পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ ভুলোর দিকে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে তাকালে বারুণী । হাসির মত ক’রে ঠোট দুটো ওর তরঙ্গিত হ’ল, বললে— রাগ হ’ল বুঝি বাবুর ? আর রাগ করে না। ভূলোকে জোর ক’রে কোলে তুলে নিলে বারুণী, বললে—সন্ধ্যে হ’ল, চল । কৃত্রিম হাসিতে মুখ ভরিয়ে ভুলোর মুখের ওপরে তাকাল বারুণী ; গম্ভীর ভূলো—ঠিক নন্দর মত—তেমনি চোখ, ঠোট দুটির তেমনি বাক রেখা, কোকড়ানো মাথার চুল— —ছেলের রাগ রাগ— ভূলোকে শীর্ণ বাহুর সমস্ত শক্তি দিয়ে বুকে চেপে ধরে চোখ বুজে মুখের উপরে মুখ চেপে ধরল সজোরে বারুণী— বোজা চোখের কোণ বেয়ে টপ টপ ক’রে জলের ফোটগুলি ঝরে পড়ল । বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর ' 8try ভুলো জিজ্ঞেস করলে—বাবা কবে আসবে মা ? —আসবে এইবার। খাটতে গিয়েছে—কত টাকা নিয়ে আসবে, তোর নামে জমি কিনবে কত—আজ রাত্রে কিন্তু চাটি মুড়ি খেয়ে থাকতে হবে তুলো—কেমন তো ? না, সেদিকে ভুলোর মন নেই। বললে—আমার নামে জমি কিনবে মা—কত— —অনেক । আজ কিন্তু— ভূলো সে সব শুনতে চায় না। দুরন্ত মাঠের দিকে তাকিয়ে বললে—এই সব— —ইT সব । যাওয়ার আগে বারুণী ফিরে তাকাল এক বার-পথ যেখানে বেঁকে অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে। বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর শ্ৰীক্ষিতিমোহন সেন মঙ্গপুরুষেরা তীর্থঙ্কর ; অর্থাৎ যেখানে তাহাদের জন্ম মৃত্যু বা তপস্যার স্থান, সেখানে তাহার একটি বিশেষ পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য দিয়া তীৰ্থত্ব দান করেন । দুঃখদারিদ্র্য হীনতা-অজ্ঞানতায় যখন এই দেশ সমাচ্ছন্ন তখন খ্ৰীষ্টাব্দে ১২ই আশ্বিন তারিথে মহাপুরুষ বিদ্যাসাগর জন্মগ্রহণ করিয়া মেদিনীপুরের অন্তর্গত বীরসিংহ গ্রামকে এবং এই মেদিনীপুরকে তীর্থ করিয়া গেলেন । অযোগ্য ভূমিকে বিদ্যাসাগর এই মাহাত্ম্য দান করেন নাই। আর্য্য ও দ্রবিড় সভ্যতার মিলনের ক্ষেত্র এই মেদিনীপুর । তাই ইহা দুইটি সংস্কৃতির সঙ্গমতীর্থ, প্রয়াগধাম। সাধকের পক্ষে ইহা একটি মুক্তিক্ষেত্র। এই মুক্তির তপস্তায় মেদিনীপুর বহু দুঃখ সহিয়াছে। আজিও তাহার সেই তপস্যার শেষ হয় নাই । >bac ধৰ্ম্ম সংস্কৃতি বাণিজ্য প্রভৃতি নানা সুত্রে ব্রহ্ম, চীন, জাপান, কোরিয়া, শু্যাম, যবদ্বীপ, বালি, স্বমাত্রাদি প্রাচ্য দেশের সঙ্গে ভারতের মহ যোগক্ষেত্র ছিল এথানকার. তাম্রলিপ্তি । ভারতের মধ্যেও উত্তরে এবং দক্ষিণে, আৰ্য্য ও আর্য্যপূর্ব সংস্কৃতির যোগস্থত্র দীর্ঘকাল জোগাইয়াছে মেদিনীপুর। ধৰ্ম্মের দিক দিয়া এখানে এখনও জৈন ও বৌদ্ধ ধৰ্ম্মের বহু অবশেষ দেখিতে পাওয়া যায় । নিরঞ্জন-পন্থ, যোগমত, ধৰ্ম্মপূজা, তান্ত্রিক ও বৈষ্ণব সাধনার ক্ষেত্র এই মেদিনীপুর । জগন্নাথ প্রভৃতি দক্ষিণ-দেশের তীর্থযাত্রার দ্বারপথ বলিয়া এই ধাম রামানন্দ, কবীর, নানক, চৈতন্য, মলুকদাস প্রভৃতি সাধকের চরণম্পর্শে পবিত্র। সম্ভদের গ্রন্থে তাহার বিস্তর পরিচয় মেলে। শু্যামানন্দ ও রসিক- , মুরারির কথা পরে হইবে। মুকুন্দরামের গুরু বলরাম,