পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

66 e প্রবাসী ృ98tు সংশোধনাদির জন্য উহা একটি সিলেক্ট কমৗটিতে প্রেরিত হয় । সম্প্রতি গত ১৯শে ডিসেম্বর সিলেক্ট কৰ্মীটির প্রস্তাব সহ বিলটি অ্যাসেমব্লিতে পেশ হইয়াছে। ভবিষ্যতে উহার আলোচনা হইবে । মূল বিলটি যে আকারে পেশ হইয়াছিল তাহাতে সকলেই চমকিত হয়। উহার ধারাসমূহে সমবায়-নীতি ও দেশের অগ্রগতিকে বাধা দিয়া সরকারী প্রভাব-প্রতিপত্তি কায়েম করিবার চেষ্টা নগ্নভাবে দেখা দিয়াছিল। বর্তমান সিলেক্ট কমৗটির প্রস্তাবসমূহে এই অপচেষ্টার প্রতিকারের কিঞ্চিৎ প্রয়াস আছে ; কিন্তু এই সব প্রস্তাব গৃহীত হইলেও এই সমবায় বিলের অনেক অংশই আপত্তিকর থাকিয়া যাইবে । সমবায়ের একটি মূল কথা এই যে, জনসাধারণ যেন নিজেদের পরিচালন করিবার ভার নিজেরা গ্ৰহণ করিতে পারে, সরকারের বা প্রভূশক্তির মুখাপেক্ষী হইয়া না থাকে । এই বিল সেই মূলনীতিকেই উড়াইয়া দিয়া এই দিকেও সরকারী শাসন কায়েম করিতে চায়। ইহাতে সমবায়ু-সমিতি এবং সমবায়ু-কৰ্ম্মীরা হইবে সরকারী কৰ্ত্তাদের হাতের যন্ত্র । বর্তমানে সমবায়ু-সমিতিগুলির যে অবস্থা, সমবায়ু-বিভাগের আওতা তাহাদের উপর যেভাবে পড়িয়াছে বলিয়া শোনা যায়, তাহাতে বর্তমান সমবায়সমিতিগুলির কার্য্যাদি সম্বন্ধে বিশেষ অনুসন্ধান না করিয়া কোন বিলই উত্থাপন করা উচিত নয় । যেসব প্রদেশে ভারত-সরকারের ১৯১২ খ্ৰীষ্টাব্দের সমবায়আইনের স্থলে প্রাদেশিক সমবায়ু-আইন প্রবর্তিত হইয়াছে, সেখানেই তাহার পূৰ্ব্বে এইরূপ অমুসন্ধান হইয়াছে এবং তাহার তথ্যাবলী বিবেচনা করিয়া আইনের খসড়া প্রণীত হইয়াছে । কিন্তু বাংলা-সরকারের সে সব বালাই নাই—দেশের সমিতিগুলি কিরূপ চলে নাচলে, কি তাহাদের দরকার, এই সব বিষয়ে কোন প্রকার স্বাধীন ও বেসরকারী কর্মীটি দ্বারা অনুসন্ধান না করাইয়া তাহার একেবারে নিজেদের উদ্দেশ্রাতুরূপ বিল প্রণয়ন করিয়া বসিয়াছেন । এই বিল প্রণয়নের পদ্ধতি যেমন অন্যায়, এই বিলের উদ্দেশু ও তেমনি ক্ষতিকর । এই বিল আইনে পরিণত হইলে প্রকৃত সমবায়ের ভবিষ্যৎ পথ একেবারে নিরুদ্ধ হইবে, অথচ জনসাধারণের আত্মনিয়ন্ত্রণের একটি প্রধান শিক্ষাক্ষেত্রই হইল সমবায়-সমিতিগুলি । তাই আইন-সভার সদস্যদের দেথা দরকার ষাহাতে এই সমবায়ু-বিরোধী বিল যথোপযুক্তরূপে সংশোধিত না হইয়া গৃহীত না হয়—সমবায়ের মূলনীতিই যাহাতে বিনষ্ট না হয় । সমবায় বিলের ‘অসম্মতিপত্র’ সমবায়ু বিলের বিবরণীর সহিত একটি সুলিখিত, স্বযুক্তিপূর্ণ ও সারগর্ত ‘অসম্মতিপত্র’ (Note of Dissent) দাখিল করিয়াছেন আইন-সভার সদস্য রাজশাহীর শ্রযুক্ত সত্যপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজশাহীর অন্যতম সদস্য শ্ৰীযুক্ত স্বরেন্দ্রমোহন মৈত্রও তাহার সহিত নিজের মতৈক্য জ্ঞাপন করিয়াছেন। আমরা সত্যপ্রিয় বাবুর এই অসম্মতিজ্ঞাপক বিবৃতিটি মন্ত্রীমণ্ডলীকে, আইন-সভার সদস্যদিগকে ও সমবায়ু-কৰ্ম্মীদিগকে পাঠ ও বিবেচনা করিতে বলি । উহাতে সমস্ত বিল ও উহার নীতি সম্বন্ধে বিশদ ও মূল্যবান আলোচনা রহিয়াছে। অনেক উন্নতিবিধায়ক পথও উহাতে নির্দেশ করা হইয়াছে । সমবায়-সমিতিসমূহের দায়িত্বের প্রকারভেদ সমবায়-সমিতিসমূহ সম্বন্ধে একটি বড় প্রশ্ন এই যে, উহারা অসীমদায়িত্বযুক্ত হইবে, না সসীমদায়িত্বযুক্ত হইবে । সমবায়ু-সমিতিসমূহ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত,—অসীমদায়িত্বযুক্ত (Societies with unlimited liability) 44: সসীমoffo (Societies with limited liability) এই দেশের গ্রাম্য প্রাথমিক সমবায়-ঋণদান-সমিতিসমূহ প্রধানতঃ এবং সাধারণতঃ অসীমদায়িত্বশীল। অসীমদায়িত্বযুক্ত সমিতির বিশেষত্ব এই যে, তাহার নিকট হইতে পাওনা প্রয়োজন হইলে তাহার যে-কোন সভে্যুর নিকট হইতে আদায় করা যাইতে পারে । গত ৩৫ বৎসরের পরিচালনার ফলে দেখা যায় যে, যে-উদ্দেশ্য লইয়া ভারতবর্যের সমবায়সমিতিসমূহে অসীমদায়িত্বের নীতি অনুস্থত হইয়াছিল, তাঙ্গ সম্পূর্ণ বিফল হইয়াছে। এই জন্ত আজকাল অনেকের মত অসীমদায়িত্বের পরিবর্তে সসীমদায়িত্বের প্রবর্তন করা । শ্রযুক্ত সত্যপ্রিয় বাবু এই মত সমর্থন করেন এবং এই মতের সমর্থনে তাহার অসম্মতিপত্রে ভারতবর্ষের এবং অন্যান্য দেশের বহু বিশেষজ্ঞের মত উদ্ধৃত করিয়াছেন। পাবনার সদস্য ঐযুক্ত মৌলবী অজাহার-আলিও এক পৃথক নোটে এই মত সমর্থন করিয়াছেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য এই যে, দিল্লীতে গত ডিসেম্বরের অখিল ভারতীয় সমবায়-রেজিষ্টারদের বৈঠকে এই বিযয় আলোচনা হয় । উভয় পক্ষে সমানংখ্যক ভোট হওয়াতে সভাপতি সৰ্ব এম-এল-ডারলিংএর কাস্টিং ভোটে অসীমদায়িত্বের পক্ষ জয়ী হয় । বিচার করিয়! দেখিলে এই সিদ্ধাস্ত সত্যপ্রিয় বাবুর মতের পরিপোষক ধরা যাইতে পারে । বাংলা দেশে যে-প্রণালীতে সমবায়-সমিতিসমূহের