পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 هائي প্রবাঙ্গী ye8ჯ ভিত্তি। বর্তমান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কালকে এতটা প্রাধান্ত দিলেন মিনকোস্কি, এবং আইনস্টাইনও স্বীকার করিয়াছেন যে কাজ সম্বন্ধে মিনকোস্কির এই ধারণা ব্যতীত তাহার আপেক্ষিকতাবাদ জন্মলাভও করিত কিনা সন্দেহ । এই দেশ-কাল সংস্থানে একটি বিন্দুকে অর্থাৎ একটি বিশিষ্ট স্থানে একটি বিশিষ্ট ক্ষণকেই ঘটনা আখ্যা দেওয়া হয়। সাধারণ অর্থে একটি ঘটনা হইল একটা প্রাকৃত্তিক সংঘটন যাহা কোন বিশিষ্ট স্থান ও কালের সহিত অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এই দেশ-কাল সংস্থানে দুইটি ঘটনার মধ্যে ব্যবধানের দুইটি উপাদান-প্রথম, স্থান হিসাবে উহাদের দূরত্ব; দ্বিতীয়, কাল সম্পর্কে উহাদের পার্থক্য। এই যে যুক্ত দেশ ও কাল সম্পর্কে দুইটি ঘটনার মধ্যে বিস্তার উহাই তাহাদের মধ্যে সময়ের ব্যবধান বলিয়া গণ্য। মিনকোস্কি ও আইনস্টাইনের এই দেশকালের ধারণা গ্যালিলিয়োর প্রদর্শিত কালের ধারণারই জানিবার্ধ্য পরিণতি । বিশ্বের গতি ও পরিবর্তনই ঘটনার উদ্ভব সাধন করিয়া কালের লীলাভূমিতে পরিণত হয়। ঘটনার উত্থান হইতেছে, আবার তিরোধান হইতেছে, সুতরাং কালও স্থিতিশীল নয়, কালের অপরিহার্য্য লক্ষণই উহার ক্রমপৰ্য্যায়। আমরা কালকে স্থানের সাহায্যে পরিমাপ করি, কিন্তু স্থান হইতে কাল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। যুক্ত দেশকাল সংস্থানের অর্থ এই নয় যে, যাহা বিশিষ্টভাবে কালসম্পর্কিত, দেশ তাহার দ্যোতনা করিতে পারে, অথবা যাহা ৰিশিষ্টভাবে দেশসম্পর্কিত, কাল তাহার স্বচনা করিতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সকল পদার্থের দেশ-কাল সম্বন্ধীয় অবস্থানের প্রতি যতটা দৃষ্টি দেওয়া হইয়াছে, তাহদের পৃথকভাবে সংঘটিত বিশিষ্ট পার্থক্যের প্রতি ততটা নয়। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সাধারণ নির্দেশে বলা হইয়াছে যে, প্রাকৃতিক ঘটনার বর্ণনায় সকল নির্দেশক ক্ষেত্রই একরূপ, উহাদের গতির অবস্থা যাহাই হউক না কেন। এই নির্দেশ হইতে আইনস্টাইন প্রমাণ করিয়াছেন যে, প্রত্যেক মাধ্যাকর্ষণের ক্ষেত্রেই ঘড়িগুলি তাহীদের অবস্থান অনুসারে দ্রুত অথবা ধীরে চলিবে । সুতরাং ঘড়িগুলি যখন নিজ নিজ নির্দেশক ক্ষেত্র অনুসারে নিশ্চল অবস্থায় অবস্থিত, তখন উহাদের সাহায্যে কালের যথার্থ নির্দেশ আীে সম্ভবপর নয়। . আপেক্ষিকতাবাদের প্রচারের দ্বারা আইনস্টাইন বৈজ্ঞানিক জগতে কাল সম্বন্ধে একটা যুগাস্কর সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনিই দৃষ্ট ঘটনাসমূহের অনুভূতিতে দর্শকের অংশ ও বাহ প্রকৃতির অংশ পৃথক করিয়া দেখাইয়াছেন— কোনও পদার্থের অনুভূতি দর্শকের অবস্থান ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। সুতরাং দেশ ও কালের ধারণ দর্শকের পরিমাপক-মানের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল এবং এই মান আবার যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিমাপ করা হইতেছে তাহাদের বিভিন্ন গতির সাপেক্ষ । এই নিমিত্তই বর্তমান বিজ্ঞানের নূতন দিগদর্শনে সমকালীনতা, কালের পৰ্য্যায়ক্রম, প্রভৃতি সম্বন্ধের এমন কোন বাধাধরা অর্থ নাই, যাহা বিশ্বের সর্বত্র সমার্থদ্যোতক বা অপরিবর্তনীয় ; অপরপক্ষে উহার নির্দেশক ক্ষেত্রাতুসা:ে পরিবর্তনসাপেক্ষ । নূতন পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে ম্যাক্সওয়েল হইতে আরম্ভ করিয়া আইনস্টাইন পৰ্য্যস্ত বৈজ্ঞানিকগণের গবেষণার দ্বারা নিউটনের নিরপেক্ষ বা স্বতন্ত্র কালের ধারণা বর্জিত হইয়াছে বটে, কিন্তু সাধারণ গণিতের ক্ষেত্রে নিউটনের নিরপেক্ষ কাল এখনও আধিপত্য বিস্তার করিয়া রহিয়াছে। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাত রব (Robb) ও এডিংটনের বৈজ্ঞানিক গবেষণা সত্বেও পরবর্তী বহু পণ্ডিতের আলোচনার দ্বারা কালের ধারণাকে যেন কল্পনার রাজ্যে লইয়া আসা হইয়াছে এবং কালের সমস্ত অনেকট মনোবিজ্ঞানের সীমানায় আসিয়া পৌঁছিয়াছে।