পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৭৭২ বিবাহ করিয়া ফেলিল । কস্তাপক্ষ অকুমান করিতে পারে নাই ষে অন্নদার দ্বিতীয় পক্ষ ; কেমন করিয়া পরিবে ! সাতাশ বছর বয়স বিবাহের পক্ষে বেশী নয়—আজকালকার বিচারে কিছু কমও হইতে পারে। কথা যখন উঠিল না, অন্নদাও চাপিয়া গেল ; শুধু তাই নয়, পাছে দ্বিতীয় পক্ষ জানিয়া নীলিমা ব্যথা পায়, তাই সে বিবাহের পরে দেশে না ফিরিয়া পশ্চিমের এক শহরে চলিয়া গেল ; আর ঐলেখার চিহ্ন যত দূর সম্ভব মুছিয়া ফেলিল ; চিঠিপত্রগুলি ছিড়িল ; ফটোগুলি পুড়াইল ; তাহার ব্যবহৃত শাড়ী জামা গরিবদের বিলাইয়া দিল । সে ভাবিয়াছিল কথন হয়ত কথায় কথায় নীলিমাকে ঐলেখার কথা বলিবে—কিন্তু এই ঘটনার পরে তাহ আর সম্ভব বলিয়া মনে হইল না। সেদিন দুপুরবেলা অন্নদা রোদে বসিয়া একখানা উপন্যাস পড়িতেছিল আর নীলিমা প্রকাগু একটা তোরঙ্গ খুলিয়া কাপড়চোপড় রোদে দিবার ব্যবস্থা করিতেছিল । নীলিমা কতকগুলি শাড়ী ও ব্লাউঞ্জ বাহির করিতে করিতে বলিল—দেখ, অন্য কোন দিকে তোমার দৃষ্টি নেই, কিন্তু বিয়ের আগেই এতগুলো শাড়ী কিনতে গেলে কেন ? অন্নদা হাসিয়া বলিল—কবে যুদ্ধ বেধে যায়—তখন তো আবার চড়া দামে কিনতে হ’ত । —কিন্তু ব্লাউঞ্জ যে এতগুলো করিয়ে রেখেছ বোকার মত, যদি আমার গায়ে ছোট হ’ত, কি বড় হ’ত ! অন্নদা পুনরায় হাসির চেষ্টা করিয়া বলিল—কিন্তু ছোটও হয় নি, বড়ও হয় নি, ঠিকই হয়েছে তো ! —তা হয়েছে বটে। নীলিমা ভাজ খুলিয়া একে একে বস্ত্রাদি রোদে দিতে লাগিল ! না হইবারই কথা! শ্ৰলেখা আর নীলিমা দু-জনে প্রায় এক মাপেরই। এ সমস্তই ঐলেখার ; তবে তাহাতে ব্যবহারের কোন চিহ্ন নাই বলিয়, আর দামও অনেক, অন্নদা সেগুলি পরিত্যাগ করে নাই । নীলিমা কৌতুহল ও আবদারের স্বরে শুধাইল—আচ্ছা কি ক'রে তুমি আমার ঠিক মাপটি জানলে ? এৰাগী శిgy জয়দা বলিয়া ফেলিল—তা জান না, বিয়ের আগে তোমাকে স্বপ্ন দেখেছিলাম— কিন্তু কথাটা হঠাং-দেখা সাপের মত ফু-জনকেষ্ট চমকাইয়া দিল ; স্বামী অস্বস্তি বোধ করিল, বধূর রাত্রের স্বপ্নের কথা মনে পড়িয়া গেল ! সে বলিল—আচ্ছা এই যে আমি রাতের পর রাত ঐ একই স্বপ্ন দেখে যাচ্ছি, এর কোন প্রতিকার করবে না ? অন্নদা বলিল—স্বপ্নের অার প্রতিকার কি ? আর তোমার কিছু ক্ষতিও তো হচ্ছে না! নীলিমা বলিল—আমার কি মনে হয় জান-অন্নদার বুক কঁাপিয়া উঠিল—মনে হয় এ বাড়ীতে কোন প্রেত বাস করে ; সে চায় না যে আমি এখানে থাকি, তাই ক্রমাগত বলে, এখানে কেন ? তোর জায়গায় যা । তার পরে একটু খামিয়া বলিল-আচ্ছ বাসাট বদলালে হয় না! অন্নদা কথাটাকে চাপা দিবার জন্য বলিল-— আচ্ছ। দেখা যাবে। २ অবস্থা ক্রমে অধিকতর সঙ্কটজনক হইতে লাগিল । নীলিমার ঘুমাইবার উপায় আর রহিল না। একটু ঘুম আসিয়াছে কি, অমনি সে ধড়ফড় করিয়া জাগিয়া উঠিয়াছে —ওগে, শুনছ, আবার সেই মূৰ্ত্তি ! অন্নদা কতক্ষণ জাগিয়া থাকিবে ? অল্পক্ষণ পরেই সে ঘুমাইয়া পড়ে— নীলিমা স্থির করে, সে আর ঘুমাইবে না, বাকি রাতটুকু জাগিয়া কাটাইবে -কিন্তু ক্রমে জাগরণও অসহ্য হইয়া উঠিতে লাগিল । নির্জন ঘর, নিঃসঙ্গ প্রহর ; স্তিমিত দীপের আলোয় দেয়ালে কিস্তৃত সব ছায় পড়ে ; চোখ বন্ধ করিলে সেই শাড়ী-পরা মেয়েটাকে মনে পড়িয়া যায় ; চোখ খুলিয়া থাকিলে দেয়ালের চট-ওঠা রেখাগুলা ক্রমে রক্তে মাংসে পূরিয়া সজীব হইয়া উঠিতে থাকে। দক্ষিণ দিকের দেয়ালে ওটা তো ছায়া ! কিন্তু নড়িতেছে কেন ? না, নড়িবে কেন ? কি আশ্চৰ্য্য,