পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৭৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢wo প্রবাসী 5989 —জগদীশবাবুর সঙ্গে ওঁর ভাব আছে যথেষ্ট, কিন্তু উনি ডাক্তারি ওষুধ বিশেষ পছন্দ করেন না, উনি কবরেজি কিংবা হাকমি ওষুধের পক্ষপাতী— —ও, তাই না কি ? বিমল ভাবিয়া পাইতেছিল না কি উপায়ে এই পুরুষসিংহটিকে খুশী করিতে পারিবে। ডাক্তারি ঔষধই যে ব্যক্ত পছন্দ করে না তাঙ্গাকে খুশী করা তো সহজ হইবে না ! নিজের হাত-ঘড়িটা দেখিয়া বিমল বলিল— পরেশ-দা, বেশী দেরি করা চলবে না, প্রায় সাতটা বাজে, হাসপাতালে যেতে হবে। প্রকাশবায়ু সাড়ে সাতটায় যাবেন বলেছেন, তাছাড়া কালকের সেই রুগীটা কেমন রইলো জানবার জন্যে মনটা ছটফট করছে— পরেশ-দা বলিলেন--না বেশী দেরি হবে না। তাহার পর হাসিয়া বলিলেন—আটঘাট বেঁধে নিয়ে তার পর কাজ স্বরু ক'রে দাও না তুমি ! এ-বেলা বদিবাবু তো হয়ে গেল ও-বেলা চেয়ায়ম্যান আর জগদীশবাবুর সঙ্গে দেখা হলেই আপাতত নিশ্চিন্দি ! বাকী মেম্বারদের সঙ্গে তার পর ধীরে মুস্থে দেখা করলেই চলবে— —চেয়ারম্যান কে ? —রাখাল নন্দী, ধৰ্ম্ম-ধৰ্ম্ম বাই, কিন্তু টাকার কুমীর । তোমাদের হাসপাতালের ইনডোর রুগীদের খাওয়ার খরচ ওই একা দেয় । একটু থামিয়া বিমল বলিল—জগদীশবাবু ডাক্তারও কি হাসপাতাল কমিটির মেম্বার না কি ? —নিশ্চয়ই, বেশ শাসালে মেম্বার। ও লোকটিকেও হাতে রাখতে হবে, বড় গভীর জলের মাছ— বিমল মনে মনে একটু চিন্তিতই হষ্টয়া পড়িয়াছিল। এই সব বিভিন্ন প্রকৃতির লোকগুলিকে সে এক কি করিয়া খুবী করিয়া রাখিবে । ইহা তে রীতিমত সমস্যার আকার ধারণ করিতেছে! আরও কিছুক্ষণ চলিবার পর পরেশ-দা বলিলেন—ঐ যে বদিবাবু বাইরেই দাড়িয়ে আছেন । বিমল দেখিল একটা বড় বাড়ীর গেটের সম্মুখে দীর্ঘাকৃতি এক ব্যক্তি দাড়াইয়া আছেন । গায়ে একটি খন্দরের ফতুয়, খন্দরের একটি কাপড় লুঙ্গির মত করিয়া পর, মাথায় প্রকাও টাক, হস্তে একটি নিমের দাতন। —পরেশবাবু যে, আম্বন আমুন ! সঙ্গে ৪টি কে ? বিমল অগ্রসর হইয় পদধূলি লইল । পরেশ-দা বলিলেন–বিমল চাটুজ্যে, আপনাদের নতুন ডাক্তার— —আরে, তাই নাকি বা বাঃ বা: —আসুন ভেতরে আম্বন। তাহার পর বিমলের দিকে চাহিয়া একটু হাসিয়া বলিলেন—সব খবর পেয়ে গেছি ভোরেই ৷ বিমল বুঝিতে পারিল না কিসের খবর। বদিবাবু সামনের দাতে দাতনটাকে বার-দুই ঘষিয়া বলিলেন— আপনার রুগীকে দেখে ও এসেছি, ভাল আছে বুড়ী । তাহার পর বিমলের পিঠটা চাপড়াইয়া বলিলেন – বা, এই তো চাই ! চাটুজ্যে না হ’লে কি এ আর কারও দ্বারা সম্ভব হ’ত ? কি বলেন পরেশবাবু, আমুন ভেতরে, আমি ততক্ষণ মুখটা ধুয়ে আসি। বদিবাবু ভিতরে চলিয়া গেলেন। পরেশ-দ্বার সহিত বিমল ভিতরে ঢুকিয়া একখানি চেয়ারে বসিল । একটু পরেই বদিবাবুর দুই জন মক্কেল, তিন জন কংগ্রেসকৰ্ম্মী, সাহায্যপ্রার্থী একটি যুবক, মিউনিসিপালিটির কেরাণী মহেশবাবু আসিয়া প্রবেশ করিলেন। সকলেরই বদিবাবুর সহিত প্রয়োজন । প্রকাশবাৰু সেদিনই চার্জ দিলেন । সমস্তই এমন এলোমেলো ও অগোছালো অবস্থায় ছিল যে, আইনতঃ চার্জ লইতে গেলে অন্তত: পাচ-ছয় দিন লাগিত, প্রকাশবাবুও বিপন্ন হইতেন। খাতাপত্রের কিছুই ঠিক ছিল না। বে-আইনী ভাবে কোনক্রমে গেfজামিল দিয়া বিমল প্রকাশবুবুকে রেহাই দিয়া দিল। প্রকাশবাবু সেই দিনই দুপুরের ট্রেনে চলিয়া গেলেন । যাইবার সময় বিমলকে বলিয়া গেলেন—আমার ঐ নড়বড়ে চৌকিট আর হাতল-ভাঙা চেয়ার দুটে আপনাকে দান ক’রে গেলাম বিমলবাবু । ওগুলো ভাল কাঠাল-কাঠে তৈরি, কজাগুলো ঠিক নেই খালি—অর্থাৎ আমার মতই অবস্থা–হাঁ-হাঁ-হাঁ-হা—