পাতা:প্রবাসী (ঊনচত্বারিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চৈত্র কেমালের আদম্য পুরুষকারের ফলে, দেশের জাতীয় অবস্থা ফিরিল । ১৯১০ খৃষ্টাব্দের ১০ই অগষ্টের সেভ সন্ধিপত্রে পরাজিত তুর্ক জাতির দাসত্বের ব্যবস্থা এবং ১৯২৩ খৃষ্টাব্দের ২৪শে জুলাইয়ের লসান সন্ধিপত্রে বিজয়ী স্বাধীন তুর্কদিগের জন্য নূতন ব্যবস্থা, এই দুইটি মিলাইয়া দেখিলেই বুঝা যায় ঐ চার বৎসরে কি অসাধ্য সাধনই তুর্ক-পিতা কেমাল ও তাহার বীর, সহিষ্ণু ও সুশৃঙ্খল সস্তানগণ করিয়াছিলেন । গত মহাযুদ্ধে পরাজিত জাতিদিগের মধ্যে একমাত্র তুর্কই উন্নতশির হইয়া লসান সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করিয়াছিল । তুর্ক জাতির অবস্থার এই অলৌকিক পরিবর্তনের মূলে এক প্রাতঃস্মরণীয় মহাপুরুষ । গত বিশ বৎসরের গতি দেখিয়া এবং বিভিন্ন দেশ ও জাতির স্থিতি, প্রগতির বা অধোগতির পরিমাণ দেখিয়া, নিরপেক্ষ বিচারক মাত্রই বলিতে বাধ্য যে গত মহাযুদ্ধের পরে যে-সকল বিরাট রাষ্টনায়ক পৃথিবীর নানা দেশের ভাগ্যচালনা করিয়াছেন তাদের মধ্যে মুস্তাফ কেমালের স্থান উচ্চতম স্তরে— বোধ হয় সৰ্ব্বোচ্ছে । অন্য দেশ বা জাতির উপর অত্যাচার না করিয়া, নিজের দেশে দমননীতি না চালাইয়া, আর uকানও দেশ স্বাধীনতা, সামা ও কুষ্টির পথে এত অল্পদিনে এতটা অগ্রসর হয় নাই । ইহা সত্য যে তুর্ক জাতি এখনও সভ্যতার চরম সোপানে উঠে নাই, কিন্তু সামান্য ষোল বৎসর পূর্বে সে কত নীচে ছিল তাঙ্গ জানিলে তুর্কের প্রগতির পরিমাণ বুঝা যায়। তুর্ক-পিতা কেমাণুের মহাপ্রাণের পরও ভাঙ্গর প্রাণাধিক প্রিয় দেশের দৃঢ় স্থিতি গুহার আদশের শাশ্বতত্ব প্রমাণ কৰ্পে । স্বাধীনতার যুদ্ধে জয়লাভ করার অব্যবহিত পরেই মুস্তাফ কেমাল আস্কারায় জাতীয় মহাসভার সম্মুখে নিম্নলিখিত রাষ্ট্ৰীয় আদর্শগুলি উপস্থিত করেন— ১ । দেশের সীমার মধ্যে দূরতম অঞ্চলে পর্যাস্ত, জাতির সমুদ্ধি ও ভাগ্যপরিবর্তনের জন্য যাবতীয় কায্যের আরম্ভ এবং সৰ্ব্বব্যাপারে স্বাবলম্বন এবং স্বকীয়ু শক্তি সামর্থের উপর সম্পূর্ণ নির্ভর । ২ । দেশের লোককে উদ্ধাম বেভিসারী প্রবৃত্তি হইতে নিরস্তীকরণ । দায়ার বেকিয়ে আতাতুর্কের ভবন ৩ । সভ্য বহির্জগতের সঙ্গে সাম্য ও স্লখ্য স্থাপন এবং অন্য সকল জাতির সহিত পারস্পরিক মঙ্গুষ্যোচিত উদার ও ভদ্র ব্যবহারের প্রচলন । এই আদেশ রক্ষায় তুর্ক জাতি কতটা সফল হইয়াছে তাহাই ঐ জাতির ও উহার নেতার বিরাট পৌরুষের ও সত্যকামিতার পরিচয় । পুরাতন অটোমান সাম্রাজ্যের ধ্বংসস্তুপের উপর নূতন দেশ ও নূতন দেশের সংগঠনের জন্য যাহা কিছু বর্জন করা প্রয়োজন, যাহা কিছু প্রবর্তনের যোগ্য, সকলই স্বরু হইতে শেষ পৰ্য্যন্ত স্পষ্ট ভাবে স্বীকার করিয়া লইতে দেশকে প্রস্তুত করা হইল। দেশকে জানান হইল, নূতন রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও সভ্যতার অভিনবতম দানের ভিত্তির উপর স্থাপিত হইবে সভ্যতার পথে তুর্ক জাতিকে এখনও বহুদূর অগ্রসর হইতে হইবে, অতএব যে পথে ও যে ভাবে দ্রুততম গতিতে আদর্শে নিশ্চিত পৌছান যাইবে সেই পথ ও সেই ব্যবস্থা এখন হইতে স্থির করা প্রয়োজন। জাতীয় প্রগতির সম্মুখে যাহা কিছু বাধারূপে ছিল সে সকলই দৃঢ়তার সহিত বর্জন করা হইল । এইরূপে রাজতন্ত্র ত্যাগ, প্রজাতন্ত্র গঠন, জনরাষ্ট্রের প্রচার, খিলাফং বিনাশ, রাষ্ট্র ও ধৰ্ম্মের পৃথক ক্ষেত্র নির্দেশ, পাশ্চাত্য বেশ, বিশেষত: টুপি পরিধান প্রবর্তন, মোল্লা-দরবেশদিগের জমায়েং , উচ্ছেদ, পাশ্চাত্য পঞ্জিকার , প্রবর্তন, নূতন শাসন-আইন স্থাপন, পর্দার উচ্ছেদ, রোমান অক্ষরে লিখন ও তুর্কি ভাযায় নেমাজের প্রার্থনাদির প্রচলন—একে একে সবই হইল। এই সকল নূতন মত ন