গলায় এক বার পরিয়ে দিয়েছিল ; সবাই বললে চমৎকার মানিয়েছে ? 'শুধু আমিই দেখিতে পেলাম না। কপট দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া মনোহর দাস চুপ করিতেন। উমা বলিত, “ত যাই বল, চিরদিন সমান যায় না। আমাদেরও এক দিন সুখের দিন আসবে, সেদিন গড়িয়ে দিও চিক ’ কে জানে কবে আসিবে সেদিন ? সন্তপণে, উমার শ্রবণকে লুকাইয়া মনোহর দাস একটি অকৃত্রিম দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিতেন । ক্রমশ উমর ধারণা হইল, তাহাদের দুঃখের রাত্ৰি বুঝি শীঘ্রই প্রভাত হইবে । কোন এক সকালে মুখের স্বৰ্য্যকিরণ তাহাদের কুটার-অঙ্গনে ফুটিয়া উঠিবে। পাড়াপ্রতিবেশী সকলের কথায় সেই ধারণা তাহার দৃঢ়তর হইতে লাগিল । মিত্রদের, ভট্টাচাৰ্য্যদের, দাসেদের অবস্থার তুলনামূলক সমালোচনা সে করিতে বসিল । বাউটি, চিক, রতনচুড়ের স্বপ্ন তাহাকে পাইয়া বসিল । সকলেরই ‘মন কষ্ট হ’ল না—