পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Պծ8 প্রবাসী ՖՅ8\Ն বললেন অবিপ্তি যে, এ তে সাওতাল-চক্ৰবৰ্ত্তী-বাড়ীতে কাজ হ’লে তোমাদের সায়েবকেও বেগার ধরব হে ! কাজ তো অনেক রকম আছে । অচিন্ত্যবাবু পরম বিজ্ঞের মত ঘাড় নাড়িতে নাড়িতে বলিলেন—লাগল তা হ’লে ! কিন্তু এইবার রায় ঠকবেন । জমিদারী আর সায়েবী বুদ্ধিতে অনেক তফাৎ ! মেয়েজামাইয়ের জন্যে এইবার রায় অপমান হবেন। মজুমদার বলিল—না না, ও কথাটা ঠিক নয় হে! —মানে ? —আজ যা বললেন, তাতে বুঝলাম ও বিয়ের কথাটা ঠিক নয়। বললেন আমাকে-ও ছেলেমেয়ে থাকলেই কথা ওঠে যোগেশ–কিন্তু তা হ’লে কি তুমি জানতে পারতে না ? চক্ৰবৰ্ত্তী-বাড়ীর পুরনো কৰ্ম্মচারী তুমি! তবে ভগবানের ইচ্ছে হয় হবে । —আপনার মাথা ! অচিন্ত্যবাবু প্রচণ্ড অবজ্ঞাভরে সঙ্গে সঙ্গে বলিয়া উঠিলেন—আপনার মাথা। আমি নিজে জানি-কথা উঠেছিল। রায়ের ছেলে অমল অহীন্দ্রকে পৰ্য্যস্ত ধরেছিল। এখন আসল ব্যাপার— রামেশ্বরবাবু আর ও বাড়ীর মেয়ে ঘরে ঢোকাবেন না। এ যদি না-হয় আমার কান দুটি কেটে ফেলব আমি। হরিশ রায়ের চোখ দুটি বিস্ফারিত হইয়। উঠিল ! ভ্রন্থটি ঘন ঘন নাচিতে আরম্ভ করিল, ঘাড়টি ঈষৎ দোলাইয়া সে বলিয়া উঠিল—এ্যাই ঠিক কথা! অচিন্ত্যবাৰু ঠিক বলেছেন। শূলপাণি বার-বার ঘাড় নাড়িয়া বলিল-হু-ছ, সে বাবা কঠিন ছেলে-রামেশ্বর চক্ৰবৰ্ত্তী আর কেউ নয়। তারপর হি-হি করিয়া হাসিয়া অদৃপ্ত ইক্স রায়কে সম্বোধন করিয়া ব্যঙ্গভরে বলিল—লাও বাবা, লাও, মেয়ে-জামাইয়ের জন্তে চরের ওপর লগর বসাও । কথাটা মজুমদারেরও মনে ধরিল, ইন্দ্র রায়ের সহৃদয়তায় যে সাময়িক কোমলতা তাহার মনে জাগিয়াছিল— কুয়াশার মত সেটা তখন মিলাইয়া যাইতে আরম্ভ করিয়াছে। হরিশ রায় চুপি চুপি বলিল—এই দেখ, আমাদের ife হ’লে হবে কি ? ছোটরায়বাড়ীর ওই কেলেঙ্কারীچیپ যাকে বলে বংশগত—তাই । আমার কাছে রায়-বংশের কুসীনামা আছে– দেখিয়ে দোব, প্রতিপুরুষে ওদের এই কেচ্ছ, বুঝেছ! সেই দু-পহরের রৌদ্র মাথায় করিয়া নদীর বালির উপরেই তাহদের মজলিস জমিয়া উঠিল ; সকলেরই মনোভাণ্ডে পরনিন্দার রস রৌদ্রতপ্ত তাড়ির মতই ফেনাইয়া গাজিয়া উঠিল । সন্ধ্যা না-হইতেই কথাটা গ্ৰামময় রটিয়া গেল । ছোটরায়বাড়ীতে কথাটা আসিয়া কাছারি পর্য্যন্ত পৌছিয়া গেল ; ইন্দ্র রায় কাছারিতে ছিলেন না, অন্দরে নিয়মিত সন্ধ্যা-তৰ্পণে বসিয়াছিলেন ; কথাট শুনিলেন রায়ের নায়েব ঘোষ। পথের উপর দাড়াইয় অতিমাত্রায় ইতরতার সহিত রায়-বংশের নিঃস্ব নাবালকটির অভিভাবিক উচ্চকণ্ঠে কথাটা ঘোষণা করিতেছিল। ঘোষের সর্বাঙ্গে যেন জালা ধরিয়া গেল, কিন্তু উপায় ছিল না, ঘোষণাকারিণী স্ত্রীলোক ! রায়কে কথাটা শুনাইতেও তাহার সাহস হইল না। সে স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল । রায়ের সান্ধ্য উপাসনা তখন অৰ্দ্ধসমাপ্ত ; দ্বিতীয় পাত্র কারণ পান করিয়া তিনি জপে বসিয়াছেন । মনে মনে ইষ্টদেবীকে বারবার ডাকিতেছিলেন, ম আমার রণরঙ্গিণী মা ! ধনী মুখাজীর সহিত দ্বন্দ্ব-সম্ভাবনায় বহুকাল পরে গোপন উত্তেজনা-বশে তাহার আজ ঐ রূপ ওই নামটিই কেবল মনে পড়িতেছে ! সহসা বাড়ীর উঠানে কাংস্যকণ্ঠে কে চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল—হায় হায় গো ! মরে যাই, মরে যাই ! আহা গো ! ‘পিড়ি পেতে করলাম ঠাই, বাড়াভাতে পড়ল ছাই।’ দিলে তো চক্কবতীর নাকে ঝামা ঘষে ! হয়েছে তো ! নাবালক শরীককে ফাকি দেওয়ার ফল ফলল তো ! রায়ের ভ্র কুঞ্চিত হইয়া উঠিল—পরক্ষণেই আপনাকে তিনি সংযত করিলেন—প্রশাস্ত মুখে ইষ্টদেবীকে স্মরণ করিবার চেষ্টা করিলেন । নীচে হেমাঙ্গিনীর মুখের কাছে হাত নাড়িয়া ভৰি