পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ তাহাকে ঘরে লইলেন না। দাদার সংসারে থাকিয় সে দাদার উৎসাহে লেখাপড় শিখিতে আরম্ভ করিল। বড়দিদির এটা সহ হইল না। তাহার লাঞ্ছনায় গঞ্জনায় সে যখন অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়াছে, তখন এক স্নেহময়ী ঠাকুরম। তাহাকে তাহার শ্বশুরালয়ে পৌছাইয়। দিলেন। স্বামীহীন। শাশুড়ী ও জ। তাহাকে অভ্যর্থনা করিয়া ঘরে লহলেন । ইহার মধ্যে ব্ৰতচারিণী নামের কোন হেতু খুজিয়া পাইলাম না। প্লটটিও মামুলী এবং দুৰ্ব্বল, এ লইয়া একটি বড় গল্প লেখা চলিত; উপন্যাস লিথিতে গিয়া লেখিকা ভুল করিয়াছেন । শ্রীতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম প্রশ্ল—এঁরাইমোহন সাহ ! প্রাপ্তিস্থান গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সনস, কলিকাতা । পৃ. ৩৫৩ । মূল্য তিন টাকা । বিজ্ঞানের গবেষণার পর সাহিত্য-আলোচনার অবসর খুবই অল্প থাকে। তৰুও “প্রথম প্রশ্ন" নামটির নূতনত্ব দেখে একটু কৌতুহলী হয়েই বইখান পডুলাম । লেখক অখ্যাতনাম। কিন্তু তার কলমের মুখে যে বিদ্রোহের দাবাগ্নি জ্বলে উঠেছে তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় তিনি সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য প্রচলিত শাস্ত্র, সমাজ, জাতধৰ্ম্ম সমস্ত ভেঙে একট। নুতন সমাজ গড়ে তুলতে চীন । প্রকৃতপক্ষে দেশ চায় আজ একটা নুতন জীবন-আদর্শ বা দর্শন, কারণ পুরণে ধারায় চলতে চলতে দেশ এখন দারিদ্র্যের শেষ সীমায় এসে পোছেচে । এ অবস্থায় লেখক সমগ্ৰ দেশ ও জাতির কাছে ঠার বইখানার ভিতর দিয়ে যে প্রশ্ন করেছেন, তা বাস্তবিক খুব সময়োপযোগী হয়েছে । যদি দেশ তার এই প্রথম প্রশ্নের বাস্তব উত্তর দিতে প্রস্তুত হয়, তবে দেশের মুখসমৃদ্ধি যে বইগুণ বাড়বে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। কারণ সমাজ-পরিকল্পনা ব্যতীত শিল্পপরিকল্পনা কায্যে পরিণত করা যেতে পারে না । কারণ তজ্জন্ত নুতন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন লোকের প্রয়োজন। ভারতবর্ষের শিল্পপরিকল্পনা ভারতবর্ষ্যের প্রত্যেকটি মামুষের কল্যাণের জগুই আমি মনে করি । কিন্তু বৰ্ত্তমান সমাজ-ব্যবস্থার ফলে যে শত সহস্ৰ ভেদ-বিভেদ রয়েছে তার ফলে ঐ পরিকল্পনা ব্যক্তিবিশেষ, জাতিবিশেষ বা দলবিশেষের স্বাধসাধনেই নিয়োজিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশী। তাই সৰ্ব্বাগ্রে প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সমাজ-ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে সমস্ত ক্ষুদ্র আদেশ, ক্ষুদ্র স্বাধকে চূণবিচূর্ণ করে ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি মামুষের স্বর্থের সমম্বয় করা । ‘প্রথম প্রশ্নের' লেখক সমগ্র দেশ ও জাতির ভিতর সেই আমূল পরিবর্তন আনবারই প্রয়াস পেয়েছেন । এখন সে পরিবর্তন আনতে হলেই সকলের আগে প্রয়োজন ভারতবর্ষের প্রতোক মানুষকে শুধু মানুষ বলে স্বীকার করা। শুধু স্বীকার করী নয়, রক্তের সঙ্গে রক্ত মিশিয়ে দিয়ে সমস্ত ধৰ্ম্ম, জাত এবং যথাসম্ভব প্রদেশগত বৈষম্যকে চিরতরে মুছে ফেলা। তাহলে গড়ে উঠবে একটা মহাজাতি-যারা শুধু ভারতবাসী বলেই নিজেদের পরিচয় দেবে। লেখক তার বইয়ের প্রধান চরিত্র বিপ্লবী পমুর মুখ দিয়ে সেই কথাটাই বলেছেন, “বাংল। তথা ভারতের যৌবন যদি বিশ্বের জয়যাত্রার পথে অগ্রদূত হতে চায় তবে তার সর্বপ্রথম কৰ্ত্তব্য হবে জাতিগত, ধৰ্ম্মগত এবং প্রদেশগত যাবতীয় বৈষম্যকে মুছে ফেলতে ঘরে ঘরে অবাধ বিবাহ প্রচলন করা, যার ফলে ক্রমে সমাজদেহে রক্তের তারতম্য \ు?