পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাষ বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর gt^e বার্তাহার শিষ্যগণের প্রবর্তিত অপর কোনো শাখার গুরুদের কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। রসিকমুরারিও জাতিতে করণই ছিলেন । এইখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে আর একটু দক্ষিণের মহাপণ্ডিত বিখ্যাত গোবিন্দভাষ্যরচয়িত বলদেব বিদ্যাভূষণ জাতিতে খণ্ডাইত। গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়কে তিনি চারি-সম্প্রদায় মধ্যে ভুক্ত করিবার জন্য সারাজীবনব্যাপী শ্রম করিয়া গিয়াছেন । র্তাহার রচিত বহু গ্রন্থ ও ভাষ্য সারা ভারতময় সমাদৃত। রসিকমুরারির নিবাস ছিল রোহিণী গ্রামে । এই গ্রামটি মেদিনীপুর জেলার মধ্যে থানা গোপীবল্লভপুরের অন্তর্গত। স্ববর্ণরেখা ও দোলং নদীর সঙ্গমস্থলে এই রোহিণী গ্রাম। রসিকের বংশধরগণ পরে সদর মহকুমার অন্তর্গত কেশিয়াড়ী গ্রামে আসিয়া বাস করেন। কেশিয়াড়ী গ্রামের মধ্যেই থানা । এখন এই বংশের শেষ বিধবাটিও এই গ্রামে বাস করেন। ইহঁাদেরও বিস্তর ব্রাহ্মণ ও কায়স্থ শিষ্য আছে। নাভাজী-কুত ভক্তমালে ৯৫ সংখ্যক ছপ পয় কবিতায় খামানন্দ ও রসিকমুরারির সুন্দর বিবরণ আছে । ভক্তমাল মুক্তকণ্ঠে তাহদের সন্ত-সেবা ও উদারতার জয়গান করিয়াছেন । “প্রেম পীযুষ পয়েধি’তে নিমগ্ন এই মহাভক্ত খামানন্দ ও রসিকমুরারি সংসারকে উদ্ধার করিয়া গিয়াছেন । নাভাজী রসিকের প্রায় সমসাময়িক, হয়তো বা সামান্ত বড়। ১৫৮৫-১৬২৩ খ্ৰীষ্টাব্দের কাছাকাছি নাভাজী জীবিত ছিলেন । রসিকের জন্ম ১৫৯০ খ্ৰীষ্টাব্দে । কাজেই নাভাজীর লেখার বিশেষ মূল্য আছে। ভক্তমালের টীকা ভক্তিরসবোধিনীর ( ১৭১২ খ্ৰীষ্টাব্দে রচিত) রচয়িতা প্রিয়াদাস রসিকমুরারির ভক্তি উদারতা ও দাক্ষিণ্যের যে পরিচয় দিয়াছেন, তাহার সম্পূর্ণ বিবরণ আমার একটি অভিভাষণে পূৰ্ব্বেই লিখিয়াছি। (মেদিনীপুর সাহিত্য-পরিষদের বাৰ্ষিক উংসবে সভাপতির অভিভাষণ, ৬ই চৈত্র, ১৩৪৩ ) । কাজেই এখানে আর তাহার পুনরায় উল্লেখ করিতে চাহি না। প্লিয়াদাস সেখানে মেদিনীপুরের রসিকমুরারির অতুলনীয় ভদ্রতার আতিথেয়তার সাধু ও ভক্তদের সেবারও পরিচয় দিয়াছেন । ۹یسہ *و� শু্যামানন্দকে তখনকার কোনো রাজা দুঃখ দিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু ভগবানের কৃপায় রাজাকে লজ্জিত হইতে হইল। , সেই উপলক্ষে রসিকানন্দের অপূৰ্ব্ব গুরুভক্তির পরিচয় পাই । মেদিনীপুরের দাক্ষিণ্য ও উদারতার কথা এই সব বৈষ্ণব-চরিতলেখকেরা ভারতের সর্বত্র প্রচার করিয়াছেন। সেই ভদ্রতা, উদারতা ও বদান্তত যে এখনও সমভাবেই চলিয়াছে তাহা প্রত্যক্ষ করা গেল এবার বিদ্যাসাগর-স্মৃতিমন্দির-প্রবেশ-উংসবে আসিয়া। এখানকার আতিথেয়তা অতুলনীয়। এত বড় জনতার মধ্যে এমন অপূৰ্ব্ব সংযম বড়-একটা দেখা যায় না। এখানকার ছাত্রগণের সংযম ও সৌজন্য দেখিয়া সকলেই মুগ্ধ হইয়াছেন। বুঝা গেল, নাভাজীর ভক্তমাল ও প্রিয়াদাসের ভক্তিরসবোধিনীতে কিছুই অতিশয়োক্তি হয় নাই । শুধু বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম নহে, তন্ত্রেরও বড় বড় সাধক ও পণ্ডিত এই মেদিনীপুর জেলায় জন্মিয়াছেন। উত্তর-মেদিনীপুরে বাংলা দেশের তন্ত্রমতের প্রভাব। দক্ষিণ-মেদিনীপুরে উৎকলীয় ও দক্ষিণদেশীয় তন্ত্রমতের সাধনা চলে । উত্তরমেদিনীপুরে ঘাটাল মহকুমায় জোগীখোপ গ্রামে বহু তান্ত্রিক সাধক ও পণ্ডিতের বাস । তাহারা আগমবাগীশরচিত তন্ত্রসারেরই অতুসরণ করেন। এখানে তন্ত্রের বহু দুষ্প্রাপা গ্রন্থ ও স্থত্তিলাদির সন্ধান মিলে। দক্ষিণমেদিনীপুরে বাথি মহকুমায় এগরা থানার মধ্যে শিয়ালসাঈ প্রভৃতি গ্রামে যে তান্ত্রিক সাধনা তাহা দক্ষিণদেশীয়। বাংলা দেশে যেমন রঘুনন্দনের স্মৃতি, উৎকলে তেমনি প্রবলপ্রতাপান্বিত ভবদেবের স্মৃতি। আচার্ষ্য ভবদেবের বাড়ী ছিল রাঢ়দেশের সিদ্ধল গ্রামে। রাঢ়ীশ্রেণীতে সাবর্ণ গোত্রে তাহার জন্ম। উড়িষ্যায় ভুবনেশ্বরের অনন্তবাসুদেবের মন্দির ও ভুষনেশ্বরের মহাসরোবর তাহারই কীৰ্ত্তি। অনন্তবাহদেব-মন্দিরের গাত্রে শিলালিপিতে ভট ভবদেবের চমৎকার পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। ব্ৰহ্মাদ্বৈতদর্শনে, সিদ্ধান্তে, তন্ত্রগণিতে ভবদেব অদ্বিতীয় পণ্ডিত ছিলেন । ফলসংহিতায় ও হোরাশাস্ত্রে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় বরাহুতুল্য। অর্থশাস্ত্রে, আয়ুৰ্ব্বেদে, অস্ত্রবেদে তিনি নিষ্ণত। স্মৃতি ও মীমাংসা শাস্ত্রে তাহার রচনার