পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سراويل sq" প্রবাসী—চৈত্র, NVIV [ ২৯শ ভাগ, ২য় খণ্ড প্রতিদান! কত বড় আশা লইয়া সে কাজে বাহির হয়, কি নিবিড় নিরাশ লইয়া ফিরিয়া আসে ! বুকভরা উদ্যম, প্রাণভরা উৎসাহ, সাফল্যের কল্পনায় অনিৰ্ব্বচনীয় আনন্দের অনুভূতি, এমন সব সম্পদ তার থাকে প্রত্যেকটি দিনের প্রারম্ভে ! দিনের শেষে ব্যর্থতার আঘাতে সে-সকল ঠনকে কঁাচের বাসনের মত টুকর টুকরা হইয়া ভাঙিয়া যায়। ভাঙা কাচের মতই সে টুকরাগুলি তার হৃদয়কে রক্তাক্ত করিয়া তোলে। —ম ফলেষু কদাচন। সে জানে। এই মহামন্ত্র স্মরণ করিয়া প্রত্যেক দিনের নিষ্ফলতার বিষাক্ত মাদকতা মন হইতে দূর করিয়া দেয়। বৰ্ত্তমানকে অস্বীকার করিয়া ভবিষ্যতের সার্থকতার স্বপ্ন দেখিয়া সে সাত্ত্বনা পায় ; কিন্তু সকল সময়ে বর্তমানকে ভুলিয়া যাইতে কি মান্তষ পারে ? —থম্বর ? খন্দর মশাই টেকে কম, দামও বেশী। দেশী মিলের কাপড় পরছি, আর কি চান ? দুএকখানা যা আছে তাতেই কাজ চলে যায়, মিটিং-টিটিংয়ে যেতে—- বোঝেন না ? এমনি ধরণের কথা শোনে সে বাড়ী-বাড়ী। ক্ষুধাৰ্ত্ত শ্রান্ত ব্যর্থতাপীড়িত দেহমনে ‘বোঝেন না ?-র অর্থযুক্ত রেশটুকু যেন আগুন ধরাইয় দেয়। বোঝে বৈকি সে, ভাল করিয়াই বোঝে। আর বোঝে বলিয়াই এক এক সময় ইচ্ছা করে খন্দরের বোঝা রাস্তায় ফেলিয়া গঙ্গায় ডুব দিয়া আসে ; ফিরিবার পথে বড়বাজার হইতে কিনিয়া আনে থানকতক খাটি বিলাতি বসন! কতক্ষণ নিঃশব্দ থাকিয়া শিবপদ বলিল, “তোমার বাতাস মিষ্টি লাগছে বৌদি, কিন্তু তেষ্ট মিট্‌ছে না।” পাখা রাখিয়া মাধবী উঠিয়া গেল। একটু পরে পাথরের প্লাসে সরবত লইয়া প্রবেশ করিল শিবপদর ছোটকোন মলক । বছর পনর বয়স, শান্তশ্ৰীমণ্ডিত সম্পানির দিকে চাহিলে স্বন্দরী বলিতে ইচ্ছা না করলেও, বেশ ভাল লাগে। রূপের পরিস্ফুট দীপ্তি নাই, আভা আছে । শিবপদর হাতে সরবতের গ্লাস দিয়া অলকা বলিল, "একবার ওঘরে যাবে ছোড়দা ? “কেন রে?” “আশিতে চেহারাগানা একবার দেখবে।” "কেন ? চেহারাটা খুলেছে নাকি আজ ?” অলকা বলিল, “খোলেনি আবার ! কে যেন এক বোতল কালি ঢেলে দিয়েছে। তোমার খঙ্গরের বস্তায় আগুন না দিলে চলছে না ছোড়দা ।” একনিঃশ্বাসে মাসটা খালি করিয়া শিবপদ বলিল, “বুকলি অলি, কিছু হ’ল মা ! এক কলসী হ’লে হয়ত হ’ত ? কি বলছিলি ? খন্দরে আগুন দিতে চাস ? দে না, বাচি তাহলে ।” "বাচো যা জানা আছে । খন্দরে আগুন দিলে তোমার গায়ে ফোঙ্ক পড়বে না ? বোলো তেল আনছি, রোজ রোজ রুক্ষু নাওয আবার তোমার এক বিটকেলে সখ,” বলিয়া অলকা চলিয়া গেল। শিবপদর দাদা রমাপদ সন্ধ্যার সময় বাড়ী ফিরিয়াই ভাইকে ডাকিল। নাইট স্কুলে পড়াইতে যাইবার জন্য শিবপদ জাম পরিতেছিল ; ডাক শুনিয়া দাদার ঘরে ঢুকিল। শ্রাস্তদেহে রমাপদ তক্তপোষের কোণে- প - গুটাইয়া বসিয়াছিল, বলিল, “কাল আমার সঙ্গে আপিসে বেরুবি শিৰু। নীরদবাবুর পোষ্টটা তোকে দিতে বড়বাবু রাজী হয়েছেন। এখন পয়তাল্লিশ পাবি, সামনের বছর সত্তর করে দেবে,” বলিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া নিজের মনে বলিতে লাগিল, “বাপ, ধে করে বড়বাবুকে হাত করেছি ! তিনটে-না-চারটে এম-এ, বি-এল পৰ্য্যস্ত দরখাস্ত দিয়েছিল। কি ভয়ানক দিনকাল পড়েছে, ভাবলেও মাথা ঘুরে যায়।” বহুদিন হইতেই ভাইয়ের একটা হিল্পে লাগাইবার চেষ্টায় সে ছিল, এতদিন পরে সফল হইয়া সে যে অত্যন্ত খুশী হইয়াছে তাহা স্পষ্টই বোঝা গেল। শিবপদর মুখ মান হইয়া গেল। অনেকদিন হইতেই দাদার মুখে এমনি একটা প্রস্তাব শুনিবার আশঙ্কা সে করিতেছিল । সংসারের অনটনের কথা সে ভাল করিয়াই জানে। আশীটি টাকা পায় তার দাদা, বাড়ীভাড়া যায় কুড়ি। বাকী যাটটি টাকা হইতে পাচটি মানুষের বাচিয়া থাকার ব্যবস্থা করিতে অৰ্দ্ধেক মাস কাবার না হইতেই বৌদিকে যে কি বিপুল সমস্যার সঙ্গে মুখোমুখি দাড়াইতে হয় সে-সংবাদও সে রাখে । দুঃখের তার সীমা থাকে না।