পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

()ని প্রবাসী ᎼᏬ8Ꮰ করিবেন ? আমরা স্নান করিয়া আসিয়াছি শুনিয়া সে বলিল, তবে আপনাদের আহারের স্থান করিতে বলি ? রাজারাম বাৰু বলিলেন, আমরা বাড়ী হইতে স্নানাহার সারিয়া আসিয়াছি, সেজন্য তোমাকে ব্যস্ত হইতে হইবে না। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, রবীন্দ্রবাবু কোথায় ? ভৃত্য বলিল, তিনি উপরে আছেন, চারিটার পরই নীচে আসিবেন, এই বলিয়া চলিয়া গেল এবং প্রায় পাচ মিনিট পরে দুইখানা রেকাবিতে কিছু মিষ্টান্ন ও ফলমূল আনিয়া টেবিলের উপর রাথিয় বলিল, আপনারা মুথে হাতে জল দিয়ে একটু জলযোগ করুন। রাজারাম বাবু বলিলেন, এখন আবার জলখাবার আনলে কেন ? ভৃত্য বলিল, সেই কোন সকালে কলকাতা থেকে আহার করে এসেছেন, আবার রাত্রে নয়টার সময় থাওয়া হবে, একটু জলযোগ না করলে কষ্ট হবে। এই বলিয়া সে আমাদিগকে মুখ-হাত ধুইবার স্থান দেখাইয়া দিলে আমরা মুখ-হাত ধুইয়া আসিয়া জলযোগে প্রবৃত্ত হইলাম। আমাদের জলখাওয়া শেষ হইলে রাজারাম বাবু পুনরায় ধূমপানে প্রবৃত্ত হইলেন, ভৃত্য রেকাবি দুইখানা লইয়া চলিয়া গেল, যাইবার সময় বলিয়া গেল—বাবু এখনই আসবেন, তার নামবার সময় হয়েছে। পাচ-ছয় মিনিট পরে পাশ্বস্থ কক্ষে পদধ্বনি শ্রবণ করিয়া সেই দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া দেখিলাম, রবীন্দ্রবাৰু সিড়ি বাহিয়া ধীরে ধীরে নামিয়া আসিতেছেন। আমি সেই কক্ষের দ্বারের নিকট অগ্রসর হইলে রবীন্দ্রবাবু আমাকে দেখিতে পাইয়া হাসিমুখে বলিলেন, যোগিন এসেছ ? রাজারাম বাৰু এসেছেন ? আমি রবীন্দ্রবাবুর নিকটে গিয়া ভূমিষ্ঠ হইয়া প্ৰণামপূর্বক পদধূলি লইয়া বলিলাম, “ই তিনি এসেছেন।” রবীন্দ্রবাবু হলের মধ্যে প্রবেশ করিয়া রাজারাম বাবুকে দেখিবা মাত্র হাসিমুথে নমস্কার করিলে রাজারাম বাবুও দণ্ডায়মান হইয়া প্রতিনমস্কার করিলেন। আমরা তিন জনে উপবেশন করিলে রাজারাম বাৰু বলিলেন, “বোধ হয় পচিশ বৎসরের পর আমি আপনাকে দেখিলাম। আমি আপনার বড়দাদা দ্বিজেন্দ্রবাবুর নিকটে যখন আপনাদের যোড়াসাকোর বাড়ীতে যাইতাম তখন আপনার বয়স বোধ হয় পনর-ষোল বৎসর হইবে।” রাজারাম বাৰু রবীন্দ্রবাবু অপেক্ষ কুড়ি-বাইশ বৎসরের বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন। তাহারা দুই জনে সেই সেকালের অর্থাৎ রবীন্দ্রবাবুর পনর-ষোল বৎসর বয়সের ও তাহারও পূৰ্ব্বেকার ঘটনার আলোচনা আরম্ভ করিলেন আমি নীরব শ্রোতা হইয়া তাহাদের আলোচনা শুনিতে লাগিলাম। সেই সেকালে, আদি ব্রাহ্মসমাজে কে সঙ্গীত করিতেন, কে পাখোয়াজ বাজাইতেন, রাজা শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর মহাশয়ের বাড়ীতে সেকালের কোন কোন স্ববিখ্যাত গায়ক আসিতেন, রাজারাম বাৰু কোথায় কোন কোন ওস্তাদের নিকট সঙ্গীত শিক্ষা করিয়াছিলেন প্রভৃতি নানা বিষয়ের আলোচনা হইল। আমি লক্ষ্য করিলাম, অন্য সময় আমি রবীন্দ্রবাবুর কাছে গেলে তিনি আমার সঙ্গে যেরূপ বিবিধ বিষয়ের কথাবার্তা কহিতেন, সেদিন ও সেরূপ করিলেন না, আমি যেন র্তাহাদের আলাপ-পরিচয়ের বাহিরে পড়িয়া রহিলাম } আমি বুঝিলাম যে, রাজারাম বাবুর সহিত সেদিন তাহার প্রথম পরিচয় বলিয়। তিনি শিষ্টাচারবশতঃ রাজারাম বাবুর সঙ্গেই আগ্রহ সহকারে কথাবাৰ্ত্তায় মগ্ন হইলেন। বিশেষত: সেদিন রাজারাম বাবুর সঙ্গে যে-সকল ব্যক্তি ব| বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা হইতেছিল, আমি সে সম্বন্ধে কিছুই জানিতাম না। রবীন্দ্রবাৰু তাহার কৈশোরের যৌবনের বিস্তুতপ্রায় কোন কোন ঘটনার কথা রাজারাম বাবুর মুখে শুনিয়া যে আনন্দ লাভ করিতেছিলেন তাহা বুঝিতে পারিলাম। বেলা পাচটার সময় রবীন্দ্রবাবু গাত্ৰোখান করিয়া বলিলেন, “এস ষোগিন, তোমাকে আমার ইস্কুল দেখাই গে।” এই বলিয় রাজারাম বাবুকে বলিলেন, “আমি এখানে একটা পাঠশালা খুলেছি, সেই কথা যোগিনকে লিখে ওকে এখানে আসতে বলেছিলেম ” এই বলিয়া তিনি রাজারামবাবুকে লইয়া অগ্রসর হইলেন, আমি তাহাদের অনুসরণ করিলাম ।