পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૧શન গায়ে হাত বুলাইম্বা মিষ্টান্নাদি খাওয়াইয়া বিদায় দিলেন । তাহাকে বলিয়া দিলেন, “মধ্যে মধ্যে তুমি আসিয়া আমার কাছে খাইও । খাওয়া দেখিতে আমি বড় ভালবাসি।” জীবনের শেষভাগে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাহার যতই মতভেদ হউক তৰু ছোট ভাইয়ের প্রতি তাহার স্নেহের আর সীমা ছিল না। ৭ই পৌযে, ১লা বৈশাখে মন্দিরে উপাসনার পর, যখন রবীন্দ্রনাথ তাহার বড়দাদার কাছে যাইতেন তখন র্তাহার সেই স্নেহউচ্ছ্বাস যিনি প্রত্যক্ষ করিয়াছেন তিনিই আমার কথা বুঝিবেন। রবীন্দ্রনাথের ভবিষ্যৎ যে অশেষবিধ মহিমায় পূর্ণ তাহা তিনি বহু পূৰ্ব্বে আপন “যৌতুক না কৌতুক” কবিতার পরিশেষে বলিয়া গিয়াছেন শর্বর গিয়াছে চলি ! দ্বিজরাজ শূন্তে এক পড়ি প্রতীক্ষিছে রবির পুর্ণ উদয় –কাব্যমাল, পৃ. ৫• নিম্প্রয়োজন হইলেও এখানে তাহার একটি প্রভাতবর্ণনা উদ্ধৃত করিবার লোভ সম্বরণ করিতে পারিলাম নস্নিগ্ধ অতি এই কাল নাহি কোন গোলমাল নিন্তব্ধ ব্ৰহ্মাণ্ড সমুদয়, ঝোপ ঝাপে অন্ধকার, লতাপাত হিমবিলুময় । পরপরে যার দেখা, যেন এক চিত্ৰলেখা পশ্চিম দিগন্তে নভঙ্গীর । গাছে গাছে একাকার মাঝে মাঝে রহে আয় দেবালয় প্রাসাদ কুটীর । শাখা পত্র চুলাইয়া বুলাইয়া মাঠ ময়দান মৃদুমন্দ বায়ু বহে মনে মনে দ্বিজ কহে অtহা কি মুনীর এই স্থান । —কাব্যমালা, “বরাহনগর উষ্ঠানে", পৃ. ১১, ১১১ ৷ র্তাহার চরিত্রের মধ্যে সকলের উপরে হইল তাহার একটি অনাসক্ত ভাব । হংসের মত তিনি জলে বাস করিতেন, অথচ তাহার পাখা কখনও ভিজিত না। ইহাকে ইংরাজীতে বলিতে গেলে aloofness বলিতে হয়। সংসারের মধ্যে থাকিয়াও তিনি বহু দূরে। আমাদিগকে ছোট ছোট পত্র লিখিয়া তিনি দিনের মধ্যে বহুবার পাঠাইতেন, তাহাতে অনেক সময় তিনি “দ্বিজ” কথার পক্ষী অর্থ ধরিয়া পত্রের নীচে একটি নভস্থল পরিষ্কার জলপুঞ্জ ফুলাইয়। ঐৰাঙ্গী ડેથઇડ পক্ষী চিত্রিত করিয়া দিতেন, এ কথা পূৰ্ব্বেই བར་ཡིད་ན་ করিয়াছি। সেই হিসাবে তিনি ছিলেন “হংস বা "পরমহংস” । নীর-ক্ষীর হইতে হংস নীর বাদ দিয়া ভাল অর্থাৎ ক্ষীরই গ্রহণ করে, মলিন জলে থাকিয়াও হংস মলিন হয় না, সংসারে আসিয়াও সে মানসসরোবরের দিকে চাহিয়া বাসা বাধে না । তেমনি তিনিও সংসারে থাকিয়াও ছিলেন অসংসারী। মন্দ বাদ দিয়া ভালটুকু গ্রহণ করাই ছিল তাহার স্বভাব। সন্ন্যাসীদের মধ্যেও র্তাহার মত পরমহংস কমই দেখা যায়। এই জন্য নানা ভাবে তাহাকে সংসারের দায়িত্ব দিয়া বাধিবার চেষ্ট নিষ্ফল হইয়াছে । তাহার উপর জমিদারীর ভার দিতে পারা যায় নাই । সকলকে তিনি এত বিশ্বাস করিতেন যে র্তাহার মত লোকের পক্ষে বিষয় চালান ছিল অসম্ভব। তাই তাহার পুত্র পরলোকগত দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুর মহাশয়ই ছিলেন র্তাহার অভিভাবক। এই অনাসক্ত ভাবের জন্য সংসারের স্থখ-দুঃখ শোক তাপ কখনও তাহাকে অভিভূত করিতে পারে নাই । পালে যদি বাতাস লাগে তবে নৌকাকে কোনো ঢেউই টলাইতে পারে না । তাহার মৃত্যুর মত সহজ মৃত্যু বড় একটা দেখি নাই । ১৩৩২ সাল, ৩রা মাঘ । সকালে উঠিয়া ঠাণ্ডা জলে নিত্য-অভ্যস্ত স্নান-উপাসনা সরিয়া সকালে কিছু জলযোগ করিলেন । তার পর কেমন শীত অতুভব করিতে লাগিলেন । গিয়া দেখিলাম তাহার একটু সন্দিজর হইয়াছে । সে দিনও তিনি নিত্যকৰ্ম্ম সবই করিলেন । দৃষ্টিশক্তি কমিয়া গিয়াছিল। তাহার লেখার কাজ অন্তের করিয়া দিতে হইত। তবু তাহার প্রফ দেখার কাজ প্রভৃতি যথারীতি করিলেন। দুধ ও ফলের রস মাত্র থাইলেন। বৈকালে জরটা একটু বাড়িয়াছে দেখা গেল, ফুসফুসেও একটু দোষ পাওয়া গেল । রাত্রেও ফলের রস মাত্র থাইলেন। পরদিনের স্বানের জন্য জল তুলিয়া রাখিতে বলিলেন। কিন্তু সে স্বান আর করা হইল না। রাত্রি তিনটায় ডাক পড়িল। গিয়া দেখি শ্বাস আরম্ভ হইয়াছে । সমস্ত মুখে একটি শান্ত বিশ্রামের