পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাঘ বিবিধ প্রসঙ্গ—সমাজসংস্কার ও স্বাধীনতার অধিকার 686. ভারতবর্ষ কেবল হিন্দুরই দেশ বলিলে তাহা হইতে সমুদয় অ-হিন্দুর মনে যে অসন্তোষ জন্মিবে, তাঙ্গ প্ৰভু ইংরেজদের স্বার্থসিদ্ধির অমুকুল । অনেক মুসলমান চাহিতেছে ভারতবর্ষের কোন কোন ংশের সমষ্টিভূত ‘পাকিস্থান অর্থাৎ মুসলমানের পবিত্র দেশ । সাভারকরের উক্তি তাহাদের ঈপিাতের পরোক্ষ সমর্থন তাহারা মনে করিতে পারে । তাহার। বলিবে, “তোমরা বলিতেছ ভারতবর্ষ কে বল তোমাদের দেশ । আচ্ছা, আমরা যেখানে যেখানে দলে পুরু আছি সেখানে সেথানে গ্যাট হইয়া বসিয়া থাকিব এবং তোমাদিগকে তাড়াইয়া দিয়া সমস্তটা কেবল আমাদেরই দেশ পাকিস্থান করিব ; দেথি তোমরা কি করিতে পার ” গান্ধীজী ত সিন্ধুর কোন কোন স্থানের আত্মরক্ষায় অসমর্থ সংখ্যায় কম হিন্দুদিগকে ঘরবাড়ী ছাড়িয়া অন্যত্র চলিয়। যাইতে পরামর্শই দিয়াছেন । গান্ধীজীর সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু গবন্মেটি ঐ হিন্দুদের ন্যায্য প্রাপ্য রক্ষণাবেক্ষণের ভার না লইলে অন্য কি পরামর্শ দেওয়া যাইতে পারে ? নেশ্যনত্ব ৪ নেশ্বান গঠন সম্বন্ধে পূর্ণ আলোচনা এই “বিবিধ প্রসঙ্গে” বা একটি প্রবন্ধেও হইতে পারে না । সে বিষয়ে অল্প কিছুমাত্র লিখিলাম । যাহা লিখিলাম তাহার বিরুদ্ধে যে-সব আপত্তি হইতে পারে তাতার উল্লেখ ও থওনের চেষ্টা করিলাম না। সমাজ সংস্কর ও স্বাধীনতার অধিকার যদি কোন দেশের লোকদের মধ্যে কোন সামাজিক কুপ্রথা ও কুসংস্কার থাকে, তাহা হইলে সেই কারণে তাহাদের দেশের রাষ্ট্রক স্বাধীনতার অধিকার লুপ্ত হয় না । একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি । আমেরিকায় নিগ্রোদের প্রতি অবজ্ঞার ভাব ও তজ্জনিত নানা কুরীতি ও কুব্যবস্থা আছে । কিন্তু সেই হেতু আমেরিকার বাহিরের কোন জাতি বলিতে সাহস করে না, “তোমরা নিগ্রোদের প্রতি অত্যাচার কর, অতএব তোমরা স্বাধীনতার অযোগ্য ; আমরা তোমাদের দেশ দখল করিব ।” কিন্তু স্বাধীন কোন দেশের রাষ্ট্রিক স্বাধীনতার অধিকার সামাজিক দোষে লুপ্ত না হইলেও, সেই দোষ স্বাধীনতা-রক্ষার শক্তি নষ্ট করিতে বা কমাইয়৷ দিতে পারে—যেমন ভারতবর্ষে ঘটিয়াছিল । যে-দেশ স্বাধীনতা হারাইয়াছে, তাহার সমাজে দোষ থাকিলেও তথাকার লোকের ন্যায়ত: স্বাধীনতার দাবী করিতে পারে। আমাদের দেশের সমাজ নিখুত নহে ( ইহা দ্বারা বলিতেছি না ষে অন্য কোন দেশেরই সমাজ নিখুৎ ) , তথাপি আমাদের