পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ । উলটাে দিকে মাথা ক’রে—তার নিজের বিছানা ছেড়ে এসে নন্দর গলার উপরে পা তুলে দিয়েছে—তাকে এক পাশে তার বিছানার দিকে সরিয়ে দিলে। নন্দর ক্লান্ত মস্ত মুখের দিকে তাকাল বারুণী, ভাবলে—কেন ও অকারণে আজ তাকে এত গালাগালি দিলে কি জানি । গুরু অভিমানের গভীর একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বারুণী আলো নিবিয়ে শুয়ে পড়ল । গায়ে গা লেগে ঘুম ভেঙে গেল নদর—সোজা উঠে বসল সে। কিছু বুঝতে না পেরে ভয়ে ভয়ে বারুণীও উঠে বসল সঙ্গে সঙ্গে । ডাক্তারের কথা মনে পড়ল তার : এদের কাছ থেকে দূরে থাক, বিষবং পরিত্যাগ করা —সবই বললে নন্দ, আরও দুটো কটু গালাগালি জুড়ে দিলে আর অন্ধকারে দূর দূর’ ক’রে ঠেলেও দিলে—শুধু ডাক্তারের কোন উল্লেখ করলে না । নির্বোধ রুদ্ধ কান্নার আবেগে কথাগুলি বারুণীর জড়িয়ে গেল । বললে—কেন, কি করেছি আমি, কি— ঠেলা খেয়ে বারুণী যেন লুটিয়ে আরও ঘনিয়ে এল কোন অজ্ঞাত অপরাধের ভয়ে ; নন্দ তাকে কোন দিনই যে এমন ক’রে দূরে ঠেলে দেয় নি। বারুণী ফোপাতে লাগল । ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরে আসা অবধি নন্দ নিজেকে পৃথিবীর এক প্রাস্তে অসহায় ক’রে রেখেছিল, কিন্তু হঠাৎ বারুণীকে যেন আরও বেশী অসহায় মনে হ’ল তার ফোপানো কাল্পায় । তখন ডাক্তারের কথা বললে নন্দ, বললে অনেক বিধি-নিষেধ আর ঐনাথ বুড়োর বাপের কথা, বিশ্রী ছোয়াচে রোগের কথা । —ভারি খারাপ রোগ বেী—এতে নাকি কেউ বঁাচে না। ভুলোকে দূরে দূরে রাখিস—আর তুইও রক্তটক্তগুলো আর ঘাটিস নে। আমি তো মরবই। তুই থাকলি— ভুলোকে মানুষ করবি । দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চোখ বুজলে নন্দ আর অদূর ভবিষ্যতের ভূলে, বারুণী, এই ঘর, মস্ত পৃথিবী—তার বহু অপরিচিত অংশ ষেন সে অন্য কোন গ্রহ থেকে প্রত্যক্ষ দেখতে লাগল। পৃথিবী যেমন চলছিল ঠিক তেমনি চলছে, কেবল নন্দ নেই—তবে তার জন্মে কোথাও সত্তান 8ማኮ© কোন অভাবও নেই। তার পর এক সময়ে ঘুমিয়ে পড়ল নন্দ-বারুণীর গা লেগে ঘুম তার আতঙ্কে আর এক বারও ভাঙল না । একেবারে ভোরে শ্ৰীনাথ বুড়োর ডাকাডাকিতে জেগে উঠল সে। পাশের নূতন বিছানায় বারুণী আর ভুলো তখনো ঘুমোচ্ছে। শ্ৰীনাথ বললে—এক জন লোক অভাব হচ্ছে রে নন্দ– যেতে পারবি তুই ? কেনেলের মাটি কাটা হচ্ছে । প্রসাদ কাল পর্য্যন্ত এসেছিল-আজ আর পারবে ম; বললে। ক-দিন জরে ভূগেছেও ভারি। —মানে ! দিন তিনেক আগে যে তাকে দেখে এসেছিলাম—নড়বার শক্তি নেই, জরে একেবারে কাহিল ক’রে দিয়েছে আর কাল পর্য্যস্ত খেটে গেছে সে । মরে যাবে যে ! শ্ৰীনাথ হেসে বললে—শুয়ে থাকলে পেটের জালা কি যায় রে নন্দ—না খাটলে খাবে কি ? ওই খেটেই বঁাচতে হবে আর ওতেই মরতে হবে । যাক, বেলা হ’ল– যাবি তুই ? তোর শরীর কেমন ? —ভাল। বলে নন্দ শ্রনাথের দিকে তাকিয়ে হাসলে । তার পর আবার বললে, নীলামের দিন ঘনিয়ে আসছে, খাজনার টাকা কিছু কম আছে—সেটা খেটে-খুটে যোগাড় করতে হবে । শরীরের দোহাই দিলে তো নীলাম রদ হবে না শ্রীনাথখুড়ো। যাব বই কি । শ্রীনাথের সঙ্গে নন্দ বেরিয়ে পড়ল । সরকারী খাল শুকনো খটখটে—মাটি ফেটে চৌচির হয়ে আছে। যেতে যেতে নন্দ সেই দিকে তাকিয়ে বললে-—খালটা যদি বেশ গভীর করে কেটে দিত—এমন দিনে কেমন হ’ত বল দিকিন ! দিব্যি জল থাকত, আকাশের দিকে হণ করে চেয়ে থাকতে হ’ত না । আর শুধু খাল কেটেই বা কি হবে—কেনেল তো চড়া ; আবার নদীও তো হু হু – নদীর শোচনীয় অবস্থাটা হাসির ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলে নন্দ । বললে—কেনেল ক-ফুট কাটা হচ্ছে—ছ-ফুট না ? —ছ । শ্রীনাথ হেসে বললে, উপরে কাগজে কলমে হুকুম আছে হয়ত আট দশ ফুট । এতে জলের অভাব হবে না কেন । সব চোর। এখানে মজুরি পাই জাম্বর