পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

אeיר নাই। সেগুলি ভাল ভাবে সম্পাদিত হওয়া প্রয়োজন। হয়তো তাহাতে গণিত বিষয়ে কোনো নূতন আলোক পাওয়া যাইতে পারে । Boxometry বা কাগজের বাক্স রচনাতেও তাহার গাণিতিক প্রতিভা কম প্রকাশিত হয় নাই। এই বিষয়ে তিনি একটি শাস্ত্রই রচনা করিয়া গিয়াছেন। তাহার উপযোগিতা কি আছে জানি না, কিন্তু তাহাতেও তাহার অসামান্ত প্রতিভার পরিচয় মেলে । বাংলা রেখাক্ষর তাহার অপূৰ্ব্ব স্বষ্টি। ইহাতে যে সব কবিতা তিনি লিখিয়াছেন ও ফেলিয়া দিয়াছেন তাহাও অতুলনীয়। তাহার এই রেখাক্ষরও যতটা আদৃত হওয়া উচিত ছিল ততটা আদৃত হয় নাই। তাহার প্রাপ্য সন্মান পাইয়াছে অন্তে। এখনও বাংলা লঘুলেখনকুশল ইন্দ্রবাৰু র্তাহার পদ্ধতিতেই বাংলা বক্তৃতা লিখিয়া থাকেন। তিনি ছিলেন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত অথচ তাহার রচনাপ্রণালী ছিল চমৎকার প্রাকৃত বা বাংলা । অসাধারণ পণ্ডিত হইয়াও পণ্ডিতী দোধে তিনি দুষ্ট হন নাই। সাহিত্যপরিষদের সভাপতির অভিভাষণে তিনি দেখাইয়াছেন প্রচলিত বাংলা অভিধান হইতেছে সংস্কৃত অভিধানের অনুবাদ মাত্র-চলিত কথোপকথনের শব্দের প্রতি তাহাতে কিছু মাত্র শ্রদ্ধা নাই ( নানা চিন্তা, পৃ. ১৮৭-১৮৮)। নানা দৃষ্টাস্ত দিয়া তিনি ইহা প্রতিপন্ন করিয়াছেন। পণ্ডিত হইয়াও প্রাকৃত বাংলার প্রতি এমন গভীর অঙ্কুরাগ অতিশয় বিরল । সংস্কৃত ছন্দে বাংলাতে স্বন্দর কবিতা লিথিবীর নমুনা তিনি দেখাইয়াছেন, অবশ্ব প্রায়ই তাহ রসিকতার উদ্দেশ্যেই রচিত। সঙ্গীতেরও তিনি সমজদার ছিলেন, যদিও তিনি গান করিতেন না । সুন্দর স্বরে অনেক ব্রহ্মসঙ্গীত র্তাহার রচিত । সাধারণ সমাজের একাদশ সংস্করণের ( ১৩৩৮ ) ব্রহ্মসঙ্গীত গ্রন্থে তাহার রচিত ২৫টি গান পাইলাম । তাহার মধ্যে অকুল ভবসাগরে, অখিল ব্ৰহ্মাণ্ডপতি, অনুপম মহিমপূর্ণ ব্রহ্ম, এক প্রথম জ্যোতি, কর তার নাম গান, জাগো সকলে অমৃতের অধিকারী, দীনহীন ভকতে, সব দুখ দূর হইল, প্রভৃতি গান এখনও খুব সমাদৃত। এৰাগী bఠి8y বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ সম্বন্ধে তাহার দৃষ্টি অতি গভীর ছিল। তাছার উপসর্গের অর্থবিচার নামক প্রবন্ধটি (নানা চিন্তা, পৃ. ২৩৯ ) দেখিলেই তাঙ্গ বুঝ যাইবে । জন্য ভাষা হইতে বাংলাতে অম্বুবাদ করিতে তিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাহার মেঘদূতের অম্বুবাদ ( কাব্যমাল, পৃ.৬৬) ও পদ্যে ব্রাহ্মধৰ্ম্ম ( ঐ, পৃ. ১১৩) তাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। তাহার অম্বুবাদে মূলের সৌন্দর্য ও গাষ্ঠীৰ্য্য পুরাপুরি বজায় থাকিত অথচ যত দূর সম্ভব মূল হইতে অর্থ ও ব্যঞ্জনা ভ্ৰষ্ট হইত না । এইরূপ অনুবাদ করা যে কত কঠিন তাহা বলাই বাহুল্য, কিন্তু তিনি এই কাজে ছিলেন অতুলনীয়। এমন মৌলিক ধ্যানমগ্ন মাহুষের পক্ষে এই কাজ কেমন করিয়া সম্ভব হইল তাহাই ক্রমাগত মনে জাগে । তাহার এত রকমের কৃতিত্ব দেখান গেল বটে, তবু ইহাতেও তাছার বিরাট প্রতিভার ঠিক পরিমাণটি বুঝা গেল না। এত বড় তাহার মনীষা, তবু আর এক দিকে তিনি একেবারে সংসার-অনভিজ্ঞ শিশুর মত সরল । তাহার লেখার মধ্যে বুদ্ধিবিচারের কি তীক্ষত, হাস্যপরিং সের কি সরসত, অথচ উনি সবই দেখিয়াছেন তাহার ধ্যানদৃষ্টিতে । বাস্তব জগতে তিনি ছিলেন যেন একটি অনাসক্ত সরল শিশুর মত সহজ । তাহার চরিত্রের মধ্যে এই দুই বিরুদ্ধ ভাবের যেরূপ মিলন ঘটিয়াছে সাধারণতঃ আমরা এই সংসারে সেরূপ বড় একটা দেখিতে পাই না । শিশুদের মতই সরল ও সহজ ছিলেন বলিয়া তিনি শিশুদের অস্তরের দরদটুকু বুঝিতেন। শিশুদের তিনি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতেন । শিক্ষার জন্য তাহাদের মুকুমার বৃত্তিগুলি পীড়িত করা তাহার মতে ছিল অন্যায়। তাই রবীন্দ্রনাথ যখন বাল্যকালে রাত্রিতে পড়িতে শ্রান্তি বোধ করিতেন তখন "বড়দাদা” তাহার নিদ্রাকাতর অবস্থা দেখিতে পাইলেই তৎক্ষণাৎ মুক্তি মিলিত । তার পর ঘুম যে কোথায় পলাইত তাহা বলাই কঠিন ( জীবন-স্মৃতি, পৃ. ৩৪ ) । সেই সব কথা প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেন, “যদি