পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ماهير কার্য সহজে ও স্বচ্ছন্দ গতিতে করা যায়, দূষিত দ্রব্য নিষ্কাশনকারী যন্ত্রসমুহ দ্বারা শরীরমধ্যস্থ ময়লা নিয়মিত ভাবে বাহির হয় এবং হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস সাময়িক গুরু পরিশ্রমের পর যথাসম্ভব অল্প সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়া আসে, তাহাই সার্থক পরিশ্রম। কিন্তু ইহা হইল দৈহিক পরিশ্রম-দৈহিক শিক্ষা নহে । দৈহিক পরিশ্রম তখনই দৈহিক শিক্ষায় পরিণত হয় যখন উল্লিখিত শারীরিক ও যান্ত্রিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা সামাজিক, মানসিক ও নৈতিক সম্পদ লাভ করি । শেষের গুলি আয়ত্ত করিতে না পারিলে বর্তমান সভ্যজগতে দৈহিক শিক্ষার কোনও ব্যবহারিক মূল্য থাকিতে পারে .না। লেখাপড়া শিক্ষণ করার উদেখা যেমন কেরানী হওয়া নয়, দৈহিক শিক্ষার উদেশ্ব তেমনি কলির ভৗম তৈয়ারি করা নয়। জ্ঞানার্জন করিতে গেলে প্রথমে লিখিতে ও পীড়তে শিক্ষা করা দরকার, দৈহিক শিক্ষায় প্রকৃতরূপে শিক্ষিত হইতে হইলে কতকগুলি শারীরিক কৌশল আয়ত্ত করিতে হয়। কিন্তু এগুলি কৌশলমাত্র-আসল জিনিষ নহে। ইহারা প্রাসাদে উঠিবার সোপান বটে, কিন্তু তাই বলিয়া সোপানকে প্রাসাদ বলিয়া ভ্ৰম করিলে আমরা স্বখাত সলিলে ডুবিয়া মরিব । দ্বিতীয় কথা এই যে, বর্তমান যুগের শিক্ষাপ্রণালীতে যে দুইটি তথ্য সৰ্ব্ববাদিসম্মতিক্রমে গৃহীত হইয়াছে তাহা তুলিলে কোন রকমেই চলিবে না। আমাদের সব সময়েই মনে রাখিতে হইবে যে, শিশুশিক্ষার জন্য নহে পরস্তু শিক্ষা শিশুর জন্য, এবং দ্বিতীয়ত: প্রবাসী - \ రిgఆ শিখিবার বিষয় বহু হইলেও শিখিবে এক জনই। সুতরাং শিশুকে শিক্ষার উপযুক্ত করিবার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করার পরিবর্তে শিক্ষাকে শিশুর বাহন করিয়া তুলিবার প্রয়াস পাওয়াই অধিকতর বাঞ্ছনীয় ও ফলপ্রদ, এবং এই প্রচেষ্টাকে সৰ্ব্বতোভাবে সাফল্যমণ্ডিত করিতে হইলে শিক্ষণীয় বিষয়গুলি—কি মানসিক, কি দৈহিক-বিভিন্নমুখী না হইয়া পরস্পর-সংবদ্ধ হওয়া একান্তই আবশ্যক । এ-বিষয়ে শেষ কথা এই যে, শিক্ষণীয় বিষয়গুলির সহিত মনুষ্য-প্রকৃতির সম্বন্ধ যত ঘনিষ্ঠ হইবে, শিক্ষা দেওয়া ও শিক্ষা করা এই উভয় কাৰ্য্যই তত সহজ হইবে— শিথাইতে ও শিখিতে বেশী আনন্দ পাওয়া যাইবে এবং সেজন্য উপদিষ্ট বিষয়টি মনের মধ্যে গাথিয়া যাইবে । অতএব দেখা যাইতেছে যে, প্রকৃত স্বাস্থ্যবান বলিয়া পরিগণিত হইতে হইলে শুধু শারীরিক বল ও কৌশল আয়ত্ত করিলে এবং রোগমুক্ত থাকিলেই চলিবে না, ইহাদের সঙ্গে আরও কিছু লাভ করা দরকার, সেগুলিই অধিকতর মূল্যবান। সংক্ষেপে বলিতে গেলে, এই বলিতে হয় যে, যে-ব্যক্তি অত্যধিক কাজের ভিড়ের মধ্য দিয়াও প্রত্যেক কাজটি সহজ ও স্বচ্ছন্দ গতিতে এবং পূর্ণ আনন্দ উপভোগের সহিত করিতে পারিবে, তাঙ্গকেই প্রকৃত স্বাস্থ্যবান বলিতে পারা যাইবে । অর্থাৎ এক কথায় যাহার জীবনী-শক্তি ( vitality ) প্রাণবস্ত হইয়া কাজকে ‘খেলায় পরিবর্তিত করিয়াছে, সে-ই প্রকৃত দৈহিক শিক্ষার স্বরূপ বুঝিবার ও তদ্বারা শিক্ষিত হইবার সৌভাগ্য লাভ করিয়াছে।