স্বাধীনতার দাবী ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু এই দাবী ফলপ্রদ রূপে সাব্যস্ত করিয়া স্বাধীনতা লাভ করিবার ক্ষমতা কোন কোন সামাজিক অবস্থার উপর নির্ভর করে । লুপ্ত স্বাধীনতার উদ্ধার সশস্ত্র বিদ্রোহ কিংবা অহিংস প্রচেষ্টা দ্বারা হইতে পারে । ভারতবর্ষের বর্তমান প্রচেষ্টা অহিংস । উভয় ক্ষেত্রেই সমগ্র সমাজের সমবেত চেষ্টা অংশ বিশেষের চেষ্টা অপেক্ষ ফলবতী হইবার সম্ভাবনা অধিক । চেষ্টা সমগ্র সমাজের না কইলে, যাহারা তাহাতে যোগ দেয় না, তাহারা নিক্রিয় থাকিলে তাহ। তবু ভাল ; কিন্তু তাতারা শত্রুপক্ষে যোগ দিলে স্বাধীনতা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইবার সম্ভাবনা অধিক হয় । সমাজের কোন কোন অংশের যদি সামাজিক অভিযোগ থাকে, তাহা হইলে তাহারা সম্মিলিত চেষ্টায় যোগ না দিতে পারে, তাহাতে বাধা ও দিতে পারে । হিন্দুসমাজের যাহাদিগকে তপসিল ভূক্ত জাতি করা হইয়াছে, সমাজে তাহাদের মর্যাদা কম বলিয়া ব্রিটিশ গবন্মেণট তাহাদিগকে বাস্তবিক বা কাল্পনিক প্রলোভন দ্বারা ব্রাহ্মণাদি জাতি হইতে একটা আলাদা ভাগে বিভক্ত করিতে সমর্থ হইয়াছে । বর্তমানে বঙ্গীয় আইন সভার তপসিলভূক্ত জাতিসমূহের প্রতিনিধিদিগকে মুসলমান মন্ত্রীরা আপনাদের দলে টানিয়া হিন্দু প্রতিনিধি-সমষ্টিকে আরও দুর্বল করিতে চেষ্টা করিতেছে । হিন্দু সমাজে সকল হিন্দু জাতির ( casteএর ) ময্যাদার বর্তমান তারতম্য না থাকিলে ব্রিটিশ গবন্মেণ ও মুসলমান মন্ত্রীরা উক্ত রূপ কোন চেষ্টা করিতে পারিত না । ইহা বিবেচনা করিলে জাতিভেদ বিষয়ে হিন্দু সমাজের সংস্কার আবশ্বক, বুঝা যাইবে । হিন্দু সমাজকে শক্তিশালী করিতে হইলে আরও অনেক সংস্কার আবশ্যক । বঙ্গীয় প্রাদেশিক হিন্দু কন্‌ফারেন্সের খুলনা অধিবেশনে তদৰ্থে কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছিল। হিন্দু মহাসভার কলিকাত অধিবেশনে তাহা হয় নাই । অবশ্য, সংস্কারের কোন প্রস্তাবই না করিলে অধিক লোকের সায় পাওয়া যায় ; কিন্তু এই রূপ সংখ্যাধিক্য দ্বারা কোন প্রচেষ্টার প্রকৃত শক্তি বাড়ে না। সমাজের কোন কোন শ্রেণীর লোকের সামাজিক ও অন্য অভিযোগ কেবল যে হিন্দুদের মধ্যেই আছে, তাহা নহে ; মুসলমান, খ্ৰীষ্টিয়ান প্রভৃতিদের মধ্যেও আছে । তাহাদের মধ্যেও সমাজসংস্কার আবশ্বাক । রাষ্ট্রীয় অধিকার লাভের জন্যই যে সমাজসংস্কার আবশ্যক তাহা নহে । সকলের প্রতি দ্যায্য ও ধমতুিগত ব্যবহারের জন্যও প্রধানতঃ ইহা আবশ্যক ।