পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

夺博丽 বিধান দেখা যায়। স্থতরাং এখানেও উভয় টীকাকারের কোন মতবৈষম্য দেখা গেল না। তবে জীধর মাত্র উক্ত লোকটির ব্যাখ্যা করিয়াই নিরস্ত হইয়াছেন, শ্ৰীজীব অপর শাস্ত্রীয় বচনের সহিত সমন্বয় বা বিরোধ পরিহারের চেষ্টা করিয়াছেন। এতদ্বার গ্রীধরের মত মান হয় নাই, এ কথা বলা চলে না। সুতরাং চৈতন্যচরিতামৃত হইতে উদ্ধত “প্ৰভু হাসি কহে" ইত্যাদি উক্তিটিকে চৈতন্তদেবের উক্তি বলিয়া গ্রহণ করার বিপক্ষে গ্রন্থকার যে সকল যুক্তি ও প্রমাণ উপস্থিত করিয়াছেন, তাহার মূলে কোন সত্য নাই । এইরূপ কিছু কিছু ত্রুটি ও মূদ্রীকর-প্রমাদ-জনিত ভ্ৰম গ্রন্থমধ্যে দেথা গেলেও গ্রন্থখানি সুধীজনসমাজে সমাদর লাভ করিবে, ইহা আমরা আশা কল্পি t ঐতারাপ্রসন্ন ভট্টাচাৰ্য্য ধাত্রী দেবতা-ঐতারাশঙ্কর বলোপাধ্যায় প্রণীত এবং কলিকাতা, ২৫২ মোহনবাগান রে হইতে রঞ্জন পাবলিশিং হাউস কর্তৃক প্রকাশিত। মূল্য তিন টাকা। আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ছোটগল্পের ক্ষেত্রে শ্ৰীযুক্ত তারাশঙ্কর বন্যোপাধ্যায়ের নাম সুপরিচিত। ইহার পূর্বে উপন্যাসও তিনি রচনা করিয়াছেন। ছোটগল্পের স্থষ্টিতে যে শক্তি প্রদর্শন করিয়া লেখক উচ্চস্থান অধিকার করিয়াছেন, উপস্কাস রচনায় তাহারই সবল এবং সাবলীল বিকাশ দেখিয়া আমাদের সহিত বঙ্গসাহিত্যের পাঠকবর্গও আনন্দ লাভ করিবেন । বর্ণন, চরিত্রস্থঃ এবং গল্পের পরিকল্পনায় উপন্যাসখানিতে যে অভিনবত্ব প্রকাশ পাইয়াছে, তাহ আমাদের ক্ষণে ক্ষণে সচকিত করিয়া তোলে । বিগত পচিশ বৎসরের মধ্যে বাংলা দেশ ছাপাহয়। সমগ্র ভারতবর্ষে দেশাত্মবোধের যে প্রবল আলোড়ন দেখা দিয়াছে আধুনিক সাহিত্যে তাহার সাক্ষাৎ পরিচয় কদাচিৎ মেলে । “ধাত্রী দেবতা"য় সে পরিচয় সুপরিস্ফুট । “বাংলা দেশের কৃষ্ণtভ কোমল উর্বর ভূমিপ্রকৃতি বর্তমাণ বিহারের প্রান্তভাগে বীরভূমে আসিয়া অকস্মাৎ রূপাগুর গ্রহণ করিয়াছে । রাজরাজেশ্বর অন্নপুর্ণ ধড়ৈস্বৰ্য্য পরিত্যাগ করিয়া যেন ভৈরবীবেশে তপশ্চৰ্য্যায় মগ্ন।” এই ভূমিপ্রকৃতির সহিত গল্পের নায়ক শিবনাথের মন যেন জড়াইয়া আছে। প্রতিপক্ষ দলের ছেলেদের সহিত দলপতি রূপে বালক শিবনাথের মারামারি, জয়লাভ এবং বাড়ীতে গোপনে হেঁড়োলের বাচ্চ। ধরিয়৷ আনা হইতে উপস্তাসের আরম্ভ এবং আরম্ভ হইতেই এই বালকবীয় আমাদের