- లి পুস্তক-পরিচয় Peግ ঘুচে যেয়ে বয়ে চলবে একটানা একই রক্তের স্রোত-এক স্বাধ, এক লক্ষ্য আর একই সাধনা 1নয়ে।" লেখক এই কথাটির মূলস্বত্র ধরেই তার বইয়ের নায়কনায়িকাগুলির চরিত্র স্মৃষ্টি করেছেন। আমি ইদানীং অনেক জায়গায় বলেছি শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীদের দুঃখের বোঝা অধিকতর ভারী না করে বরং গ্রামকে শহরে পরিণত করে তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্যের মাত্র। যাতে আরও বৃদ্ধি করা যায় সে চেষ্টা করা দরকার । প্রথম প্রশ্নে' এই ধরণের একটা পরিকল্পনাও দেখতে পাই। পমুর অসাধারণ কৰ্ম্মশক্তি ও সংগঠন-শক্তির একটা বিশেষ ইঙ্গিত পাওয়া যায় তার “চামারহাটি" গ্রামকে “বিজয় নগর” শহরে পরিণত করার মধ্যে। যেখানে হয়ত এককালে জীর্ণ শীর্ণ খানকয়েক কুড়েঘর ভিন্ন আর কিছুই ছিল না সেখানে পমু গড়ে তুলেছে একটা শহর এবং সে শহরের অধিবাসী ও অধিকারী হয়েছে তারা যার এককালে নানা জাত ও নানা ধৰ্ম্মের হলেও সেখানে গিয়ে এক হয়ে গেছে—যেমন স্বার্থে তেমনই আদর্শে । আদর্শ পিছনে না থাকলে শুধু ব্যক্তিবিশেষের চেষ্টায় ও অর্থে ঐরাপ হওয়া সম্ভব নয়। মোট কথা, তরুণ লেখক অতি গভীর ও তাঁর দৃষ্টিতে সমাজ ও দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে খাটি পথের ইঙ্গিত দিয়েছেন একথা নিঃসংকোচে বল চলে। তাছার স্বষ্টি হয়ত এখন কল্পনামূলক, কিন্তু ভবিষ্যতের কথা কে বলিতে পারে ? শ্ৰীমেঘনাদ সাহ৷ শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা-স্বামী জগদীশ্বরানন্দ কর্তৃক অনুদিত এবং স্বামী জগদানন্দ কর্তৃক সম্পাদিত। উদ্বোধন কাৰ্য্যালয়, বাগবাজার, কলিকাতা, হইতে প্রকাশিত, পৃ. ২৬+৪-৪। মূল্য Lայ• Ճթil t এই গ্রন্থে গীতাপাঠবিধি, গীতার ধ্যান, গীতার বাষ্মী মুক্তি, বিষয়সূচী, এবং শ্লোকসূচী সন্নিবিষ্ট করা হইয়াছে। মূল শ্লোক বড় অক্ষরে, তন্নিয়ে ক্ষুদ্রাক্ষরে অস্বয়মুখে বাঙ্গাল। প্রতিশব্দ, এবং তন্নিম্নে মধ্যমাক্ষরে বঙ্গানুবাদ প্রদত্ত হইয়াছে। প্রায় প্রতিপত্রেই ক্ষুদ্রাক্ষরে পাদটীকাও সংযোজিভ করা হইয়াছে। অম্বয় ও অনুবাদ শাস্করভাষামুযায়ী। পাদটীকামধ্যে স্ত্রীধর ও মধুসূদনাদির ব্যাখ্যার সহিত তুলনাও মধ্যে মধ্যে দেখা যায়। অপ্রসিদ্ধ দুরূহু শব্দের অর্থ, অতিরিক্ত জ্ঞাতব্য বিষয়, সমানার্থক শ্লোকের নির্দেশ, প্রভূতি বহ আবশ্বজ্ঞাতব্য বিষয় এই পাদটীকার মধ্যে স্থান পাইয়াছে। অনুবাদটি অতি সরল এবং মূলানুগত করিবার জষ্ঠ যত্বের কোন ক্রটি করা হয় নাই । সাক্ষাৎভাবে কেবল মূলের সাহায্যে গীতার অর্থ বুঝিবার পক্ষে এই গ্রন্থখানি অতীব উপযোগী হইয়াছে। শ্রীরাজেন্দ্রনাথ ঘোষ শ্ৰীমদ্ভগবদগীতা-প্রীমৎ উত্তমানন্দ স্বামী কর্তৃক ব্যাখ্যাত ও শ্রীমৎ স্বামী ধ্রুবানন্দ গিরি কর্তৃক সম্পাদিত । মূল্য ২ টাকা। এই যোগসিদ্ধ তন্ত্ৰদশী যোগী ও মহাপুরুষের গীতার ব্যাখ্য। অতি সরল ও সুন্দর হইয়াছে। গীতাপাঠক মাত্রেই এই ব্যাখ্য পাঠ করিয়। অনেক জ্ঞাতব্য বিষয় জানিতে পান্ত্রিবেন।