পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাখ সুখসম্ভোগের অধিকার থাকে না । ঈশ্বরচন্দ্র আমাদের সবার চিন্ময় গুরু বলিয়া পিতৃবং পূজ্য। আমরা এত কাল র্তাহার প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধা প্রকাশ না করিয়া তাতারই প্রসাদে যত সুখ সম্ভোগ করিতেছি সেই সবই আমাদের নিরয়-হেতু হইয়াছে। তিনি শুধ বাঙ্গালীদেরষ্ট গুরু ছিলেন না, কাশীতে শুনিয়াছি তাহার বন্ধু কবি হরিশ্চন্দ্র, মহামহোপাধ্যায় সুধাকর দ্বিবেদী প্রভৃতি মহাত্মাগণকে মাতৃভাযাতে লিখিবার জন্য তিনি উৎসাহ দিয়াছেন। অন্ধ দেশে বীরেশলিঙ্গম পাস্থলুকে সেই দেশের বিদ্যাসাগর বলে । বিদ্যাসাগর এক হিসাবে সারা ভারতের জ্ঞানদাতা গুরু । বিদ্যাসাগর যখন কাশীতে যান তপন তিনি বিশ্বনাথঅন্নপূর্ণ দর্শনে যান নাই । তীর্থের দানগ্রাহী ব্রাহ্মণের দল তাহাতে তাহার উপর রুষ্ট হইয়া কহিলেন, “আপনি কি নাস্তিক ? আপনি বিশ্বনাথ-অন্নপূর্ণ দর্শন করিবেন না ?” তিনি তাঙ্গার পিতামাতাকে দেখাইয়া কহিলেন, “এই আমার বিশ্বনাথ, এই আমার অন্নপূর্ণ।” এই কথার উপরে আর আমাদের দেশে কথা চলে না । অনেকে তাহাকে নাস্তিক মনে করিয়াছেন । র্তাহাদের ভগবানের ধারণা অনুরূপ । তাঁহাদের ভগবান মন্দিরে ও প্রতিমায় সীমাবদ্ধ। বিশেষ স্থানে, বিশেয সময়ে, বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানেই তাহাদের ভগবদ্যুপাসন; সমাধা করা যায়। ঠাকুরঘরে ও সিন্ধ্যায় তাহারা তাহদের ভগবানকে কারারুদ্ধ করিয়াছেন। তাই তাঁহাদের সাধনা সহজসাধ্য । অতি কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্র ভগবানকে মন্দিরে বা বিগ্রহে বদ্ধ করিয়া রাখেন নাই যে এত সহজে কাজ সারিবেন। তাহার ভগবানকে তিনি দেখিয়াছেন সকল মানবের মধ্যে । তাই দুঃখীর দুঃখে, নারীর বেদনায়, সাওতাল প্রভৃতি দীনহীনদের দুৰ্গতিতে র্তাহার আর ক্লত্যের অবধি ছিল না । বিধবার দুঃখ মোচনের জন্য লক্ষাধিক টাকা তিনি ব্যয় করিয়াছেন। দুঃখীর ও দুর্গতের দুঃখ হরণের জন্য তিনি প্রায় সৰ্ব্বস্ব দিয়া গিয়াছেন। উপকার করিয়া তিনি কখনও প্রত্যুপকার আশা করেন নাই। উপকৃত বহু লোকই কুতন্ত্রতার দ্বারা তঁহার ঋণ শোধ করিয়াছেন, তবু বিদ্যাসাগরের মেদিনীপুর , 8Ն0 নিরস্তর মানবসেবাই তার ছিল ধৰ্ম্ম । বিরাট যে তাহার দেবতা, তাই দুঃসাধ্য র্তাহার তপস্যা। এমন মহাগুরু লাভ করিয়া ও আমরা এত কাল উহার প্রসাদষ্ট গ্রহণ করিয়াছি, কখনও তাহার প্রতি যথাযোগ্য শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিয়া সামান্ত কৰ্ত্তব্যটুকুও পালন করিবার কথা আমাদের মনে উদিত হয় নাই। তাই অকুতশ্র আমাদের এত কাল অশোঁচের দিনই গিয়াছে। মেদিনীপুরবাসীরা তাহার প্রতি উপযুক্ত শ্রদ্ধা প্রকাশ করিয়া তাতার জ্যেষ্ঠ পুত্রের কাজ করিলেন। এখন ংলা দেশ ভরিয়া বিদ্যাসাগরের প্রতি যোগ্য ভাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপিত হউক । সেই শ্রদ্ধ যেন মাত্র কথায় ও বাহ সমারোতে পর্যবসিত না হয়, লোক দেখাইবার জন্য না হয়, আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য না হয়। যে-সব দুঃসাধ্য ব্ৰত তিনি আরম্ভ করিয়া গিয়াছেন অথচ জীবনে সময়ের অল্পতাবশতঃ তাহ সমাপ্ত করিতে পারেন নাই, তাহাতেই যদি ব্ৰতী হইতে পারি, তবেই তাহার উপযুক্ত শ্ৰাদ্ধ হইবে । কিন্তু দুশ্চর এই তপস্ত। তবু তাহার প্রতি আমাদের যোগ্য শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করিতে হইলে ইহা ছাড়া অন্য গতি নাই । মেদিনীপুরের এই বিরাট উংসব আমাদিগকে এই হাব্ৰতে দীক্ষিত করুক । বিদ্যাসাগরের প্রতি সকলে কিন্তু এমন সমারোহ করিয়া , শ্রদ্ধা প্রকাশ করিতে পারেন না। তবু মেদিনীপুরেই দীনদুঃখীর মত কাজ করিবার আদর্শও দেখিয়া গেলাম । আসিয়া দেখিলাম, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তপস্যা খুব সমারোহে যাহারা সাধন করিতে অসমর্থ সেই সব অল্পবিত্ত অথচ মহাপ্রাণ মেদিনীপুরে লোকচক্ষুর অগোচরে কোথাও নিঃশব্দে কাজ করিতেছেন । মেদিনীপুরের উপর দিয়া এত যে দুঃখদুর্গতি গেল তবু এখনও এখানে উৎসাহের অভাব নাই । বিদ্যাসাগরের ভক্তেরা নিধন কিন্তু উৎসাহহীন নহেন । এত দিনে তাঙ্গদের হৃদয়ের বাসনা হয়তো চরিতার্থ হইবার দিকে চলিল । মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রামে কিচ করিবার কথা এখানে লোক বহু কাল ধরিয়া কোথাও