মন জয় করিয়। লয় । কিশোরী গৌরী ও ত{হার পারিপার্শ্বক অবস্থা অতি স্বাস্তাবিক ভাবে চিত্রিত হইয়াছে । স্নেহময়ী মার পাশে নারীমুলপ্ত বিপুল অভিমানে ভরা পিসীমার স্বকোমল অথচ দৃঢ়, দৃপ্ত ও মহনীয় চরিত্রটি চমৎকার ফুটয়াছে। গৌরীর সহিত শিবনাথের বিচ্ছেদের করণ এবং মিলনের করুণতর কাহিনীটির সহিত মিলিয়া ঘটনার অবাধ প্রবাহ এই চারি শতাধিক পৃষ্ঠাব্যাপী সুবৃহৎ উপন্যাসখানিকে প্রচুর ভাবে উপভোগ্য করিয়া তুলিয়াছে। “ধাত্রী দেবতা” বাংলার রসসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করিবে । প্রাচীন হিন্দুস্থান—গ্রপ্রমথ চৌধুরী প্রণীত এবং কলিকাতা, ২১ • কর্ণওয়ালিস স্ট্রীট, বিশ্বভারতী গ্রন্থন-বিভাগ হইতে প্রকাশিত। মূল্য আট আন।। বিশ্বতারউী লোকশিক্ষা গ্রন্থমালার প্রকাশে ব্ৰতী হইয়াছেন । এখানি তাহারই অন্তর্গত । ফুসসাহিত্যপ্লাবিত বঙ্গদেশে জ্ঞানgর প্রয়োজন একান্ত। ভূমিকায় রবীন্দ্রনাথ বলিতেছেন, “গল্প পুস্তক-পরিচয় மூனுகு, এবং কবিত। বাংলা ভাষাকে অবলম্বন করে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে ৮ তাতে অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত মনে মননশক্তির দুর্বলতা এবং চরিত্রেয় শৈথিল্য ঘটবার আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।" ইহার প্রতিকার সৰ্ব্বাঙ্গী৭ শিক্ষায়, বিশেষভাবে—বিজ্ঞান-চর্চায় । “শিক্ষণীয় বিম্বর মাত্রই বাংলা দেশের সর্বসাধারণের মধ্যে ব্যাপ্ত করে দেওয়াই এই অধ্যবসায়ের উদ্দেপ্ত।" প্রাচীন হিন্দুস্থান যে নিজের ক্ষেত্রে সেই উদেহু সাধনে সফলতা লাভ করিয়াছে তাহাতে সনেহ নাই । খ্ৰীযুক্ত প্রমথ চৌধুরী একাধারে রসরচয়িত, কথাশিল্পী, কবি ও । চিন্তাশীল লেখক। তাহার রচনারীতি অনন্তসাধারণ । সেই নিজস্বভঙ্গীটি এই গ্রন্থে সুপরিস্ফুট । ‘প্রাচীন হিন্দুস্থানের দুটি ভাগভুবৃত্তান্ত ও ইতিবৃত্তান্ত । ইতিহাস যেখানে সাহিত্য হইয়াছে বাংলা ভাষায় এরূপ গ্রন্থ একেবারে দুলভ নয়, কিন্তু ভৌগোলিক বিবরণ যে রচনাগু৭ে সাহিত্যপদবাচ্য হইতে পারে, পুস্তকের প্রথম ভাগ তাহার অ-পূৰ্ব্ব উদাহরণ। গ্রন্থকার বলিতেছেন, "জিওগ্রাফি বিজ্ঞানের অন্তভূক্ত, সাহিত্যের নয় . কিন্তু জিওগ্রাফিকে সাহিত্যের ছাচে ঢাল} প্রয়োজন।” সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ গুণ উপভোগ্যতা । কঠিন তথ্যকে