পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাঙ্কন নিৰ্বোক ዕሳዕ কফি একটু খাওয়া যাক, দুধও গরম কর এক পেয়াল, চিনি আছে ত ? —আছে —কফি খেয়েছিস কখনো তুই ? —আজ্ঞে না । —আচ্ছা খাওয়াচ্ছি তোকে, জল তাড়াতাড়ি । যোগেন মহাউৎসাহে জল গরমের ব্যবস্থা করিতে লাগিল। মেডিকেল গেজেটখানা খুলিতে গিয়া সহস তাহার ভিতর হইতে মণিমালার একথানা পুরাতন চিঠি বাহির হইয়া পড়িল । পুরাতন চিঠি পড়িতে এত ভাল লাগে ! মণিম' ifর চিঠিতে বিশেষ কোন কবিত্ব থাকে না, সাদাসিধা আমি-ভাল-আছি-তুমিকেমন-আছ গোছ চিঠি, তবু পড়িতে ভাল লাগে । বিমল ঈযং ভ্ৰকুঞ্চিত করিয়া পত্ৰখানি পাঠ করিতেছে এমন সময় ছুয়ার ঠেলিয়া হুড়মুড় করিয়া স্টেশনের পয়েণ্টসম্যান চন্দু আসিয়া উপস্থিত। এক পা কাদা, সৰ্ব্বাঙ্গ ভিজা, দুষ্ট হাতে দুইটি সিক্ত ছাতা ! —বড়বাবু আপনাকে ডাকছেন হুজুর, জলদি । —কেন ? —খোক খাট থেকে গিরে:গিয়ে বেহেঁাস হয়ে গেছে । —তাই নাকি, বড় বৃষ্টি পড়ছে যাব কি ক’রে ? –বাৰু ছাতা পাঠিয়ে দিয়েছেন,–চন্দু ছাতা দেখাইল । এই বৃষ্টিতে বিমলের বাহির হইতে ইচ্ছা করিতেছিল না। কিন্তু থোকা পড়িয়া অজ্ঞান হইয়া গিয়াছে, না গেলেও নয়। যোগেনকে জল গরম করিতে বারণ করিয়া দিয়া অবশেষে বিমল হাটুর উপর কাপড় তুলিয়া খালি পায়ে বাহির হইয়া পড়িল । এক জোড়া মাত্র জুতা আছে, সেটাকে ভিজানো ঠিক হইবে না। চন্দু স্টেশনের একচক্ষু আলোটি আনিয়াছিল, তাহারই আলোকে কোনক্রমে বিমল মাস্টার-মহাশয়ের বাসায় গিয়া হাজির হইল। সেখানে গিয়া কিন্তু সে যাহা দেখিল তাহাতে সে অবাক হইয়া গেল। কোথায় কি, কেহই ত অজ্ঞান হয় নাই ! মাস্টার-মহাশয়ও বাড়ীতে নাই, তিনি ডাক্তারবাবুকে ডাকিতে পাঠাইয়া স্টেশনে চলিয়া গিয়াছেন। তাহার গরম কর পুত্রটি খাটের উপর হইতে মারামারি করিতে করিতে হঠাৎ পড়িয়া গিয়াছিল এবং মাস্টার-মহাশয়ের গৃহিণীর বর্ণনামুযায়ী পড়িয়া যাইবার পর একটু যেন “কেমন কেমন” করিতেছিল। এখন অবশ্য সব ঠিক হইয়া গিয়াছে, এখন সে ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, তবু যদি ডাক্তারবাবু একবার উহার নাড়ীটা ও বুকটা পরীক্ষা করিয়া দেখেন । বিমল গম্ভীরভাবে তাহার নাড়ীটা ও বুকটা পরীক্ষা করিয়া বাসায় ফিরিয়া গেল। তাহার যত দূর মনে পড়িল এই মাসেই সে ঘোষালবাবুর ওখানে অন্ততঃ দশ বার গিয়াছে। সে পরদিন চল্লিশ টাকার একখানি বিল ঘোষালবাবুর নিকট পাঠাইয়া দিল । টাকা অবশ্ব ঘোষালবাবু দিলেন না। পরেশ-দার অনুরোধে ইঙ্গ লইয়া বিমলও আর বেশী পীড়াপীড়ি করিল না। ঘোষালবাবুর মধ্যে দুইটি পরিবর্তন কিন্তু দেখা দিল, প্রথম তিনি বিমলকে পরিত্যাগ করিলেন, দ্বিতীয় তিনি ভূধরবাবুর ডিসপেনসারিতে মাঝে মাঝে যাতায়াত স্বরু করিলেন। তাহার মেয়ের জর হওয়াতে ভূধরবাবুই এক দিন আসিয়া দেখিয়া গেলেন এবং বিমল লোকপরম্পরায় শুনিল, ঘোষাল না কি বলিয়াছেন যে পয়সা দিয়া ডাকিতে হইলে ভাল ডাক্তারই তিনি ডাকিবেন, বাজে ডাক্তারকে ডাকিতে যাইবেন কেন ! ভূধরবাবু অবশু একবারই আসিয়াছিলেন। তাহার পর সাবেক জগমোহনই পুনরায় আসিয়া ঘোষালবাড়ীর চিকিৎসা-ভার গ্রহণ করিলেন । বিমল নিশ্বাস ফেলিয়া বাচিল । 3* দেখিতে দেখিতে আরও মাসখানেক কাটিল । এক দিন মহাসমারোহে বিসর্জন নাটক অভিনীত হইয়া গেল । প্রত্যেকের ভূমিকাই চমৎকার হইয়াছিল। অপর্ণার ভূমিকায় আঠারো-উনিশ বছরের একটি ছেলে অদ্ভুত অভিনয় করিল। পুরুষমামুষে মেয়ের ভূমিকা এত সুন্দর করিয়া অভিনয় করিতে পারিবে বিমল আশাই করিতে পারে নাই। বিমলের নিজের ভূমিকাও চমৎকার হইয়াছিল। এমন সৰ্ব্বাঙ্গসুন্দর অভিনয় এ অঞ্চলে আর না কি হয় নাই। মথুরবাবু অভিনয়-রসিক, বিমলের অভিনয়ে তিনি অত্যস্ত সন্তুষ্ট হইয়া একটা সোনার পদক তাহাকে