পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8br8 প্রেবাসী ృరి8ు খ্যাতি দিগন্ত প্রসারিত। বাল-বলভী-ভুজঙ্গ এই ভট্ট ভবদেব এখনও উৎকলের ব্যবস্থাদির নিয়ন্ত । মেদিনীপুর জেলাতে র্তাহার অনুবত্তী বহু স্মাৰ্ত্ত ও আচারনিয়ুস্ত জন্মগ্রহণ করিয়াছেন । মেদিনীপুরের মধ্য দিয়াই রাঢ়ে ও উৎকলে তখনকার দিনে এই সংস্কৃতির যোগ চলিত। প্রাচীন মন্দির, মূৰ্ত্তি প্রভৃতি প্রতুসম্পদে মেদিনীপুর অতিশয় সমৃদ্ধ। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে মেদিনীপুর উনিশ মণ পুথি দান করিতে পারিয়াছে। মৃত্যুঞ্জয়, বিদ্যাসাগর প্রভৃতি পণ্ডিত এই যুগেও যদি এখানে জন্মগ্রহণ করেন, তবে এখনই বা নিরাশ হইবার হেতু কি ? মেদিনীপুরের উপর দিয়া দুঃখও গিয়াছে বিস্তর । আর্য্য ও দ্রবিড় সভ্যতার সব সংঘর্ষ গিয়াছে ইহারই বুকের উপর দিয়া। বঙ্গ কলিঙ্গ সকল অভিযানেরই দুঃখ ইহাকে সহিতে হইয়াছে। সাগরতীরবত্তী বন্দর ও স্থানগুলিতে মগ ও যুরোপীয় দমু্যদের বহু অত্যাচার গিয়াছে। কিন্তু সকল দুঃখের উপরে দুঃখ হইল যখন ভারতে সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ হইয়া গেল। পরলোকগত আচাৰ্য্য সিলভ্য লেভি বলেন তাহার পরেই এই বিশাল সামুদ্র বাণিজ্য যাহাঁদের হস্তগত হইল তাহারাই ধনে-জনে সমৃদ্ধ হইয়া ভারতকে আক্রমণ করিল । দুৰ্ব্বল ও হৃতগৌরব ভারতবর্ষ সেই আক্রমণ আর ঠেকাইতে পারিল না । তাহার স্বাধীনতা গেল । তবু কোন দিনই যুক্তিহীন ও হৃদয়হীন জুলুমের কাছে এই মেদিনীপুরের মাথা নত হইতে চাহে নাই । বল্লালী বিধান যখন বাংলা দেশের ব্রাহ্মণাদি সকল বর্ণের সামাজিক ব্যবস্থাকে কৌলীন্য-বন্ধনে আষ্ট্রেপৃষ্ঠে বাধিতে উদ্যত, তখনও মেদিনীপুর তাহী স্বীকার করিতে চাহে নাই । বাংলা দেশেও র্যাহারা এই প্রথার বিরুদ্ধে দাড়াইলেন, তাহারা বাংলা দেশে আর কোথাও আশ্রয় ন৷ পাইয়া দলে দলে আসিলেন মেদিনীপুরে । তাহারাই মেদিনীপুরের দক্ষিণ-পূৰ্ব্ব ভাগে তমলুক ও সদর বিভাগে আশ্রয় লইলেন । সেই স্বাধীনচেতা ব্রাহ্মণের দলই এখানকার মধ্যশ্রেণীর ব্রাহ্মণ। বল্লালী বন্ধন স্বীকার করেন নাই বলিয়া কুলশাস্ত্র ইহঁাদের যথাসাধ্য নিগ্ৰহ .-ബ= করিতে চাহিয়াছে, কিন্তু ইহঁারা তাহা গ্রাহাই করেন নাই । মেলবন্ধন-কৰ্ত্তা দেবীবর স্বয়ং আসিয়া এই মধ্যশ্রেণীকে প্রসন্ন করিবার জন্য বহু চেষ্টা করিয়াছেন । ভেমোরা প্রভৃতি গ্রাম তাহকে ষথেষ্ট সংকার করিয়াছে কিন্তু স্বাধীনতা বিসর্জন করে নাই। অবশেষে দেবীবর এখান হইতে নিরাশ হইয়া ফিরিয়া যান। তাই কুলশাস্ত্রে মেদিনীপুরের মধ্যশ্রেণী বড়ই লাঞ্ছিত । এই মধ্যশ্রেণীর মধ্যে বড় বড় সব বিদ্বান জন্মিয়াছেন । বিশ্ৰুতকীৰ্ত্তি রামেশ্বর ও র্তাহার ভাই রামনারায়ণ তর্করত্ব এই ভেমোরা গ্রামেরই অধিবাসী । পূৰ্ব্বেই বলা হইয়াছে, ভারতের গৌরবের দিনে প্রাচ্য দেশগুলির সঙ্গে যোগ রক্ষার একটি প্রধান স্থান ছিল তাম্রলিপ্তি । ভারতের সেই গৌরবের যুগ যখন চলিয়া গেল, যখন সমুদ্রযাত্রা শাস্ত্রে ও লোকাচারে নিষিদ্ধ হইয়া গেল, তখন সেখানকার সমুদ্রগামী বীরপুরুষদের বড়ই দুৰ্গতি ঘটল । তাহাদের উত্তরপুরুষরাই কৈবৰ্ত্ত ও মাহিষ্য । কৈবৰ্ত্ত ও মাহিয্য দিয়া মেদিনীপুর পরিপূর্ণ, কিন্তু র্তাহার কি পরমগৌরবময় নিজ নিজ পূৰ্ব্ব ইতিহাসের পৌরুষের যোগ্য ক্ষেত্রেই পুরুষপ্রবর বিদ্যাসাগর যে সত্যই খবর রাখেন ? বিদ্যাসাগর জন্ম গ্রহণ করেন । কত বড় মহাপুরুষ ছিলেন, তাই আমরা আজ ধারণাই করিতে অসমৰ্থ । আমরা আজ এতই ক্ষুদ্র হইয়া গিয়াছি । আমাদের শাস্ত্রে আছে, যিনি একটি মাত্র বর্ণও শিক্ষা দেন তিনিও গুরু। পৃথিবীতে এমন বস্তু নাই যাহা দিয়া র্তাহার ঋণ শোধ করা যায়। বিদ্যাসাগর আমাদের সকলকে সকল বর্ণ শিক্ষা দিয়াছেন, আমাদের জ্ঞান উন্মেযিত করিয়াছেন, আমাদিগকে সাহিত্য ও উচ্চ আদশ দান করিয়াছেন এবং অন্তরের ভাব প্রকাশের উপযোগী ভাষা দিয়াছেন । র্তা:ার ঋণ কি শোধ করা যায় ? শাস্ত্রে আছে, “পিগুং দত্ত্ব। ধনং হরেং”, অর্থাৎ শ্রদ্ধ করিলে তবে সে বিত্তের অধিকারী হয়। আমরা বিদ্যাসাগরের সকল চিন্ময় বিত্ত সম্ভোগ করিতেছি, অথচ এত কাল পর্য্যস্ত র্তাহার প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধা প্রকাশ করি নাই । পিতামাতা হইলেন মহাগুরু, তাহাদের পরলোকগমনে যত দিন পূর্ণ শ্ৰাদ্ধ না করা হয়, তত দিন