পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিৰ্ম্মোক “বনফুল” দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ y ছয় মাসের মধ্যে দেখিতে দেখিতে বিমলের প্র্যাকটিস জমিয়া উঠিল । সব দিক দিয়াই সুবিধা হইয়া গেল । হাসপাতালে ঔষধের অভাব নাই, রোগী অনেক আসিতেছে এবং তাহদের মুখে মুখে বিমল ডাক্তারের নাম চতুদিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছে । নন্দী মহাশয় এবং বদিবাৰু তো বিমলের পক্ষে আছেনই, হাসপাতাল-কমিটির অন্তান্য সদস্তগণও তাহার উপর প্রসন্ন হইতেছেন । এমন কি হরেন বোস এবং চৌধুরী মহাশয়েরও উগ্রভাবট যেন অনেকটা কমিয়া আসিয়াছে। আর কিছু নয়, ইংরেজীতে যাহাকে বলে “ট্যাক্টু” অর্থাৎ লোক পটাইবার ক্ষমতা তাহ যে বিমলের যথেষ্ট পরিমাণে আছে, সেবিষয়ে সন্দেহ করিবার আর অবকাশ নাই। কোন রকমে চৌধুরী মহাশয়কে আয়ত্ত করিতে পারলেই যে হরেনবাবুও তাহার আয়ত্তাধীন হইয়া পড়িবেন, তাহা বিমল বুঝিয়াছিল । এক দিন স্থযোগও ঘটিয়া গেল। চৌধুরী মহাশয়ের ছোট নাতিটি পীড়িত হইয়া পড়িল । বছর-দেড়েক বয়স । ভয়ানক জর । সাধারণতঃ জগদীশবাবুই চৌধুরী মহাশয়ের বাড়ীতে অসুখ হইলে দেখেন, এবারও তিনি দেখিতেছিলেন । কিন্তু বিমলের সৌভাগ্যক্রমে শিশুটির অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হইতে লাগিল। জগদীশবাবু শঙ্কিত হইয়া পড়িলেন, বলিলেন–বিমলবাবুর মাইক্রসকোপ আছে, ওঁকে ডেকে রক্তটা এক বার পরীক্ষা করিয়ে নিন। স্ববিধে যখন রয়েছে— সিভিল সার্জনের সহিত জগদীশবাবুর গোপনে কি কথাবাৰ্ত্ত হইয়াছে তাহা অজ্ঞাত, কিন্তু আজকাল জগদীশবাবু প্রায়ই বিমলের মাইক্রসকোপের সাহায্য লইতেছেন। প্রবীণ চিকিৎসক জগদীশবাবু আর একটা কথাও হৃদয়ঙ্গম করিয়াছিলেন বোধ হয়। চিকিৎসাব্যাপারে দায়িত্বটা যত ভাগাভাগি হইয়া যায় ততই মঙ্গল । তিনি রক্তপরীক্ষা করিতে বলিয়া চলিয়া গেলেন। কিন্তু চৌধুরী মহাশয় হরেন বোসের সহিত এ-বিষয়ে পরামর্শ করিতে করিতে বড় দেরি করিয়া ফেলিলেন এবং তাহাও বিমলের পক্ষে ভারি স্ববিধাজনক হইল । সঙ্গে সঙ্গে ডাকিলে বিমল হয়ত আসিয়া রক্তই পরীক্ষা করিত এবং কিছুই পাইত না । কিন্তু দেরি করিয়া ডাকার ফলে ডিপথেরিয়ার লক্ষণসমূহ বেশ প্রকট হইয়া উঠিয়াছিল, বিমল রক্ত পরীক্ষণ না করিয়া গলা পরীক্ষা করিল এবং গলা হইতে একটা ‘সোয়াব’ লইয়া দেখিতেই ডিপথিরিয়া ধরা পড়িল । গ্রহ যখন প্রসন্ন হন এমনই হয়। সৌভাগ্যক্রমে ডিপ থিরিয়ার প্রতিষেধক ‘সিরামও সে সম্প্রতি ডাক্তারখানায় আনাইয়াছিল। এত দামী ঔবধ এ সব হাসপাতালে সাধারণতঃ থাকে না, তবু যদি কখনও দরকার পড়ে এই জন্য বিমল দুইট টিউব আনাইয়। রাখিয়াছিল । অপ্রত্যাশিত ভাবে সেগুলি কাজে লাগিয়া গেল। চৌধুরীর নাতি যখন ভাল হইয়া গেল তখন গদগদ চৌধুরী বিমলকে বলিলেন— এ ঋণ আমি কখনও শুধতে পারব না ডাক্তারবাবু, তবু আপনার পারিশ্রমিক কত দিতে হবে, সেটা অনুগ্রহ ক'রে বলুন । বিমল হাসিয়া বলিল—আপনার কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেব কি ! কিছু দিতে হবে না আপনাকে । —না, না, এত মেহনৎ করলেন আপনি । —কিছু না, এটা তো আমার কৰ্ত্তব্য করেছি মাত্র। সবার কাছেই কি আর পয়সা নেওয়া চলে, আপনারা হলেন ঘরের লোক-—