পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ }• তৈয়ারী করিতেছিল। একটি অল্পবয়সী ছেলে তাহার সাহায্য করিতেছে। একখানা প্রায়-সমাপ্ত লাঙলের উপর হাল্কা ভাবে যন্ত্র চালাইতে চালাইতে মাঝি গুন গুন করিয়া গান করিতেছে। নবীন লাঙলখানার দিকে আঙুল দেখাইয়া বলিল—দেখেছ এদের লাঙলের ধাঁচ দেখেছ। কেমন পাতলা আর কতটা লম্বা ! রংলাল দেখিয়া মুখ বাকাইয়া বলিল—বাজে। এত সরুতে পাশের মাটি ধরবে কেনে ? ওর চেয়ে আমাদের ভাল। যাক গে, এখন আমাদের কাজের কথা। এই মাঝি, মোড়ল কোথা রে তোদের ? ওস্তাদ কথার কোন উত্তর দিল না, আপন মনেই কাজ করিতে লাগিল। রংলাল বিরক্ত হইয়া বলিল—এ-ই, শুনছিল ? মুখ না তুলিয়াই এবার চুড়া বলিল—কি ? —তোদের মোড়ল কোথা ? —মোড়ল ? --ईT । —মোড়ল ? - -ट्टेr-हैr । চুড়া এবার হাতের যন্ত্রট রাখিয়া দিয়া কোন কিছুর জন্য আপনার ট্যাক হইতে কাপড়ের খুট পৰ্য্যন্ত খুজিতে আরম্ভ করিল। কিন্তু সে বস্তুটা ন পাইয়া অত্যন্ত হতাশ ভাবে বলিল—পেলম না গো ! রংলাল সবিস্ময়ে বলিয়া উঠিল—ওই এ বেটা বলছে কি হে ? চুড়া সকরুণ মুখে বলিল—রেখেছিলাম তো বেঁধে । পড়ে গেইছে কোথা ? রইলাল অত্যন্ত চটিয়া উঠিয়া বলিল—দেখ দেখি বেটার আম্পদ্ধ, ঠাট্টা-মস্করা আরম্ভ করেছে ! চুড়া এবার খিল খিল করিয়া হাসিয়া বলিল—মানুষ আপনার ঘরকে থাকে। তুরা তার ঘরকে যা । আমাকে শুধালি কেনে ? রংলাল কোন কথা বলিল না, নবীনের হাত ধরিয়া টানিয়া ক্রুদ্ধ পদক্ষেপেই অগ্রসর হইল। চুড়া পিছন হইতে অতি মিষ্টস্বরে ডাকিল—মোড়ল—ও মোড়ল । প্রবাসী yరిgఆ রংলাল বুঝিল লোকটা অমৃতপ্ত হইয়াছে, সে ফিরিয়া দাড়াইয়া বলিল-কি ? চুড়া কোন কথা বলিল না, তাহার সমস্ত শরীরের কোন একটি পেশী নড়িল না, শুধু বড় বড় কাচা-পাক গোফ জোড়াটি অভূত ভজিতে নাচিয়া উঠিল। গোফের সে নৃত্যভঙ্গিমা যেমন হাস্যকর, তেমনই অদ্ভূত। রংলালও সে দেখিয়া হাসিয়া ফেলিল, বলিল—বেটা আমার রসিক রে! চুড়া এবার বলিল—বুলছি, রাগ করিস না গো! মোড়ল মাঝির উঠানে থাটিয়ার উপর একটি আধা ভদ্রলোক বসিয়াছিল। কমল মাটির উপর উপু হইয়া বসিয়া কথা বলিতেছিল। লোকটির গামে একখানি চাদর, পায়ে একজোড়া চটিজুতা, হাতে মোটা একটা বঁাশের ছড়ি, চোখে পুরু একজোড়া চশমা, স্বতা দিয়া মাথা বেড়িয়া বাধা । রং লাল ও নবীনকে দেখিয়া চশমাস্বদ্ধ চোখ একরূপ আকাশে তুলিয়া দেখিয় লোকটি বলিল— ওক্ট, পাল মশাই যে, লোহারও সঙ্গে ! কি মনে ক’রে গো ! রংলাল ঈষৎ হাসিয়া বলিল—বলি, আপুনি কি মনে ক’রে গো ! লোকটি বলিল—আর বল কেনে ভাই, এরা ধরেছে বর্ষার সময় ধান দিতে হবে । তাই এক বার দেখতে শুনতে এলাম । তা, এরা করেছে বেশ, এরই মধ্যে গেরামখানিকে বেশ ক’রে ফেলেছে হে ! তার পর শুনলাম, আপনারাও জমি নিয়েছেন। তা আমাদিগে বললে কি আর আপনাদের জমি আমরা কেড়ে নিতাম ? আমরাও থানিক-আধেক নিতাম আর কি ! নবীন বলিল—বেশ ঘোষ মশায়, বললেন ভাল ! আমাদিগেই কি আর দেয় জমি । কোন রকম ক’রে হাতে পায়ে ধ’রে তবে আমরা পেলাম । তার উপর কে চন্দ রাজা কে চন্দ মন্ত্রী কোন হদিসই নাই । লোকটি হাসিয়া বলিল—ত দেখছি । চার কোণে চার কোপ দিয়ে গেলেই হ’ল । ব্যস জমি দখল হয়ে গেল ! কই, এখনও তো কিছু করতে পারেন নাই