পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাস্তুন মানুষের সত্য ব্যবহার প্রতিষ্ঠিত হ’ল। মনের এত বড়ো পরিবর্তন তখনি সম্ভব হ’ল যে মুহূতে মানুষ প্রমাণ পেয়েছে বিশ্ববিধানে কার্যকারণের নিয়মশৃঙ্খলায় কোনো ব্যতিক্রম নেই। প্রকৃতির সঙ্গে মামুষের এইথানেই হ’ল নির্ভরযোগ্য যোগ । সে বুঝেছে এই যোগ কোনো অলৌকিক শক্তির প্রসাদের অপেক্ষা করে না । এইখানেই মানুষের অভয়, তার বিশ্বজয়ের পথ । এথন থেকে জানা গেল জীবনযাত্রায় যার জ্ঞানের বিশুদ্ধ সাধনাকে সম্মান দিয়েছেন “তে সবগং সর্বত: প্রাপ্য ধীর। যুক্তাত্মান: সর্বমেবাবিশন্তি” তারা বিশ্বনিয়স্তাকে সকল স্থান থেকেই প্রাপ্ত হয়ে তার সঙ্গে যোগে সর্বত্রই প্রবেশ করেন । বুদ্ধির যোগ—জলে স্থলে শূন্যে সর্বত্র মানুষের বুদ্ধিধর্মের জয় । এই যোগ অাপন প্রবেশাধিকারে ভয়ের লোভের অক্ষম দুর্বলতার অন্ধকার গুহ ! থেকে কোনে। কাল্পনিক দেবতা উপদেবতার অপচ্ছায়া অস্বাভাবিক মূতি ধ’রে বুদ্ধির আলোককে আর কোনো দিন আচ্ছন্ন করতে পারবে না ; প্রকৃতির সঙ্গে ব্যবহার মানুষের জানার সত্যত দ্বারাই অমুকুল হবে, স্তবে তুষ্ট কোনো দেবতার ইচ্ছাকৃত অনিয়ম ঘটানোর দ্বারায় নয় । ক্রমশই মাহুষের শক্তি করছে মুক্তিলাভ । তাই সমস্ত সভ্যদেশে সত্য প্রণালীতে প্রকৃতিকে জানার এই অধ্যবসায় প্রবৃত্ত রয়েছে নিরস্তর। দূর হয়ে গেছে সম্মোহনের প্রতি দুর্বল ভীরু বুদ্ধির বিশ্বাস । প্রকৃতি র ক্ষেত্রে এই জানার সত্য পথেই কেবল ভারতবর্ষে আমাদের রক্তের মধ্যে এমন একটা মুগ্ধতা আছে যে শিক্ষাসত্ত্বেও প্রকৃতির ক্রিয়ার মধ্যে নিয়মের অমোঘতার প্রতি বিশ্বাস আমরা দৃঢ় রাখতে পারি নে, অন্ধ সংস্কার আমাদের বুদ্ধিকে পরিহাস করতে থাকে জাদুর প্রলোভন দেখিয়ে। তাকেই আমরা সনাতন ধম বিধান ব’লে মনে করি, জানি নে এই হ’ল তমসাচ্ছন্ন নাস্তিকতা । অথচ উপনিষদে বলছেন, স্বয়স্কৃযাথাতথ্যতোইথান বাদধাং শাশ্বতীভ্য: সমাভ্যঃ, অর্থাৎ আপনা হতে আপনি যার উদ্ভব তিনি নিখিল বিশ্বের অর্থ সকল বিধান করছেন যথাযথ নিয়মে নিত্যকাল থেকে নিত্যকালের জন্য । হঠাৎ পূর্ণের সাধনা tులి: কিছুই হচ্ছে না । এই যে নিত্যকালের যথাতথ নিয়ম এই কথাই তো আধুনিক বিজ্ঞানের। এই যথাতথ নিয়মের মধ্যেই তো মামুষের বুদ্ধির যোগ সত্য। অথচ ভারতবর্ষ জুড়ে ঘরে ঘরে শত শত নিরর্থক অনুষ্ঠান এই যথfতথ শাশ্বত বিধানের প্রত্যহ প্রতিবাদ করছে । পঞ্জিকার পুথিতে তার লজ্জা পুঞ্জীভূত । এই যেমন বিশ্বনিয়স্তার সঙ্গে যোগে নিয়মের জগতে বুদ্ধিধমের মুক্তি তেমনি বিশ্বাত্মার সঙ্গে যোগে তার আর এক পরম মুক্তির অপেক্ষা আছে । এই মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন ভিন্ন নামে প্রথম থেকেই মানুষকে পথে অপথে ঘুরিয়ে বেড়িয়েছে। মামুযের আদিম প্রবৃত্তির মধ্যে জোর জবরদস্তির উপর একটা বিকট বিশ্বাস আছে । এই জন্যে পুরাকালের চিকিৎসা-প্রণালীতে ঝাড়তুকের উপসর্গ নিয়ে ওঝার উপদ্রব ছিল নিদারুণ ৷ এক কালে মামুযের তেমনি বিশ্বাস ছিল, এবং এখনো সে বিশ্বাস সম্পূর্ণ যায় নি যে দেহপ্রকৃতিকে পীড়িত ক’রে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বিকৃত ক’রে মনকে কষ্ট দিয়ে আত্মাকে তার গোপন গুহা থেকে যেন ছিনিয়ে আনা যেতে পারে । একদা নিজের বিশেষ প্রয়োজনে বিশ্বব্যাপারের বাক ফিরিয়ে দেবার চেষ্টায় জাদুক্ৰিয়ার উপর যখন মানুষের নির্ভর ছিল তখনি আধ্যাত্মিক সাধনাতেও বাহ সুষ্ঠানের কৃচ্ছসাধ্যপ্রণালীর উপর তার বিশ্বাস ছিল দৃঢ় । অবশেষে তার থেকে মানুষের ছাড়া পাবার দৃষ্টাস্ত বুদ্ধদেবের জীবনে দেখেছি । তিনি অস্বীকার করলেন । তপস্যায় কুচ্ছ সাধনকে তেমনি ভারতবর্ষে জ্ঞানীরা এ কথা বললেন যে যথার্থ সাধন উপকরণে নয়, কষ্টদায়ক কোনো প্রণালীতে নর, সে সাধনা সত্যে ত্যাগে দয়ায় ক্ষমায় । এই সমস্ত চারিত্রগুণের সর্বপ্রধান ধম এই যে এরা মানুষের সঙ্গে মাকুযকে মেলায়, নইলে এদের আর কোনো অর্থই নেই । এই মিলনের সাধনাই মানুষের ধম সাধনা। অন্য সকল বাহ আচার-অনুষ্ঠান মামুষের চার দিকে সম্প্রদায়ের গত্তি টেনে তাকে বিচ্ছিন্ন ক’রে রাথে । এই হচ্ছে মানবধমের বিরোধিতা । মহাভারতে বলেছেন—ন বারিণ। শুধ্যতি চাস্তরাত্ম-জলে ডুব দিয়ে কখনো অস্তরাত্মা শুদ্ধ হয় না। যদি বলি, হয়, তাহলে