পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] চাপা আগুন ዓöዓ তন্ত্রী এমনি টানূ টান হইয়া উঠিয়াছে যে, এতটুকু আঘাতে বেদনা বোধ হয়। গোয়ার আত্মভোল৷ দেবরাটর জন্ত স্বস্তি সে একদিনও পায় নাই, ওই কারণেই। নাওয়া নাই, খাওয়া নাই, দেহটার যে বিশ্রামের প্রয়োজন হয় সে সত্য সম্বন্ধে অজ্ঞতার সীমা নাই, ভবিষ্যতে যে কি করিয়া দিন চালাইবে, সে-বিষয়ে মারাত্মক উদাসীনতার অন্ত নাই, কংগ্রেগ, খন্ধর, পিকেটিং এই সব লইয়াই পাগল হইয় আছে। কলেজ ছাড়িয়াছে। অত্যন্ত কম পড়িয়া এবং এতটুকুও স্বাস্থ্য হানি না করিয়া সে যে বরাবর ফাই হুইত, ম্যাটিকে পনের টাকা স্কলারশিপ পাইয়াছিল, গৰ্ব্বোজ্জলমুখে পাড়াপড়শীকে সেকথা শুনাইতে মাধবীর বুক ফুলিয়া উঠিত। সে গৰ্ব্বে ঘ পড়াতে মাধবীর বাজিয়াছে। কিন্তু সব চেয়ে বেশী বাজিয়াছে দেবরের শরীরের প্রতি নিৰ্ম্মম অবহেলা এবং অত্যাচার। পড়াশুনা ছাড়িয়াছে, ছাডুক । দেশসেবা করিতেছে, করুক। শরীরটার দিকে যদি এতটুকু নজর ধিত ছেলেট, মাধবী বাচিত । নিত্য অনুযোগ দেয়, আজও দিল। বলিল, “আচ্ছা ঠাকুরপো, নিজেকে অনৰ্থক কষ্ট না দিলে কি দেশের সেবা ट्यू नी ?” “বিছানায় শুয়ে শুয়ে ?” “খোচা দিয়ে আমায় চটাতে পারবে না ভাই, মিথ্য চেষ্টা। সারাদিন থেটে—মরুক গে, তোমাদের প্রকাগু একটা ভুল ধারণা আছে ঠাকুরপো যে, খুব খানিকটা কষ্ট ভোগ করলেই চমৎকার দেশসেবা হয়ে গেল ! প্রয়োজন থাকু আর না থাকৃ। যে দুখকৈ এড়ান যায়, ইচ্ছে করে তাকে টেনে আমার মধ্যে এতটুকু দেশভক্তির পরিচয় নেই, এ তোমায় আমি বলে রাখছি। কোন লাভ না থাকলেও মিছামিছি কষ্টভোগ করা শুধু উচ্ছ্বাস, দেশভক্তি নয় ।” শিবপদ বলিল, “মিছামিছি কি রকম ? “মিছামিছি নয় ? কোন সকালে চারটি মুড়ি খেয়ে বার হয়েছিলে, ফিরলে শেষবেলায়। সমস্তটা দিন অনাহারে—থাওনি নিশ্চয় কিছু।" মুছ হাসিয়া শিবপদ বলিল, “না।” মাধবী বলিল, “সে জানি । এই যে না খেয়ে রইলে এটাই জে মিছামিছি কষ্ট্ৰভোগ করা। নাওয়া-খাওয়া না ছাড়লে দেশের সেবা হয় না, এর সপক্ষে একটা যুক্তিও কি তুমি দিতে পার ?" শিবপদ কি বলিতে উদ্যত হইতেই বাধা ধিয় মাধবী বলিল, “কেন থাগুলি জানি। সার ফিলিপ সিডনির মত তুমি মহানুভব, গ্রেটার নিউ-এর খাভিরে যে কট পয়সা খাবার কিনে পেতে খরচ হত, দুভিক্ষ-ফণ্ডে দান কর । কিন্তু এমন করলে কদিন কাজ করতে পারবে ভেবে দেখেছ ? সব জিনিযেই সংঘম হল সব চেয়ে বড় কথা । দেশসেবার বেলাতেও তার অন্যথা নেই। বাড়াবাড়ি করলে তার ফুল কোনদিন ভাল হয় না। প্রক্ষতির কাছে দেশভক্তির গুজর চলে না, শক্রত করলে প্রতিশোধ সে নেবেই । পয়সা দিয়ে থাবার ন৷ কিনতে চাওঁ, এগারটাবারটার সময় ফিরে থেয়ে দেয়ে আবার বার হতে পাৰ্বতে । শিবপদ বলিল, “দেরী হল কেন শুনবে ? বড়বাজারে পিকেটিং করলাম এগারট। পয্যন্ত । তার পরে খদ্দর নিয়ে বার হলাম। একটার সময় ফিরব ভেবেছিলাম, কিন্তু আর একটা বাড়ী ঘুরে যা এই রকম করতে করতে দেরী হয়ে গেল।” মাধবী বলিল, “রোজ তো তাই হয় ! দুটো তিনটের কমে একদিনও ফের না। দু একখানা কাপড় কম বিক্রি হলে বিশেষ ক্ষত্তি নেই, অমুখ হয়ে পড়লে যে একখানাও বিক্রি করতে পারবে না ! বিছানায় শুয়ে শুয়ে কড়িকাঠ . গুণতে হবে । ক’জোড় বিক্রি হল ?" শিবপদ হালি মুখে বৌদির মেহের অঙ্গুযোগ শুনিতেছিল, হালি মিলাইয়া তার মুখ মান হইয়া গেল। মাথা নীচ করিয়া বলিল, “আড়াই জোড় ।” “ঠাকুরপো!” মুখ তুলিয়। শিবপদ দেখিল মাধবীর চোখে জল। “এ পণ্ডশ্রম কেন করছ ভাই ? তোমার এ পরিশ্রমের দাম যে একশ জোড়া বিক্রি হলে ওঠে না!” শিবপদ কথা কহিল না, তার অন্তরেও জালা ধরিয়া গিয়াছিল। পণ্ডশ্ৰম ? ভাবিতেও তার অসহ্য মনে হয়। কিন্তু কি প্রাণপাত পরিশ্রমের কি তন্ত্ৰ