পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գնe নায়েব-সেরেস্তার সম্মুখে একখানা সেকেলে ভারী কাঠের চেয়ারে বসিয়া ইঙ্গ রায় জমিদারী কাজকর্মের তদারক করিতেছিলেন। নায়েব ঘোষ তক্তাপোষের উপর একটি সেকেলে ডেস্কের উপর খাতা খুলিয়া দেখিয়া রায়ের প্রশ্নের উত্তর দিতেছিল। তাহার পাশে ঘোষের ভাইপো কতকগুলি খাতা লইয়া বসিয়া আছে। ঘোষের ভাইপোকে রায় চক্রবর্তী-বাড়ীর কৰ্ম্মচারী নিযুক্ত করিয়াছেন। মনের গোপন ইচ্ছ—এইবার তিনি ধীরে ধীরে চক্রবর্তীদের সংশ্রব হইতে সরিয়া দাড়াইবেন । মজুমদার ঘরে ঢুকিয়াই নমস্কারের ভঙ্গিতে প্ৰণাম করিয়া বলিল—এক বার মুখুজ্জে সায়েব আপনার কাছে পাঠালেন । e বিমলবাবু এখানে মুখাজী সাহেব নামেই খ্যাত হইয়াছেন, বাবু নামটা তিনি অপছন্দ করেন, বলেন, ওটা গালাগালি ৷ চরের কুলী কামিন ও রায়হাটের দরিদ্র জনসাধারণের কাছে তিনি মালিক, হুজুর। কৰ্ম্মচারী ও অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত সাধারণের নিকট তিনি মুখাজী সাহেব । । ইন্দ্র রায়ের পাশে আরও খান তিনেক চেয়ার খালি পড়িয়াছিল, মজুমদার তাহার কথার ভূমিকা শেষ করিয়া ঐ চেয়ারগুলার দিকেই দৃষ্টি ফিরাইল ; ইন্দ্র রায় সাদরে সম্ভাষণ জানাইয়া, ঘোষের তক্তাপোষের দিকে আঙ ল দেখাইয়া স্পষ্ট নির্দেশ দিয়া বলিলেন—ব’স, ব’স । মজুমদার একটু ইতস্তত করিয়া তক্তাপোষের উপরেই বসিল । রায় তাহার অভ্যস্ত মৃদু হাসি হাসিয়া বলিলেন— কি সংবাদ তোমার মুখাজী সাহেবের, বল । —আজ্ঞে –মাথা চুলকাইয়া যোগেশ মজুমদার বিনয় প্রকাশ করিয়া বলিল—অজ্ঞে আমাকে যেন অপরাধী করবেন না— ইন্দ্র রায়ের ঠোটের প্রাস্তে ষে হাসির রেখাটুকু ফুটিয়া উঠে, সেটা অভিজাতস্থলভ অভ্যাস-করা একটা ভঙ্গি মাত্র, হাসি নয় ; মজুমদারের বিনয়ের ভূমিকা দেখিয়া কিন্তু রায় এবার সত্য সত্যই একটু হাসিলেন । বুঝিলেন, অস্ত্রপ্রয়োগের পূৰ্ব্বে মজুমদারের Aট গ্রাম-বাণ প্রয়ােগ বা হাসিয়া সোজা হইয়৷ «यवॉर्जी $శ్రీgy বসিয়া বলিলেন—স্কৃত চিরকালই অবধ্য ; তোমারজ নেই—নির্তয়ে তুমি মুখাজী সাহেবের বক্তব্য ব্যক্ত কর। স্বায়ের কথার স্বরে অর্থে মজুমদার তাহার শক্তি অহমান করিয়া আরও সংহত এবং সংযত হইয়া উঠিল, আরও খানিকট বিনয় প্রকাশ করিয়া বলিল,—তিনি নিজেই আসতেন ! তা তার শরীরটা- ; মজুমদার ভাবিতেছিল কোন অমুখের কথা বলিবে! —শরীরটায় আবার কি হ’ল তার ? প্রশ্ন করিয়াই রায় হাসিলেন, বলিলেন-চালুনীতে ধে-কালে সরষে রাখা চলছে যোগেশ, সে কালে শরীরে যা হোক একটা কিছু হওয়ার আর আশ্চৰ্য্য কি ? তোমার শরীর কেমন ? লজ্জার সহিত মজুমদার বলিল—আঞ্জে, আমি ভালই আছি । রায় বঁ হাতে গোফে তা দিতে মুরু করিয়া বলিলেন-- ভাল কথা, শরীর তো স্বস্থই আছে, এইবার সরল অস্তকরণে স্পষ্ট ভাষায় বল তো—মুখাজী সাহেবের কথাটা কি ? বঁ হাতে গোফে তা দেওয়াট। রায়ের অস্বাভাবিক গাম্ভীর্য্যের একটা বহিঃপ্রকাশ । মজুমদার প্রাণপণে আপনাকে দৃঢ় করিয়া বলিল— বেশ গাম্ভীৰ্য্যের সহিতই আরম্ভ করিল-কথাটা চরের সাঁওতালদের নিয়ে । মানে—উনি সাওতালদের সব দাদন দিয়ে রেখেছেন । ঐবাসের কাছে ধানের বাকী বাবদ কারও বিশ, কারও পচিশ, দু-এক জনের চল্লিশ টাকাও ধার ছিল। ঐবাসের প্যাচালো বুদ্ধি তো জানেন, সে আবার ডেমিতে টিপছাপ নিয়ে বন্ধকী দলিল পর্যাস্ত করে নিয়েছিল। যোগেশ একটু খামিল । রায়ের গোফে তা দেওয়া বন্ধ হইয়া গিয়াছিল, র্তাহার মুখ-চোখ ধীরে ধীরে চিন্তাভারাক্রান্ত হইয় উঠিতেছিল। " த মজুমদার কোন সাড়া না পাইয়া বলিল-মুখাজী সাহেব সেটা জানতে পেরেই শ্ৰীবাসকে ডেকে ধমক দিয়ে তার টাকা দিয়ে খতগুলি কিনে নিলেন । সাওতালদের বললেন, তোরা খেটে আমাকে শোধ দিবি। মজুরী থেকে দৈনিক এক আনা হিসেবে কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা ক’রে দিয়েছেন তিনি ।