পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মেজ বে। ঐকল্পিতা দেবী গলির ওপারে বনেদি বংশের দালানবাড়ী। লক্ষ্মীর বিদায় নেবার পথে ছাপ পড়েছে সর্বত্র। দাগখরা, স্যাতা-পড়া, চুনস্বরকি-খলা দেয়াল-পাচিল নগ্ন দারিত্র্যের লজ্জা খুইয়ে দাড়িয়ে আছে। রোদের চুমুক পান করে দুই পহর বেলায় চারি দিক যখন ঝিমিয়ে পড়ে, দেখা যায় ফাট থিলেনের ফাক দিয়ে পোড়ো বাড়ীর হালছাড়া দশা। আমার বাসা সামনের বাড়ীতে কোণের ঘরে, পটের উপর তুলি কালি বুলোবার কারবার ফেঁদেছি। যা খুশি তাই করে দিন কাটাবার অধিকার পেয়েছি কিঞ্চিং পৈতৃক সম্পত্তির প্রশ্রয়ে। মাধুকরী বৃত্তিই আমার স্বষ্টি-কল্পনার ব্যবসায়। সংসারের পথে-ঘাটে মনটা এদিক ওদিক থেকে টুকরো-টাকরা যা পায় বুলি ভরে তাই দিয়ে। বেছে বেছে এই ঘরটা ভাড়া নিয়েছি। অনেক দিনের বেকার কালপুরুষ দেয়ালগুলোয় মডারম্ আর্টিস্টের ছাদে ছবি দিয়েছে লেপে, তাতে আভাস পাওয়া যায় নানা রকম, মানে পাওয়া যায় না। একটা নড়নড়ে তক্তপোষে আমার কাজও চলে বিশ্রামও হয়। যেখানে চারি দিকটা স্বশৃঙ্খল হপরিচ্ছন্ন সেখানে পারিপাট্যের স্বসম্পূর্ণতায় আছরে হয়ে পড়ে মন, অকাজে দেয় গা ঢেলে । তাই গলির এই অনাদৃত ঘর, আর একখানি পূর্বইতিহাস-বিস্মৃত তক্তপোষ উড়ো ভাবনাগুলোকে রাস্তা ছেড়ে দেয়। আবার ওদিকে চলেছে চিকের আড়ালে ঝাপসা মূর্তির চলাচল, তুলিট। তার মোহে পড়ে তার অনুসরণ করতে চায়, বাধা পথের বাইরে কুড়িয়ে-পাওয়া ছায়ামণির লোভে । দিন চলেছে চোখের সামনে। চলতে ফিরতে রূপের স্বাচড় লাগিয়ে ষায় মনটাতে। ছবি যখন আঁকি জানি নে সে কী যে। রেখার যোগৰিয়োগ ঘটতে থাকে একটা কোন বে-আইনী চালে। অনর্থক কৌতুহলে চেয়ে দেখি হিজল গাছের আড়ে একটুখানি ছ্যাংলাপড়া ঘাটের সিড়ি পানাপুকুরের পাড়ে। কেউ জল তুলতে আসে, কেউ নাইতে, কেউ মাছ ধরতে। ছেলেরা কানামাছি খেলে, স্বকুমার দেহে প্রাণের উচ্ছ্বাস জাগিয়ে তোলে গতির আবত। তরুণীর দল কাখে কলসী। ভারমন্থর দেহ চরণ-চিহ্ন রেখে চলে সিড়ির পৈঠায়, কলসীর জল উছলে পড়ে, পায়ের ছাদ মুছে যায়। দূরে সাদা মেঘের লাইনগুলো দিগন্তে বনের লাইন খুজে চলে। অপূর্ব ধরণী, ছড়িয়ে দিয়েছে রেখার ঝাক । আমার তুলি তার থেকে তুলে নেয় এক-একটা রেখার রূপ যেন অতল থেকে মাছ ধরার মতো ছিপ দিয়ে । লাল ডুরে শাড়ীতে চাবি-বাধা আঁচল কাধের উপর ঝোলে, ফুটে ওঠে কাপড়ের ভীজে ভাজে দেহভঙ্গীর নিবিড় সঙ্গতির ছন্দ । ঝিলের আলো ঝলমলিয়ে ওঠে, মা এসে বসেন শিশু-কোলে ঘাটের ধাপে । আঁৎকে ওঠে শিশু হঠাৎ কোন কালে ছায়ার চমকে, মা তাকে বুকে অঁাকড়ে ধ'রে চাপা আঙুলের সম্মোহনী তার দেহে বুলিয়ে চলেন। অপরায়ের আভা শিশুর মুখে, কাজলটান চোপ্ত তৃপ্তির ভারে নত। আমার তুলিতে জাগে রোমাঞ্চ, ম্যাডোনার স্বপ্নরূপ দেখতে পাই প্রদোষের ছায়ার ঘের-দেওয়া। কিন্তু সকলের চেয়ে মায়াবিস্তার করে ঐ চিকে আবছা-করা মানুষ, অস্পষ্টতার বঞ্চনা ভরিয়ে তোলে ছবির চোখে আপন জাদু দিয়ে। সকালে সস্তস্নান করে কে দাড়ায় ঐ চিক-অন্তরালে | মনে হয় ঘেন ঘন কেশের গন্ধ উড়ে আসে লটকান-রঙা কাপড়ের সুবাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে । বেলা বেড়ে চলে। আমার কাচ-ভাঙা জানলায়