পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোসাপের মুখ। বড় করিয়া দেখানো হইয়াছে যাইতে পারে। বর্তমান যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন জাতীয় অতিকায় টিকটিকি দেখিতে পাওয়া যায়। কোন কোন অতিকায় টিকটিকির গাত্র-চৰ্ম্ম বিচিত্র বর্ণে রঞ্জিত। কাহারও গাত্রবর্ণ হরিদ্রাভ, আবার কাহারও বা বর্ণ ধূসর, বৈচিত্র্যবর্জিত। বিভিন্ন শ্রেণীর অতিকায় টিকটিকির প্রায় দুই ফুট আড়াই ফুট হইতে আঠারোউনিশ ফুট পৰ্য্যন্ত লম্বা হইয়া থাকে। মুণ্ড দ্বীপই বোধ হয় এই জাতীয় বৃহত্তম জানোয়ারদের আবাসভূমি । ঐ দ্বীপপুঞ্জের কমোডো নামক স্থানে মাঝে মাঝে আঠারোউনিশ ফুটেরও বেশী লম্বা এক-একটা অতিকায় টিকটিকি দৃষ্টিগোচর হইয়া থাকে। এইরূপ এক-একটা প্রকাও জানোয়ার দেখিয়া সে-দেশীয় লোকের মনে অস্বাভাবিক ভীতিসঞ্চার হওয়া আশ্চর্য্য নহে। এইরূপ আতঙ্কের ফলেই হয়ত ইহাদের সম্বন্ধে নানা প্রকার অলৌকিক কাহিনীর উদ্ভব হইয়াছিল। আকৃতি যতই ভীষণ হউক না কেন, ইহারা সাধারণতঃ অতি নিরীহ প্রকৃতির জীব। অবশ্য অষ্ট্রেলিয়ার কোন কোন অঞ্চলে উগ্র প্রকৃতির দুই-এক জাতের অতিকায় টিকটিকিও বিরল নহে । আমাদের দেশেও এই অতিকায় টিকটিকির অভাব নাই। এদেশে ইহারা গোসাপ বা গোধিকা নামে পরিচিত। কেবল জিবটি ছাড়া সাপের সঙ্গে ইহাদের দৈহিক কোন সামঞ্জস্য নাই । গোসাপের জিব ঠিক ડહેડ সাপের জিবের মত দুই ভাগে বিভক্ত এবং সাপ যেমন কিছু ক্ষণ পরে পরেই জিব বাহির করিয়া থাকে, ইহাদের স্বভাবও ঠিক সেইরূপ । ইহাদের গলাও টিকটিকি বা কুমীরের মত থাটো নহে । সাপ যেমন ফণা বিস্তার করিবার সময় মাথা উচু করিয়া এদিকওদিক চাহিয়া দেখিতে পারে, ইহারাও সেইরূপ লম্বা গল উচু করিয়া মাঝে মাঝে চতুর্দিকের অবস্থা পৰ্য্যবেক্ষণ করিয়া থাকে । এই দুইটি বিষয়ে সাদৃশ্বের জন্তই বোধ হয় ইহার গোসাপ নামে পরিচিত হইয়াছে। আমাদের দেশে বনে-জঙ্গলে নালা-ডোবায় সচরাচর দুই জাতের গোসাপ দেখিতে পাওয়া যায় । ধূসর বর্ণের এক জাতের গোসাপ বনে-জঙ্গলে, এমন কি লোকালয়ের আশেপাশে ও অহরহই পড়িয়া থাকে। ইহার স্থলচর জীব এবং সাধারণতঃ তিন-চার ফুটের বেশী লম্বা হয় না। আর এক জাতের উভচর গোসাপ আমাদের দেশে দেখিতে পাওয়া যায়, তাঙ্গদের আকৃতি সত্য সত্যই ভীতি-উৎপাদক । লম্বীয় ইহারা ছয়-সাত ফুটেরও বেশী হইয়া থাকে । ইহাদের শরীরের রং হরিদ্র ভ। পিঠের উপর ঘন কৃষ্ণবর্ণের ছাপ । লেজের আগাগোড়া কালো ও হলদে রঙের নজরে গোসাপ পার্থী শিকার করিয়াছে। পালক-সমেত পাথটাকে আস্ত গিলিয়া ফেলে।