পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিবের নৃত্যমূৰ্ত্তি ঐরমেশ বস্তু y শিব হিন্দুর কাছে মহাদেব । তাহার কথা হিন্দুর শাস্ত্রে ও পুরাণে, শিল্পে ও সাহিত্যে, ব্রত ও উৎসবে যুগ যুগ ধরিয়া কীৰ্ত্তিত হইয়াছে। তঁহাকে ঘিরিয়৷ যে-সব কাহিনী গড়িয়া উঠিয়াছে তাহাতে শহর বহু রূপের পরিচয় পাওয়া যায়। রুদ্র ও দক্ষিণ, অশাস্ত ও শাস্ততম এই দুইটি প্রধান অভিব্যক্তি। হিন্দুর ধৰ্ম্মচিন্তা ও ধর্শ্বকৰ্ম্মের অনেক অংশ শিবের দ্বারাই অনুপ্রাণিত ও অমুরঞ্জিত । শিব আদিদেব, ভূতনাথ ; তাহার অষ্টবিধ মূর্তির মধ্যে পঞ্চভূত—ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুং ও ব্যোম—তাহারই বিভূতির এক একটি রূপ। আশুতোষ রূপে তিনি হিন্দুর উচ্চনীচ সকলের প্রিয়। র্তাহার আদিম রুদ্রতা ও প্ৰলয়-রূপের প্রখরতা হিন্দুর মনের মাধুরী মিশিয়া কল্যাণসুন্ধর ঐ ধারণ করিয়াছে। শিব মহাযোগী, তিনি হিন্দুর আধ্যাত্মিক আদর্শ। এক দিকে তিনি কামান্তক, অন্য দিকে তিনিই উমাপতি। এক দিকে তিনি ভিক্ষুক শ্মশানবাসী, অন্য দিকে তিনিই ত্রিভুবনেশ্বর ও সিদ্ধিমুক্তিদাতা । তিনি ত্রিলোচন, নীলকণ্ঠ । এইরূপে শিবের ংহারমূৰ্ত্তি, অনুগ্রহুমূৰ্ত্তি, দক্ষিণামূৰ্ত্তি, কঙ্কালমূৰ্ত্তি, ভিক্ষাটনমূৰ্ত্তি, কল্যাণম্বন্দর মূৰ্ত্তি, গদাধর ও নীলকণ্ঠ মুক্তি, অৰ্দ্ধনারীশ্বর মূৰ্ত্তি, হরিহর মূৰ্ত্তি এবং লিঙ্গমূৰ্ত্তি প্রভৃতি কত যে রূপ কল্পিত হইয়াছে তাহার অন্ত নাই। নানা শৈব সম্প্রদায় তাহাদের দেবতাকে নানা বিচিত্র ভাবে ধ্যান করে, নানা অদ্ভুত ভাবে তাহার পূজা করে। ર কিন্তু শিবের বহু প্রকারের রূপের মধ্যে নৃত্যরূপের একটি বিশিষ্টতা আছে। শিব মহাযোগী মহাদেব হইয়াও ষে নাচেন এই কল্পনায় নূতনত্ব আছে। শিবের সঙ্গে নাট্যশাস্ত্রের এবং নৃত্যের ঘনিষ্ঠ যোগ। শিবই অন্যান্য অনেক বিদ্যার মত এই দুইটি বিষ্ঠারও আদি উপদেষ্ট । নৃত্যের মধ্য দিয়া এবং নৃত্যের রূপকের গাম্ভীর্ষ্যে শিবের যেন একটি মহান রূপ দেখিতে পাওয়া যায়। নৃত্যকে হিন্দুশাস্ত্রে অতি উচ্চস্থান দেওয়া হইয়াছে। আধ্যাত্মিক প্রচেষ্টায় নৃত্যের স্থান স্বীকৃত হইয়াছে। অন্যান্য শিল্পের মূল প্রেরণায় নৃত্যের প্রভাবের কথাও প্রাচীন গ্রন্থে পাওয়া যায়, যেমন বিষ্ণুধৰ্ম্মোত্তরে । শিবের মৃত্য লাস্য অর্থাৎ বিলাস-নৃত্য নয়। ইহা আধ্যাত্মিক, ইহা তাহার যোগীরূপের এক প্রকার প্রকাশ। এমন কি, নৃত্যশাস্ত্রের যে রূপ কল্পিত হইয়াছে তাহাতে শিবের বিশিষ্ট লক্ষণগুলিই প্রধান, যেমন আমরা সূত্ৰধার মণ্ডনের গ্রন্থে দেখিতে পাই— নৃত্যশাস্ত্র সিতং রম্যং মৃগবক্তং জটাধরম্। অক্ষসূত্রং ত্রিশূলঞ্চ বিভ্রাণং তং ত্রিলোচনম্। —দেবতামূৰ্ত্তিপ্রকরণ, ৪।১৩ এই শ্লোকে দেখিতে পাওয়া যায় মৃত্যশাস্ত্রের মূৰ্ত্তির জট, তিন চোখ ও ত্রিশূল থাকে, এইগুলি ত শিবের নিজস্ব লক্ষণ । নটরাজ শিবের নিজের মন্দিরেই যে নৃত্যমূৰ্ত্তি স্থাপিত হষ্টত তাহা নহে, মাতৃকাদের মন্দিলে তাহাদের সঙ্গেও ঐরূপ মূৰ্ত্তি স্থাপনের বিধান ছিল— ভৈরবং কারয়েভত্র নৃত্যমান বিকারণম্। —দেবতামূৰ্ত্তিপ্রকরণ, ৮৭৬ نW শিবের মৃত্যমূৰ্ত্তির উদ্ভব কি করিয়া হইল সে সম্বন্ধে নানারূপ কাহিনী চলিত আছে । এই সব পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে মিল নাই, নানা গ্রন্থে নানা অবস্থায় । নৃত্যের কথা পাওয়া যায় ; ধেমন, ভরতের নাট্যশাস্ত্রে