পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(38 লোক! দেখ–তুমি ব্যবসা কর তোমার নিশ্চয় উন্নতি হবে! আমার কাছে যাবে তুমি, তোমাকে আমি সঙ্গে নেব। ব’লে না যেন কাউকে, এই খসখসের ব্যবসা । খসখস বোৰ তো ---খসখস হ’ল বেনার মূল । --বেলার মূল ? —ছা। চুপ কর । সেজ-রায়বাড়ীর হরিশ আসছে। হরিশ রায় সেজ-রায়ুবাড়ীর এক জন অংশীদার । সমগ্র রায়-বংশের সিকির অংশের অধিকারী হইল সেজ তরফ, সেজ তরফের এক আনা অংশের অর্থাৎ ষোল আনা সম্পত্তির এক পয়সা রকমের মালিক হইলেন হরিশ রায় । এই এক পয়সা পরিমাণ জমিদারীর অংশ লইয়া ভদ্রলোক অহরহই ব্যস্ত এবং ঐ কাজ লইয়া তাহার মাথা তুলিবার অবসর থাকে না। কাগজের পর কাগজ তিনি তৈয়ারি করিয়া চলিয়াছেন । জমিদারীর এক কণা জমি যদি কেত আত্মসাতের চেষ্টা করে, “ তবে তাহার আয়নার মজ কাগজে তৎক্ষণাৎ তাহার প্রতিবিম্ব পড়িবেই ! কানে পৈতা জড়াইয়া গাডুহাতে হরিশ রায় একটি দাতন-কাঠি চিবাইতে চিবাইতে নদীর ঘাটে আসিয়া নামিলেন। অচিস্ত্যবাবুকে দেখিয়া মৃদু হাসিয়া বলিলেন —কি রকম, আজ যে এদিকে ? উদাসভাবে অচিস্ত্যবাবু বলিলেন—এলাম ! —ম, মানে, এদিকে তো দেখি নে বড় ! —হঁ্য । বলিয়াই হঠাৎ যেন তিনি আসিবার কারণটা আবিষ্কার করিয়া ফেলিলেন, বলিলেন—চরের উপর কল বসছে কিনা, চিনির কল, স্বগার মিল । তাই বলি দেখে আসি ব্যাপারটা কি রকম হবে । —কল ? চিনির কল ? হরিশ রায়ের বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না –চিনির কল করবে কে মশাই ? এত টাকা কার আছে ? —কাল রাত্রে কলকাতা থেকে মস্ত এক মহাজন এসেছে, সঙ্গে আপনার একটি বস্তা টাকা । আমি আপনার নিজের চোখে দেখেছি । ইন্দ্র রায় মশায়ের ওখানে কাল আমার নেমস্তন্ন ছিল কিনা ! —ইন্দ্র ? তা ইন্দ্র চর বন্দোবস্ত করছে না কি ? —হ্যা। উনিই তো এখন চক্রবর্তী-বাড়ীর সব প্রবাঙ্গী Sege দেখা-শোনা করছেন। বলিয়াই তিনি হাসিয়া ফেলিলেন, বলিলেন—হু –কোনই খোজ রাখেন না আপনার } হরিশ রায় বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়া ঘাড় নাড়িতে নাড়িতে বলিলেন—এই দেখুন—এমন খোজ নাই যা হরিশ রায়ের কাগজে নাই ! বুঝলেন—নবাব মুরশিদকুলিখার আমল থেকে থাক, নক্স, জমাবন্দী, জরিপী খতিমান জমা ওয়াশীল—সব অামার কাছে আছে । কি বলব, পয়সা তেমন নাই হাতে, তা নইলে 'চাকচান্দী’ লাগিয়ে দিতাম আমি । আর আপনার অধৰ্ম্মও করতে চাই না তাই ! যদি একটি কলম আমি খুচি, সব ত্ৰাহি ত্ৰাহি ডাক ছাড়বে। দেখি না, হোক না বন্দোবস্ত! আমরা এতদিন চুপ করেই ছিলাম, বলি– চক্কবতীরা আমাদেরই দৌহিত্র, তা খাচ্ছে থাক। কিন্তু এ তো হবে না মশাই ! অচিন্ত্যবাবু বলিলেন—সে আপনারা যা করবেন করুন গে মশাই । চর তো আজই বন্দোবস্ত হবে । হাসিয়া হরিশ বলিলেন—দেখুন না, বেবাক কাগজ আজ বার করছি। একবারে কড়া-ক্রাস্তি—ময় ধূল পৰ্য্যস্ত মিলিয়ে দেখিয়ে দেব চর কায় ! অচিস্ত্যবাবু ঠিকাদারকে বলিলেন—তা হ’লে, তুমি কখন যাবে বল তো ? সন্ধ্যেবেলা, কেমন ? হরিশ জলের কুলকুচা ফেলিতে ফেলিতে আপন মনেই বলিলেন--কি আর বলব ইন্দ্রকে । লজ্জার ঘাটে আর মুখ ধোয় নাই । ছি ছি ছি! এতবড় কাগুটার পরেও আবার রামেশ্বর চক্ৰবৰ্ত্তীর সম্পত্তির দেখা-শোনা করছে ! ছি । অচিস্ত্যবাৰু মৃদু মুছ হাসিয়া বলিলেন—সেই তো বলছিলাম মশাই, কি খবর আর রাখেন আপনি ? মাটির খবর নিয়েই মেতে আছেন আপনি । মামুষের মনের খবর কিছু রাখেন ? ইন্দ্র রায় পাকা ছেলে । লজ্জার ঘাটে মুখ ধুয়ে বসে থাকলে ইন্দ্র রায়ের কস্তাদায় উদ্ধার হবে ? রায় ঐ রামেশ্বর চক্রবর্তীর ছোট ছেলের সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে দেবে! —বলেন কি ? —আজ্ঞে হ্যা, ঠিকই বলি আমি । চক্ৰৰঞ্জী-বাড়ীকে