পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8bre প্রবাসী yo কিন্তু বারণীকে তো বুঝবে না নন্দ । আবশ্যক অপ্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি কত জিনিসে ঘর ভরে ছিল-সেই সব জায়গা যেন খ খ করছে, তাকানো যায় না। আজ প্রত্যেকটি জিনিসের সঙ্গে যেন বারুণীর অস্তরের যোগস্থত্র স্থাপিত হয়েছে—কোনটাই সে ছেড়ে যেতে চায় না, পারে না । গোধূলির ধূসর আলো ক্রমশ কালো হয়ে আসছিল। নন্দ তাড়া দিয়ে বললে—বেরো এই বার । —যাচ্ছি। সন্ধ্যেটা দিয়ে নিই। —সন্ধে দিবি কিসের জন্তে । —তুমি যাও তো। বিরক্ত ক'রো না। সন্ধ্যে দেওয়া শেষ হ’ল বারুণীর । নন্দ টোলবছল তোরঙ্গটা মাথায় তোলবার যোগাড় করছিল। বারুণী বললে, বাপ-ঠাকুদ্ধার ভিটে-এত দিন ছিলে, একটা গড় করবে না । —গড় করব, আচ্ছা করছি। হেসে বললে, এইখানে জন্মেছিলাম কিন্তু মরতে পেলাম না। সকলের দিকে তাকিয়ে প্রচুর ভাবে হাসতে লাগল নন্দ, তারপর নিতাইয়ের ছেলের দিকে তাকিয়ে বললে— তুলসীতলা থেকে পিদিমটা নিয়ে পালাস নি কেষ্ট, তোর বারুণী-খুড়ী ওই খেনে সন্ধ্যে দিত। তাকে মনে করিস-বুঝলি ? আমাদের ভুলিস নি। প্রতিবেশী মেয়েদের চোখে জল এল। এক জন বর্ষীয়সী বললে—মাঝে মাঝে আসিস, দেখা ক’রে যাস নন্দ । আর তুইও বউ—বারুণীর দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে উঠল, বললে, লক্ষ্মী মা আমার। চিবুক ধরে ভাঙা গলায় বললে, আমাদের ভুলে যাস নি মা । বারুণী চোখে অাচল ঢেকে কম্প্র কণ্ঠে বললে, না না, ভুলব না । নন্দ বললে—ও এখন ওর ভাইদের কাছেই থাকবে— ও তো যাচ্ছে না। আষাঢ় মাসের মেলাতেই দেখা হবে হয়ত সব । বারুণীর ভাই তাড়া দিলে, চল চল—রাত্রি হয়ে যাবে যেতে | ওরা চলে গেল । নন্দর মাথায় টোলখাওয়া রংওঠা সেই তোরঙ্গট, বারুণীর ভাইয়ের হাতে পোটলা—সকলের পেছনে ভুলো, হাতে তার ভাঙা হারিকেনটা টিম টিম ক’রে জলছে । গায়ের কেউ কেউ সঙ্গে গেল কিছু দূর। মেয়ের সজল চোখে পথের উপরে দাড়িয়ে রইল। ভুলো বললে—থিদে পাচ্ছে মা— —হু চল । বারুণী মুখে বললে, কিন্তু এক পাও নড়ল না । নারিকেল গাছটায় ঠেস দিয়ে যেমন ছিল তেমনি দাড়িয়ে রইল। স্বমুখ দিয়ে উচু বাধা রাস্তা একে বেঁকে মাঠের পাশ দিয়ে কত দূরে চলে গিয়েছে। ঐ যে তাল গাছটা—যাওয়ার দিন ঐখান থেকে নন্দ ঘুরে তাকিয়েছিল যেতে যেতে । স্পষ্ট মনে পড়ল তার । —কই চল মা । -श्चाश् । অন্যমনস্ক বারুণী দাড়িয়ে রইল। বেলা ফুরিয়ে গেল, নেমে এল সন্ধ্যার কালো ছায়া—দূরে গাছের সারি কালো হয়ে উঠল, কালো হয়ে উঠল তার পায়ের নীচের জল । নন্দ আসবে কবে ? কত জন খাটতে গেল—ফিরেও এসেছে কেউ কেউ, কিন্তু তার খবর সে কিছুই পেলে না আজও । কোথায় আছে সে ? কবে আসবে সে ? তাকে মনে পড়ে না একটুও ? বারুণীর চোথ দুটি জলে ভরে গেল । শুধু ভুলোই ছিল দেখবার—জিজ্ঞাসা করবার-বারুণী কাদে কেন। কিন্তু সে রাগে মুখ ভার করে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। বারুণী চোখ মুছে ডাকল, চল ভুলো— ভুলো অন্য দিকে ঝট করে মুখ ঘুরিয়ে বললে, আমি কথা কইব না তো—খিদে পায় না বুঝি আমার ? খিদে ! ক্ষ্যাপা ছেলে। মনে মনে বললে বারুণী । একবেলা থেয়েই শেষ পৰ্য্যস্ত হয়ত বছরের ভাত কুলিয়ে উঠবে না। বারুণীর ভাইরা শুকনো মুখ ক’রে হলদে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকে ।