পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(Se বাহির করিয়া ব্যাগ হইতে একখানি নোট বাহির করিয়া কমলের হাতে দিলেন । কমল সস্তুপণে নোটখানির ছই প্রাস্ত দুই হাতের আঙল দিয়া ধরিয়া সবিস্ময়ে নোটখানার ছাপের দিকে চাহিয়া রহিল। বিমল বাৰু একটু হাসিয়া বলিলেন—গেল টাকা— দশ টাকা পাৰি ওটা দিলে! সমস্ত দলটি এবার কলরব করিয়া উঠিল । বিমল বাবু হাসিয়া ঘোষকে বলিলেন—চলুন, তা হ’লে এবার । আসি এখন দোকানী মশায় । চললাম রে মাঝি । কমল বলিল-ই-ই-আম্বন গ৷ আপুনি । খাটব আপোনার কলে আমারা খাটব । সাঁওতাল-পল্লীর মাঝখান দিয়া পরিচ্ছন্ন মেটে পথটি এই কয় দিনের প্রচণ্ড বর্ষণে ধুইয়া মুছিয়া পরিষ্কার হইয়াই ছিল ; তাহার উপর পর্ব উপলক্ষে মেয়েরা পথের উপর ঝাটা বুলাইয়াছে প্রত্যেক বাড়ীর দুয়ারের মুখে একটি করিয়া মাজুলি পড়িয়াছে। আপনাদের উঠানে উঠানে মেয়েগুলি আজ খুব ব্যস্ত । তৎপরতার সহিত কাজ করিয়া ফিরিতেছে। ছোট ছোট মেয়েগুলি আঁচলে ভরিয়া শাক সংগ্ৰহ করিয়া ফিরিতেছে । শাক আজিকার পর্বে একটা প্রধান উপকরণ । চলিলে চলিতে ঘোষ বিকৃতমুখে বার বার জোরে জোরে নিশ্বাস টানিতে টানিতে বলিলেন—উ–মঙ্গে আজ বেটার বান ডাকিয়ে দেবে। পচুইয়ের গন্ধ উঠছে দেখুন দেখি । বিমলবাৰু বলিলেন—প্রত্যেক বাড়ীতে মদ তৈরি হচ্ছে আজ। পরব কি না ! পরবে ওরা কখনও দোকানের মদ কিনে খাবে না। দেবতাকে দেবে কি না ; দোকানের মদ হ’ল অপবিত্র। আর তা ছাড়া পয়সাও লাগবে বেশী । মদের কথা বলিতে বলিতেই বিমল বাবুর যেন একটা জরুরি কথা মনে পড়িয়া গেল—কথার স্বরে ভঙ্গিমায় গুরুত্ব আরোপ করিয়া তিনি বলিলেন,—ভাল কথা ! এখানে পচুইয়ের দোকান সব চেয়ে কাছে কত দূরে বলুন তো! ঘোষ বিস্ময় বোধ করিয়াও না হাসিয়া পারিল না। হাসিয়া বলিল—হঠাৎ পচুইয়ের দোকানের খোজ ? aधयाजौ v Yego বলিতে বলিতেই ঘোষ বিমলবাবুর মতলবট অনুমান করিয়া লইল, বলিল—বুঝেছি, মেয়া চাই ; মাছ ধরার বাতিক কি-কলকাতার বাবুদের সবারই মশাই! তা আমার বাবুর পুকুরে খুব বড় বড় মাছ-এক-একটা আঠারো সের, বিশ সের, বাইশ সের! বিমল বাৰু বলিলেন-না, মাছ ধরবার জন্তে নয়। আমার কুলী আসবে এখানে। পাগমিল, বক্স মোল্ডিঙের লোক তো এখানে মিলবে না ! অস্তুতঃ ষাট-সত্তর জন কুলি আসবে। পটুইয়ের দোকান কাছে না থাকলে তো অস্থবিধে হবে । বার বার ঘাড় নাড়িয়া ব্যাপারটা উপলব্ধি করিয়া ঘোষ বলিল—এ্যা-ই দেখুন, এই নইলে কি পাকা ব্যবসাদার হওয়া যায়! বটে—মশাই বটে ! দিষ্টি রাখতে হবে চার দিকে । তা পচুয়ের দোকান আপনার একটুকু দূরেই হবে । ক্রোশ দুয়ের কম নয়। তা হ’লে ? বিমলবাবু পকেট হইতে নোটবই বাহির করিয়া সেইথানে দাড়াইয়াই কথাটি নোট করিয়া লইলেন এবং তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন—একট) দোকান স্তাংশন করিয়ে নেব এইখানেই । কল হ’লে তো চাইই । তা আগে থেকেই ব্যবস্থা করে নেব । পথের ধারেই একটি ঘনপল্লব কৃষ্ণচুড়ার গাছের তলায় কতকগুলি সাওতালদের মেয়ে ভিড় করিয়া দাড়াইয়াছিল । গাছটির গোড়ায় স্বন্দর একটি মাটির বেদী, বেদী ও বেদীর সম্মুখের খানিকট জায়গা গোবর ও মাটি দিয়া অপূর্ব পরিচ্ছন্নতার সহিত নিকানো ; বেদীর চারিদিক খড়িমাটির আল্পনা দিয়া চিত্রিত করিয়া তুলিয়াছে। মেয়েগুলি তখনও সম্মুখের নিকানো জায়গাটির উপর খড়িমাটির গোলা দিয়া আলপনার ছবি আঁকিতেছিল ; পার্থী ও পশুর ছবি, তাহার পাশে পাশে খেজুরের পাতার মত দুই পাশে বিপরীতমুখী বাকা বাকা রেখা। ঘোষ ও বিমলবাবুর আলোচনা বন্ধ হইয়া গেল। সারী মেয়েটিও ছিল ওই দলের মধ্যে—সে আগাইয়া আসিয়া বলিল –একটি ধার দিয়ে যা গে। বাবুরা। ই-ঠিনে আমাদের পূজা হবে। কতকগুলা ছেলে মাথায় ফুলওয়ালা গোটাকয়েক লাল রঙের মোরগের পায়ে বাধিয়া দড়ি ধরিয়া বসিয়া