পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ਾਂ ‘’ যেতে পারে ‘জ্ঞাতি সম্পর্কে কৃষকের তিন পুরুষের মধ্যে এ কথাটির ঠিক তাৎপৰ্য্য কি তা সব সময় ধরা যায় না। দ্বিতীয়তঃ, যে-সব অরুষক পূৰ্ব্বে থেকে এক শত বিঘার বেণী জমির মালিক হয়ে আছেন তারা এ আইনের মধ্যে পড়বেন না, যারা নূতন কিনতে চাচ্ছেন তারাই এর মধ্যে পড়বেন। এর ফলে বহু ক্ষেত্রে ঠিক ন্যায় বিচার হওয়া হয়ত সম্ভব হবে না । তা ছাড়া বাংলায় ষে-সব অকৃষক জমিবন্ধকী ইত দ কারবার করেন, তাদের পক্ষে এই ধারাটি বিশেষ কাৰ্য্যকরী হবে বলে মনে হয় না । তাদের সমস্ত পরিবারের মোট এক শত লিঘার বেশী জমি থাকবে না, কি মাথা-পিছু এক শত বিঘার বেশী থাকবে না, এ কথা স্পষ্ট করে বলা হয় নি। যদি মাথাপিছু এক শত বিঘা জমি থাকার অনুমতি হয়, তা হ’লে মহাজনেরা সহজেই তাদের পরিবারের প্রতি লোকটির নামে আলাদা কারবার ক’রে দিয়ে বহুদূর পর্যাস্ত ব্যবসা চালাতে পারেন এবং ফলে বহু কৃষকের জমিষ্ট নিয়ে নিতে পারেন । কিন্তু যদি পরিবারপিছু এক শত বিঘা জমির কথাই এর প্রকৃত উদ্দেশ্ব হয়, তা হ’লেও নিস্তার নেই। এ পর্য্যন্ত বাংলার নিম্ন মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় বহু ক্ষেত্রেই নিজের জোত-জমি কিনে ভাগ-চাযে চাষ করিয়ে তাদের স্বল্প আয়ের কিছু আয়তন বৃদ্ধি করেছেন, এবং বহু সময় এখনও তাদের বিপদে-আপদে জমির উপর নির্ভর করতে হয়। যদি পরিবারপিছু এক শত বিঘার অনধিক জমি ভোগের নির্দেশ দেওয়া হয় ত হ’লে এই নিদেশের ফলে বহু বৃহৎ একান্নবর্তী পরিবারের পক্ষে যথেষ্ট জমি পাওয়াই কঠিন হয়ে উঠবে। তাই শুধু নয়, বহু একান্নবর্তী পরিবারের পৃথক হয়ে যাবার আশঙ্কাও কম নয় । তা ছাড়া যদি কেউ নীলামের খুঁত ধরিয়ে দিতে পারেন, তিনি নীলাম-লব্ধ টাকার অৰ্দ্ধেক পাবেন—এ নীতির কোনও সমর্থন পাওয়া শক্ত । এ রকম উৎসাহ দেওয়ার ফলে যদিও কোন কোন সময় অন্যায় নীলাম ধরা পড়তে পারে, তা হ’লেও এই উৎসাহে মোকদ্দমা এবং মনোমালিন্য বৃদ্ধি পাওয়া আশ্চৰ্য্য নয়। তার পর ফ্যাক্টরির জন্য জমি দেওয়া হয়েছে মাত্র পঞ্চাশ বিঘা। অনেক সময় মাঝারি ফ্যাক্টরিগুলির জন্যও পঞ্চাশ প্রস্তাবিত্ত জমি-হস্তান্তর আইন 't:y বিঘার বেশী জমি দরকার হয় এবং এক্ষেত্রে আমাদের শিল্পপ্রসারের বাধা হবে সন্দেহ নেই । শহরের ধারে যে-সৰ জমির মালিক অকৃষক তাদের কাছ থেকে বেশী জমি সংগ্রহ করা আইনত: সম্ভব হতে পারে, কিন্তু যেখানে গ্রামের মধ্যে ফ্যাক্টরি স্থাপনের চেষ্টা চলছে সেখানে এই আইনে বিশেষ অস্থবিধা হবে সন্দেহ নেই। চিনির কলগুলির স্বকীয় আখের চাষ থাকলে খরচ বহু কম হয়, একথা সকলেই জানেন । কিন্তু যদি এই আইন বলবৎ হয় তা হ’লে এ রকম কোনও জমি সংগ্ৰহ অসম্ভব হবে এবং তার ফল ভাল হবে ব’লে মনে হয় না । কিন্তু ব্যাপারটির এইখানেই শেষ নয়। এই দোষগুলি বর্তমান আইনটির কিছু সংশোধন করলে হয়ত আর না থাকতে পারে, কিন্তু এর কতকগুলি ভিত্তিগত দোষ আছে । বৰ্ত্তমান অবস্থায় জমি-হস্তান্তর সম্বন্ধে কোনও বাধাবাধি নিয়ম করা সঙ্গত কি না এই জিনিষটিই এখনও বিচারের অতীত হয় নি। অকৃষকের হাতে জমি মাওয়া হয়ত বাঞ্ছনীয় নয়, কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে যে বর্তমানে চাষীদের এক জমি ছাড়া খণসংগ্রহের অন্য কোনও সম্বল নেই। বাংলার ব্যাঙ্কিং এনকোয়ারি কমিট বলেছিলেন যে সব সময়েই মহাজনের যে চড়া হারে স্বদ কেবল অন্যায় ভাবে নেন তা নয়— হয়ত কোনও কোনও সময় নিতে বাধ্য হন—এবং এর কারণ হচ্ছে কৃষকদের ঋণ পাওয়ার সম্বল কম। কথাটা চিন্তনীয়। কারণ যদি সরকার হ’তে ঋণ দানের ব্যবস্থা না করা হয় এবং ঋণদান যদি ব্যক্তিবিশেষের হাতে থাকে তা হ’লে সাধারণ লাভক্ষতির হিসাবে টাকাআদায়ের সম্ভাবন কম হ’লে স্বদ বেশী হবেই এবং টাকা না-দিতে পারলে বন্ধকী জমি বিক্রি হয়ে যাবেই । এ ক্ষেত্রে বাধাবাধি নিয়ম হ’লে চড়া হারে স্বদ বা বন্ধকী জমি কিনে নেওয়া বন্ধ হবে সত্য, কিন্তু সেই সঙ্গে টাকা ধার পাওয়াও বন্ধ হবে। কৃষি-কমিশনও স্বীকার করেছিলেন যে, যেখানে ল্যাণ্ড অ্যালিয়েনেশ্বান অ্যাক্ট অন্য দিকে বেশ ভাল কাজ করেছে, সেখানেও এই অসুবিধা দেখা গিয়েছে। বাংলায় চাষীদের ঋণদান সম্বন্ধে নানা রকম আইন হওয়ায়