পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাস্তুন বিশ্বপ্রাণস্রোত হইতে যে-সব প্রাণশক্তি তাহার মধ্যে প্রবেশ করিতেছে, মানুষ যে সে-সবকে গ্রহণ ও ধারণ করিতে পারিতেছে না, ফেলিয়া দিতেছে, এই শারীরিক অস্থিরতাই তাহার প্রমাণ। হঠযোগী আসন অভ্যাস করিয়া এই অস্থিরতা দূর করেন এবং দেহকে অসাধারণ স্বাস্থ্য ও শক্তি প্রদান করেন। এই অভ্যাসের দ্বারা মানুষ মাধ্যাকর্ষণের শক্তিকেও অনেকখানি জয় করিতে পারে। ইহা ব্যতীত নানারূপ প্রক্রিয়ার দ্বারা হঠযোগী শরীরকে সকল প্রকার ময়লা ও ক্লেদ হইতে মুক্ত করেন, যেন প্রাণায়াম অভ্যাসের সমস্ত বাধা দূরীভূত হয় । এইবার একটি প্রক্রিয়ার একটি দৃষ্টান্ত হইতেছে ধৌতি । প্রাতঃকালে যোগী ঈষদুষ্ণ জল প্রচুর পরিমাণে পান করেন, তাহার পর একটি কচি কঞ্চি বা বস্ত্রখণ্ড পাকস্থলী পর্য্যন্ত প্রবেশ করাইয়া সেই জল বমি করিয়া ফেলেন । হঠযোগী প্রত্যহ প্রাতঃকালে এইরূপ বমন করেন, পাকস্থলীতে অজীর্ণ খাদ্য, পিত্ত প্রভৃতি কত ময়লা সঞ্চিত হইয় থাকে এই বমন হইতেই তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। এইরূপে গুহ্যদ্বার দিয়া জল টানিয়া লইয়াও হঠযোগী অস্ত্র পরিষ্কার করেন । এই সব প্রক্রিয়ার দ্বারা শরীর নিৰ্ম্মল হইলে হঠযোগী প্রাণায়াম অভ্যাস করেন এবং এইটিই হইতেছে র্তাহার সর্বাপেক্ষ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া । দেহের মধ্যে প্রাণশক্তির প্রধান ক্রিয়া হইতেছে শ্বাসপ্রশ্বাস, ইহাকে নিয়ন্ত্রিত করিয়াই যোগী প্রাণকে বশীভূত করেন। প্রাণায়ামের দ্বারা হঠযোগী দুইটি উদ্দেশু সিদ্ধ করেন । প্রথমতঃ, ইহা দ্বারা দেহের সিদ্ধিলাভ হয় । অনবদ্য স্বাস্থ্য, স্থায়ী যৌবন এবং অসাধারণ দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। সাধারণতঃ দেহরক্ষার জন্য প্রকৃতির যে-সব প্রয়োজন যোগী তাহাদের অনেকগুলি হইতেই মুক্ত হন। অন্যপক্ষে প্রাণময় কোষে যে কুণ্ডলিনী শক্তি স্বপ্ত রহিয়াছে প্রাণায়ামের দ্বারা তাহা জাগ্রত হয় এবং যোগীর পক্ষে নূতন নূতন চৈতন্তের স্তর খুলিয়া বায়, যোগী নানারূপ অসাধারণ শক্তি লাভ করেন এবং সাধারণ শক্তিসকলও তাহার মধ্যে বিশেষ ভাবে বৰ্দ্ধিত इड्रेम्न छेदॐ । হঠযোগ ও রাজযোগ Wedł হঠযোগের সিদ্ধিগুলি খুব চমকপ্রদ। কিন্তু ইহার দোষ হইতেছে, এই যোগ সাধনায় এত শক্তি ও সময় দিতে হয় যে মানুষকে তাহার সাধারণ জীবনযাত্রা হইতে সরিয়া যাইতে হয়, আর দুই-চারি জন লোক ঐৰূপ শক্তি লাভ করিলেও সাধারণ মানবজাতির কোন লাভই হয় না । কঠিন সাধনা দ্বারা হঠযোগ কয়েক জন লোকের পক্ষে যাহা সম্ভব করিয়াছে, প্রকৃতি এক দিন সমগ্র মানবজাতির পক্ষেই তাহ সহজ ও সাধারণ জিনিষ করিয়া তুলিবে, প্রকৃতির সেই কাৰ্য্যে যাহাতে আমরা ব্যক্তিগত সাধনার দ্বার সাহায্য করিতে পারি তাহাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবে সকল প্রকার সাধনার জন্যই শরীরের স্বাস্থ্য ও শক্তি প্রয়োজন, শরীরমাদ্যং খলু ধৰ্ম্মসাধনম্। শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখিবার জন্য আমরা প্রয়োজনমত হঠযোগ হইতে সহজ প্রণালী কিছু গ্রহণ করিতে পারি। বিশেষ করিয়া শরীরকে সকলরকম ময়লা ও ক্লেদ হইতে মুক্ত রাখিবার জন্য হঠযোগীর যে সাবধানতা আমরা তাহা অমুসরণ করিতে পারি। ইহার জন্য প্রথম প্রয়োজন আহার সম্বন্ধে সংযম পালন, কারণ শরীরের অধিকাংশ বিয ও রোগই আহারের অনিয়ম হইতে উৎপন্ন হইয়। থাকে। কত অল্প আহারে আমাদের শরীর সুস্থ ও সবল থাকে তাহী অনেকেই জানেন না-অভ্যাসের বশে অনাবশ্যক পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করিয়াই তাহারা দেহকে নানা রোগে বা অপ্রয়োজনীয় মেদে ভারাক্রাস্ত করিয়া তোলেন। প্রাণায়াম ঠিক মত করিতে পারিলে স্বাস্থ্যরক্ষার অনেক সাহায্য হইতে পারে বটে, কিন্তু প্রাণায়াম ছাড়িয়া দিলেই শরীর সাংঘাতিক ভাবে ভাঙিয়া পড়িতে পারে। অতএব যাহারা সংসার ত্যাগ করিয়া সাধু সন্ন্যাসী হইবেন না তাহাদের পক্ষে এই সব অভ্যাস না করাই ভাল । রাজযোগের উদ্দেশু উচ্চতর । শরীরের সিদ্ধি নহে, পরস্তু মনের মুক্তি ও সিদ্ধি, হৃদয়ের উৎকর্ষসাধন, চিন্তা ও চৈতন্যের সকল প্রক্রিয়াকে সংযত করা—ইহাই হইতেছে রাজযোগীর লক্ষ্য। তিনি প্রথমেই দৃষ্টি দেন চিত্ত বা মানস চৈতন্যের উপরে। হঠযোগী যেমন দেহকে স্থির ও শুদ্ধ করিতে চান, রাজযোগী তেমনিই প্রথমে