পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কালিন্দী ঐতারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় &ン চিনির কল ব্যবসায়ী ভদ্রলোকটির নাম বিমলবাবু। বিমলবাবু পরদিন সকালেই গিয়া চর দেখিয়া আসিলেন। রাত্রের মধ্যে বান অনেক কমিয়াছিল, তবুও চরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তখনও জলে জলমগ্ন ; সেই অবস্থাতেই তিনি চরটি দেখিয়া খুশী হইয়া উঠিলেন। সকলের চেয়ে বেণী খুশী হইলেন তিনি সাওতালদের দেখিয়া। ছোটরায়বাড়ীর নায়েব ঘোষ ছিলেন র্তাহার সঙ্গে, বিমলবাৰু ঘোষকে বলিলেন,—অদ্ভুত জাত মশাই এরা, যেমন স্বাস্থ্য তেমনি কি খাটে ! আমাদের দেশী লোকের মত নয়— ফাকি দেয় না । ঘোষ মৃদু হাসিয়া বিমলবাবু অপেক্ষ অধিক অভিজ্ঞতার পরিচয় দিয়া বলিল—তাও অনেক ফাকি দিতে শিখেছে মশাই আজকাল। ধীরে ধীরে শিখেছে, বুঝলেন ; যখন ওরা প্রথম এল এখানে, তখন একটা লোকে যা কাজ করত এখন সেই কাজ ক'রে দুটো লোকে ; দেড়টা লোক ত লাগেই ! বিমল বাৰু ব্যবসায়ী লোক, কয়েকটি কলেরই মালিক, শ্রমিক-মজুরদের সম্বন্ধে তাহার অভিজ্ঞতা প্রচুর, তাহার উপর তিনি উচ্চশিক্ষিত বৈজ্ঞানিক ; ঘোষের কথা শুনিয়া তিনি একটু হাসিলেন, বলিলেন–কিন্তু এখনও ওরা এক জনে যা করে সে-কাজ করতে আমাদের দেশী লোক অন্তত দেড়টা লাগে। দুটোই বলতাম, তা আপনার ভয়ে দেড়টাই বলছি। ঘোষ এবার সন্তোষের হাসি হাসিল, বিমলবাবু তাহাকে ভয় করিয়া কথা বলিতেছেন এটুকু তাহার বেশ ভালই লাগিল, হালিয়া বিমলবাবুর কথা মানিয়া লইয়াই সে এবার বলিল—তা বটে ! বিমলবাবু বলিলেন—চলুন, এক বার ওদের পাড়ার মধ্যে যাওয়া যাক। একটু আলাপ করে রাখা যাক । কল চালাতে হ’লে ওদের না হ’লে তো চলবে না ! শ্ৰীবাসের দোকানের সম্মুখ দিয়াই পথ, দোকানের সম্মুখে আসিয়াই ঘোষ বলিল—ওরে বাপরে! এই থানেই যে সব ভিড় লাগিয়ে রয়েছিস রে মাঝিরা ! কি করছিস সব এখানে ? ঐবাসের দোকানে বসিয়া মাঝিরা বাকীর খাতায় টিপ সহি দিতেছিল। শ্ৰীবাস একটি ছক হাতে বসিয়া সমস্ত দেখিয়া লইতেছিল। ঘোষ ও অপরিচিত বিমলবাবুকে দেখিয়া সে শঙ্কিত. হইয়া উঠিল। তাড়াতাড়ি ছকাটি রাখিয়া উঠিয়া পথে নামিয়া আসিল, অৰ্দ্ধনত হইয়া একটি নমস্কার করিয়া বলিল –পেনাম। তার পর, ঘোষমশাই কোন দিকে ? এই বন্যের মধ্যে ? আর এই বাবুটি ? ঘোষ হাসিয়া বলিল—ইনি হলেন কলকাতার লোক, এসেছেন চর দেখতে। এখানে একটা চিনির কল করবেন। তাই এসেছিলাম ওঁকে সঙ্গে নিয়ে। তার পঃ তোমার ওখানে এত ভিড় কিসের ? —চিনির কল করবেন ? বিস্ময়ে শ্ৰীবাসের চোখ দুইটা বিক্ষরিত হইয়া উঠিল। —চিনির কলও হযে, সঙ্গে সঙ্গে আখের চাষও হবে । কিন্তু আপনার নামটি কি ? দোকানটি কি আপনার { বিমলবাৰু তীক্ষ দৃষ্টিতে ঐবাসের মুখের দিকে চাহিয় প্রশ্ন করিলেন । ঐবাসের মুখ অসন্তোষে কঠিন শুদ্ধ হইয়া উঠিল, সে বলিল—কল কি এখানে চলবে আপনার ? এত আর্থ পাবেন কোথা ? বিমলবাবু হাসিয়া বলিলেন—কল হ’লেই চারি দিকে আখের চাষ বেড়ে উঠবে। দোকান আপনার খুব ভাল চলবে দেখবেন । তার পর জমিও বোধ হয় আছে