পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ੋਗ তার পর কয়েক লরী কাকর দিয়ে মেরামত করাও। বুঝলে ? --আজ্ঞে ই্যা । —আচ্ছা, যাও তুমি এখন। শূলপাণি একটি নমস্কার করিয়া শাস্তশিষ্ট ব্যক্তির মতই চলিয়া গেল । তাহার মত গঞ্জিকাসেবীর আজন্ম-অভ্যস্ত উগ্ৰ মেজাজের কড়া তারও কেমন করিয়া বিমলবাবুর সম্মুখে শিথিল মৃদু হইয়া যায়। আসে সে আস্ফালন করিতে করিতে কিন্তু যায় সে দম-দেওয়া যান্ত্রিক পুতুলমামুষের মত । বিমলবাবু ডাকিলেন—সারী ! সারা আসিয়া নীরবে চকিত দৃষ্টি তুলিয়া দাড়াইল । পরিপূর্ণ আলোকে দেখা যায় সারীর নিটোল স্বাস্থ্যুভরা দীর্ঘ দেহখানি আর সে তৈলাক্ত অতি-মন্থণতায় প্রসাধিত নয়, রুক্ষ প্রসাধনের একটি ধূসর দীপ্তি তাহার সর্বাঙ্গে স্বপরিস্ফুট। পরনে আর তাহার সাওতালী মোট শাড়ী নাই—একখানা ফুলপাড় মিলের শাড়ী সে পরিয়া আছে । বৰ্ব্বর আদিম জাতির দেহে অপরিচ্ছন্নতার একটা কদৰ্ঘ্য গন্ধ থাকে-কিন্তু সারী আসিয়া নিকটে দাড়াইলেও সে গন্ধ আর পাওয়া গেল না। বিমলবাবু বলিলেন—আবার সব তোদের পাড়ার লোকে গোলমাল করছে নাকি ? সারী শঙ্কিত হইয়া উঠিল, বলিল-আমি সি জানি না গো ! উয়ারা তো বললে না আমাকে ! —তবে সব খাটতে এল না যে ? সারীর মুখে এবার সঙ্কুচিত একটি হাসি ফুটিয়া উঠিল, আশ্বস্ত কণ্ঠে সে বলিল—কাল আমাদের জমিদারবাবুউই যি রাঙাবাৰু—উয়ার শ্বশুর হবে যি—ওই রায়বাৰু সিপাই পাঠালে যি । বললে—জমিগুলি চষতে হোবে, কলাই বুনবে, সরষা বুনবে, আলু লাগাবে, আর ধানগুলা কাটতে হোবে ! বিমলবাবুর ভ্র কুঞ্চিত হইয়া উঠিল—আপন মনেই তিনি বলিয়া উঠিলেন-ড়োনস অফ দি কাটি ! ইডিয়টস । দ্বিজ জ্যামিগুরিস ! সারী শঙ্কিত হইয়া উঠিল—শঙ্কার ছায়, তাহার কালো কালিলী ૧gg মুখের সাদা চোখ দুটিতে রাত্রির আকাশের চাদের উপর পৃথিবীর ছায়ার মত ঘনাইয়া আসিল । বিমলবাবু কি বলিলেন সে যে তাহা বুঝিতে পারিতেছে না । তৰু ভাল যে সম্মুখে এখন "হাড়িয়া'র বোতলট নাই ! বিমলবাবু বলিলেন—সকলে তো চাষ করে না, তারা এল না কেন ? —উয়াদিগে ধান কাটাতে লাগালে । সারীর কণ্ঠস্বর ভৗত শিশুর মত। —ধান কাটতে লাগালে ? পয়সা দেবে, না দেবে না ? —না । বেগার লিলে। উয়ারা যি জমিদার বটে— রাজা বটে। —হু ! বিমলবাবু গম্ভীর হইয়া গেলেন । কিছুক্ষণ পর উঠিয়া মোট চেস্টারফিল্ড কোটটা গায়ে দিয়া বলিলেন–ছড়িটা নিয়ে আয় । সারী তাড়াতাড়ি ছড়িটা আনিয়া বিমলবাবুর হাতে দিল, বিমলবাবু এবার প্রসন্ন হাসি হাসিয়া সারীর কপালে আঙুলের একটি টােকা দিয়া ক্ষিপ্ৰপদে রাস্তার উপর নামিয়া পড়িলেন । *** কুয়াশা কাটিয়া এখন রৌদ্র ফুটিয়াউঠিয়াছে। চরখানাকে এখন স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। সৰ্ব্বাগ্রে চোখে পড়ে আকাশলোকের দিকে উদ্ধত ভঙ্গিমায় উষ্ঠত একটা অৰ্দ্ধসমাপ্ত ইটের গড় চিমনী । সেইখানেই ঠুং ঠাং কণির শব্দ উঠিতেছে। ওদিকে আরও একখানা স্বসমাপ্ত বাংলো। ওট আপিস-ঘর। একটা লোহার ফ্রেমে গড়া আচ্ছাদনহীন শেড । এতক্ষণে সারীর মুখখানি ঈষৎ দীপ্ত হইয়া উঠিল ; বিমলবাবু খানিকটা অগ্রসর হইয়া গেলে সে স্বচ্ছন্দ সহজ হইয়া জলসিক্ত অঙ্কুরের মত জাগিয়া উঠিল। গুনগুন করিয়া গান করিতে করিতে সে কাজ আরম্ভ করিল, নিজেদের ভাষায় গান— “উঃ বাবা গো---এই জঙ্গলের ভিতর কি আঁধার অস্ট্রি কত গাছ ! এখানে সাপও চলিতে পারে না! ७३ জঙ্গলের বাদেই নাকি রামেচারের সেই স্বৰ্যষ্ঠাকুরের ' শোবার ঘর পর্যন্ত লম্বা ডাঙ—সেখানে বসতি নাইs