সরস সাহিত্যে রূপান্তরিত করা সাধারণ শক্তির কাজ নয়। এই ভু বিবরণ যে শুধু সাধারণ বুদ্ধির উপযোগী এবং সাধারণের উপভোগ্য তাহ নয়, এ বৃত্তান্ত পাঠে বিশেষজ্ঞের পক্ষেও আনন্দ লাভ সম্ভব । শব্দপ্রয়োগের কৌশলে এবং ভঙ্গিমার চাতুৰ্য্যে নীরস ও নিরুজ্জ্বল তথ্যগুলিও ক্ষণুে ক্ষণে প্রদীপ্ত হইয়া উঠিয়াছে । “আগ্নেয়গিরি হতে যে গলা পাথরের উদগম হয়েছে, তাই হচ্ছে দক্ষিণাপথের মাটি । উত্তরাপথ বরুণ দেবতার স্বষ্টি দক্ষিণাপথ অগ্নিদেবতার। এই দুই মাটি এক জাতের নর, এবং এ দুয়ের ধৰ্ম্ম এক নয়।" গত শতাব্দীর শেষার্দ্ধে বৈজ্ঞানিক হাক্সলি বিলাতের শিক্ষাসংস্কারকার্ধ্যে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি দেখাইয়াছিলেন, জ্ঞানের গভীরতা রচনাকে সহজবোধ ও সাধারণের জ্ঞানগম্য করে, অল্প বিদ্যাই বিষয়বস্তুকে মুকঠিন করিয়া তোলে। গ্রন্থের ইতিবৃত্তান্ত অংশে ভারতের প্রাচীন ইতিহাস মনোরমভাবে বর্ণিত হইয়াছে । পুরাকথা জানিতে ইহা পাঠকের মনকে উক্তি করিবে । প্রাচীন হিন্দুস্থান গ্রন্থমালার দ্বিতীয় গ্রন্থ। প্রথম গ্রন্থ রবীন্দ্রনাথের পথের সঞ্চয়' । বিশ্বভারতীর লোকশিক্ষাব্রত সফল হোক । শ্রীশৈলেন্দ্রকৃষ্ণ লাহ। বিশ্বকৰ্ম্মকুলচন্দ্রিকা—অথবা বিশ্বকৰ্ম্মকুলজ পাঞ্চলে ব্ৰাহ্মণগণের ইতিহাস । প্রথম খণ্ড । পণ্ডিত অমূল্যচরণ শৰ্ম্ম, শাস্ত্রভূষণ কর্তৃক সঙ্কলিত। ৪২ নং ষ্ট্রাণ্ড রোড, কলিকাত। মূল্য চারি আনা । পৃ. ১৬+৩০ ৷ গ্রন্থকার শাস্ত্রীয় গ্রস্থাধি হইতে প্রমাণ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন যে লৌহকার, সুত্রধর, কাংস্তকার, ভাস্কর এবং স্বর্ণকারগণ শূদ্রবর্ণের অন্তর্গত নছেন, র্তাহাম্বের আসল বর্ণ ব্ৰাহ্মণ । আগামী ১৯৪১ খ্ৰীষ্টাব্দের আদমসুমারিতে বাহতে উল্লিখিত জাতিসমূহ নিজেদের জাতি বিশ্বব্রাহ্মণ বলিয়া জ্ঞাপন করেন ইহার জন্ত তিনি অমুরোধ করিয়াছেন । লেখকের যুক্তি অল্পসংখ্যক ক্ষেত্রে সারগর্ভ ন হইলেও উহার অন্তান্ত প্রমাণগুলি ফেলিবার মত নন্থে । আমরা উহার উদ্দেশ্যের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন। যদি সকল হিন্দুই আজ ব্রাহ্মণ হইতে চান তাহাতেও আপত্তি করিবার স্থায়সঙ্গত কারণ নাই । স্বামী বিবেকানন্দের সেইরূপ ইচ্ছা ছিল। মহাত্মা গান্ধী বলেন, পয়াধীন দেশে সকলেই দাস, সকলেই শূত্র। প্রকৃত ব্রাহ্মণ ৰাক্ষ। সম্ভব নয়।