পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ή68 ভাবে । কিন্তু আসল ব্যাপারটা ভগবানের হাতে— ভগবানের দয়া যদি হয় তবে হবে বইকি । সে হ'লে তুমি জানতে পারবে সকলের আগে। যেই অহীনের শ্বশুর হোক তাকে আশীৰ্ব্বাদের সময় তোমাকে একটা শিরোপা দিতেই হবে । চক্রবর্তী-বাড়ীর বহুকালের প্রাচীন কৰ্ম্মচারী তুমি । শকার্থে ‘শিরোপা ‘প্রাচীন কৰ্ম্মচারী’ শব্দগুলি ক্ষুরধার—মজুমদারের মৰ্ম্মস্থলে বিদ্ধ হইবার কথা। কিন্তু রায়ের কণ্ঠস্বরে স্বরের গুণ ছিল আজ অন্যরূপ ; আঘাত করিবার জন্তু ব্যঙ্গ-শ্লেষে নিষ্ঠুর গুণ টানিতে র্তাহার আর প্রবৃত্তি ছিল না ; অদৃষ্টবাদী মনের দৃষ্টি আপনার ইষ্টদেবীর চরণপ্রাস্তে নিবদ্ধ রাখিয়া তিনি কথা বলিতেছিলেন । মজুমদার আজ আহত না হইয়াও সে স্বরের কোমল ম্পর্শে বিচলিত এবং লজ্জিত না হইয়া পারিল না। কিছুক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া সেও এবার অকৃত্রিম সরলতার সঙ্গিতই বলিল-আজ্ঞে বাৰু, এই চরের সাঁওতালদের ব্যাপারটা কি কোন রকমে আপোষ করা যায় লা ? রায় বলিলেন—কার সঙ্গে আপোষ যোগেশ ? বিমলবাবুর সঙ্গে ? রায় হাসিলেন। মজুমদার বলিল—লোকটি বড় ভয়ানক বাবু! ধৰ্ম্মঅধৰ্ম্ম কোন কিছু মানেন না। আর লোকটির কূটবুদ্ধিও অসাধারণ । রায় আবার হাসিলেন, কোন উত্তর দিলেন না। মজুমদার বলিল—সর্দার মাঝির নাতনী ওই সারী মাঝিনের ব্যাপারে আমর! তো ভেবেছিলাম সাঁওতালরা একটা হাঙ্গামা বাধালে বুঝি | কিন্তু এমন খেলা খেললে মশায় ষে কমল আর সারীর স্বামীই হ’ল দেশত্যাগী, আর সমস্ত সাওতাল হ’ল বিমলবাবুর পক্ষ। তার কথাটি কইলে না। আর কি জঘন্য রুচি লোকটার। রায় বলিলেন—ওতে আর ভয় পাবার কি আছে মজুমদার ! ও খেলা আমাদের পুরনো হয়ে গেছে। আগেকার কালে কৰ্ত্তারা ওদিকে ভয়ানক থেলা খেলে গেছেন। এ খেলা ব্যবসায়ীর পক্ষে নূতন । মা লক্ষ্মীর --শালই ওই পিছনে পিছনে আলী ঢুকবেই। বাণিজ্য প্রবাসী ১৩৪৬ লক্ষ্মীর ঘরে সতীন ঢুকেছে অলক্ষ্মী। যাক গে, ও কথা? दांझई लांe । মজুমদার আবার কিছুক্ষণ নীরব থাকিয়া বলিল— ঝগড়া-বিবাদটা না হ’লেই ভাল হ’ত বাৰু। —ঝগড়া-বিবাদ । রায় গোফে তা দিয়া হাসিয়া বলিলেন—ঝগড়া-বিবাদ করতে তা হ’লে মুখাজী সাহেব বদ্ধপরিকর, কি বল ? —ষ্ঠ্যী—তা—মানে যে রকম স্বরে কথা বললেনভাবভঙ্গি দেখে আমার যা মনে হ’ল তাতে— মজুমদার ইঙ্গিতে কথাটা শেষ করিয়া নীরব হইয়া গেল । রায় বলিলেন–জান তো, আগেকার কালে যুদ্ধের আগে এক রাজা আর এক রাজার কাছে দূত পাঠাতেন ; সোনার শেকল আর খোলা তলোয়ার নিয়ে আসত সে দূত। যেটা হোক একটা নিতে ত’ত। তা তোমার মুখাজী সাহেবকে ব’ল—খোলা তলোয়ারখানাই নিলাম— শেকল নেওয়া আমাদের কুলধৰ্ম্মে নিষেধ, বুঝেছ । কথা বলিতে বলিতে রায়ের চেহারায় একটা আমূল পরিবর্তন ঘটিয়া গেল ; ব্যঙ্গহাস্তে মুখ ভরিয়া উঠিয়াছে— গোফের দুই প্রান্ত পাক খাইয়া খাইয়া খাড়া হইয়। উঠিয়াছে, চোখের দৃষ্টিই হইয়। উঠিয়াছে সৰ্ব্বাপেক্ষ বিস্ময়কর। উৎফুল্প, উগ্র সে দৃষ্টির সম্মুখে সব কিছু যেন তুচ্ছ, কপালে সারি সারি তিনটি বলীরেখা অবরুদ্ধ ক্রোধের বাধের মত জাগিয়া উঠিয়াছে। মজুমদার আর কোন কথা বলিতে সাহস করিল না, একটি প্রণাম করিয়া সে বিদায় হইল । রায় বলিলেন-ঘোষ, একখানা নতুন ফৌজদারি আইনের বইয়ের জন্যে কলকাতায় লেখ দেখি, আমাদের অমলের মামাকেই লেখ-সে যেন দেখে ভাল বই ষ, তাই পাঠায়। আমাদের খানা পুরনো অনেক দিনের । চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া ঘরের মধ্যেই খানিকট পায়চারি করিয়া বলিলেন—এক পা বদি বিরোধের দিকে এগোয়, সঙ্গে সঙ্গে কালির বুকে বাধ দিয়ে যে পাম্প বসিয়েছে মুখুজ্জে সেটা বন্ধ করে দাও। চর বন্দোবস্তির সঙ্গে নদীর কিছু নেই।