ዕግó উপহার দিবেন বলিয়া ঘোষণা করিলেন। ও অঞ্চলের গণ্যমান্য ধনী সকলেরই নিকট অমর টিকিট বিক্রয় করিয়াছিল, সকলেই আসিয়াছিলেন। এই তরুণ ডাক্তারটির পরিচয় লাভ করিয়া সকলেই খুশী হইলেন। মহিলাদের জন্য চিকের আলাদা বন্দোবস্ত ছিল ; বিনোদিনী, শেফালি এবং মথুরবাবুর বাড়ীর অন্তান্ত মেয়েরা চিকের অন্তরালেই বসিয়া ছিলেন। পর্দা বিষয়ে মথুরবাবু, বিশেষ করিয়া মথুরবাবুর গৃহিণী রীতিমত সনাতনপন্থী। অস্বৰ্য্যম্পশু না হইলেও অলোকম্পত্য যে, সে-বিযয়ে সন্দেহ নাই । পালকি ছাড়া কখনও বাড়ীর বাহির হন না । মোটর আছে কিন্তু তাহা খোলা মোটর বলিয়া তাহাতে মেয়ের চড়ে না। মথুরবাবু একটি ঢাকা মোটর কিনিতে চাহিয়াছিলেন কিন্তু মথুরবাবুর স্ত্রীর তাহাতে নাকি ঘোর আপত্তি। তিনি নাকি বলিয়াছিলেন, “আমাদের পালকিই ভাল। পালকি আছে বলে তবু কয়েকটা লোক প্রতিপালিত হচ্ছে, মোটর হ’লে ও বেয়ারাগুলোকে তোমরা ত আর রাখবে না । তাছাড়া ও মোটর-ফোটরের চেয়ে পালকিই আমার বেশী পছন্দ ।” মহিলা-দর্শকগণের মধ্যে অধিকাংশই পর্দানশীন ছিলেন । বাহিরে চেয়ারে আসিয়া যাহারা বসিয়াছিলেন র্তাহাদের মধ্যে তিন জন মেমসাহেব ছিলেন, তাহার সদর হইতে মোটরযোগে অভিনয় দেখিতে আসিয়াছিলেন—পুলিস-সাহেবের স্ত্রী, জজ-সাহেবের স্ত্রী এবং ম্যাজিস্টেট সাহেবের স্ত্রী । র্তাহারা অবশ্য বেশীক্ষণ বসেন নাই, খানিক ক্ষণ পরে উঠিয়৷ গিয়াছিলেন । বাহিরে চেয়ারে একটি বাঙালী মহিলাও বসিয়া ছিলেন, তিনি একাই ছিলেন এবং শেষ পর্য্যস্ত ছিলেন । বিমল শুনিল তিনি নাকি সৌরীনবাবুর ভ্রাতুপুত্রী, কলেজের পাস না হইলেও খুব শিক্ষিতা এবং মার্জিতরুচি। একটু অতি-আধুনিকতার শুচিবায়ু আছে এবং সেজন্য নাকি সকলের সঙ্গে মিশিতে পারেন না ; যখনই যেখানে যান নিজের একটু স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখিয়া চলেন। এসব সত্ত্বেও নাকি সুপ্রিয় সরকার মেয়েটি “কোয়াইটু টলারেবল”—জয়সিংহ-বেশে সজ্জিত অমর অন্তত: সেই কথাই বিমলকে বলিল। সিভিল সার্জন আসেন নাই, কিন্তু তাহার কন্যা ও স্ত্রী নাকি আসিয়াছেন। কিন্তু প্রবাসী Yê8V তাহারা চিকের অন্তরালে বসিয়াছেন বলিয়া মণিমালার বান্ধবী তরঙ্গিণীকে বিমল দেখিতে পাইল না। মথুরবাবুর বাড়ীর কাছেই ক্লাব, সুতরাং তাহার সদ্য-বসানে। ‘ডায়নমো’র সহায়তায় রঙ্গমঞ্চে বৈদ্যুতিক আলোর বন্দোবস্ত করা সম্ভবপর হইয়াছিল। এ অঞ্চলে বৈদ্যুতিক আলোকোজ্জল রঙ্গমঞ্চে এই প্রথম অভিনয় । এই জন্যই সকলের উৎসাহ আরও বেশী হইয়াছিল ;–সুবিধা কত । কিন্তু অসুবিধাটাও খানিক ক্ষণ অভিনয় হওয়ার পর বোঝ গেল-হঠাৎ সব আলো একসঙ্গে নিবিয়া গেল। অগত্যা অভিনয় কিছুক্ষণ বন্ধ রহিল, বৈদ্যুতিক যন্ত্রের মেজাজ ও যোগাযোগ ঠিক হইতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগিল । এমন একটা কলরব উঠিল যে, মনে হইল সব বুঝি পণ্ড হইয়া যায় ! নানা রকমের নানা মন্তব্য, নান। গ্রামে নানা রকম শিস চতুদ্ধিকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। সকলেই যখন অধীর হইয়া উঠিয়াছে, তখন হঠাৎ দপ করিয়া আবার সব আলো জলিয়া উঠিল এবং অভিনয় পুনরায় স্বরু হইল। মাঝখানে খানিকটা গোলমাল হওয়াতে একটু রসভঙ্গ অবগু হইয়াছিল, কিন্তু অভিনেতাদের অভিনয়গুণে আবার বেশ জমিয়া উঠিতে দেরি হইল না । অভিনয়াস্তে অমর বলিল—খরচখরচা বাদে ৩১১/১০ বেচেছে, এর সবটাই কি তুই চাস ? --নিশ্চয় । —কেন, তোমার বদিবাবু ত পাচ-শ টাকা জোগাড়ই করেছে ; —না, আমার অনেক দরকার টাকার, আমার বাসাটার চার দিক দিয়ে জল পড়ছে, সারাতে হবে। —সব টাকা দিচ্ছি না, আড়াই-শ তুমি নাও, বাকিটা নিয়ে আমরা সবাই ফুৰ্ত্তি করি এক দিন। কি বল হে, শরৎ--- শরং ছোকরাটি অপর্ণ সাজিয়াছিল। চিরন্তন বখাটে ছোকরা, ম্যাটিক পাস করিতে পারে নাই, থিয়েটার করিতে পারে বলিয়া অমরই তাহাকে এখানকার কো-অপারেটিভে একটা চাকুরি জুটাইয়া দিয়াছে। সে