পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] হবে । ওর গল্প পড়বে, সিলেক্ট করবে, তারপর ছাপবে-তারপরে যদি ভাগ্যে থাকে-টাকা । সাবিত্রী এবার জোরেই হাসিয়া উঠিল । বলিল, তোমার যে দেখছি বেজায় তাড়া লেগে গেল আজ । ভারত বলিল, হ্যা, আজ আমার মুসময় এসেছে । গল্প আজ বাতাসে ভর করে ছুটে চলবে। প্লট ট তুমি বল। দেখে, মনের সঙ্গে হাতের কলম চলতে পারবে না। এইটেই হল গল্প লেখার প্রধান জিনিষ, এই লেখার ইচ্ছ, এই আকুলত । সাবিত্রী দুষ্টামি করিয়া হাসিয়া বলিল,—আচ্ছ, এবার বলি, কেমন ? ভারত অধীরভাবে বলিল,—বল, আমি ত কথন থেকে তোমাকে বলতেই বলছি । সাবিত্রী বলিল,—তুমি চোখ বন্ধ কর । ভারত বিরক্তির স্বরে বলিল,—করলাম । সাবিত্রী আবার বলিল,—আলোটা নিবিয়ে দিই । আমার বলা শেষ হলে আবার জেলে দেব । ভারতের ধৈধ্যের সীমা এবার যেন টুটিতে চাহিল । বলিল,-দাও নিবিয়ে । বাবা বাবা:, কি যে করছ একটা সামান্য প্লটু বলতে গিয়ে । সাবিত্রী হাসিয়া বলিল, তোমাদের প্লট যেমন দক্ষিণ বাতাসে ভর করে আসে তেমনি উত্তরে বাতাসে ঝরে পড়ে। আমাদের ত আর তা নয় । আমাদের গল্প হচ্ছে একটা, প্লটও একটা । সেটা বাতাসে ভর ক’রে আসেও না, বাতাসের ভরে ঝরেও যায় না। আমাদের সমস্ত অস্তিত্বকে জড়িয়ে রয়েছে সে । এতে ষে-রং লাগাবে সে-রকমটি দেখাবে । ভারত কথা বদ্ধ করিয়া দিয়া চুপ করিয়া চাহিয়৷ ब्रझिल । সাবিত্ৰী বলিল,—রাগ করে না। আমাদের ছোট সংসারটিই হচ্ছে আমার গল্প, আমার প্লটু । আমাদের মুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষ, অল্পদুর-বিস্তার আমাদের কল্পনা, এরই মধ্যে নাচে, কাদে, ওড়ে। তাই বলছি আমাদেরই সংসারের কথা লেখ । এর মধ্যে কষ্টও আছে যতখানি, জাননাও আছে ততখানি। শুধু ుళి আশার বাসা ›ዓል কষ্টের কথাই বড় করে লিখো না, আননের কথাও লিখে । ভারত তন্ময় হইয়া শুনিতেছিল । হঠাৎ টেবিলের উপর হাত চাপড়াইয়া বলল,—পেয়েছি। আর বলতে হবে না । সাবিত্ৰী বাধা দিয়া বলিল,—পাও নি। ভারত যেন দমিয়া গেল। কহিল,—আমি বলছি, দেখ কি চমৎকার হয়। সাবিত্রী মাথা নীচু করিল, বলিল, একটা কথা তোমাকে বলতে চাই । তোমরা গল্প লেগ, কিন্তু তা পড়ে মানুষের মনে তার দুঃগটাই বড় করে দেখা দেয় । তাতে করে দুঃথের আর ইজ্জত থাকে না । আমরা অভাবে-অনটনে, নানা বিপদে-আপদে দুঃখ পাই সত্য, কিন্তু তার ভিতরেও কি আমরা একটা স্কুপের সংসার কামনা করি না ? ভারত বলিল, কামনা করি, কিন্তু পাষ্ট কি ? সাবিত্ৰী বলিল,—সেই কামনার মধ্যেই যতটুকু আনন্দ তা কি তোমার আমার পক্ষে কম ? আমাদেরও কি আশা হয় না—একদিন আমাদের এত অভাব সব চলে যাবে, তোমার সমস্ত কল্পনা সোনার কাঠির ছোয়ায় হয়ত একদিন সোন হয়ে উঠবে, সমর আমাদের বড় হবে, দেশের নাম রাখবে, পরিবারের নাম রাখবে, আমাদের সংসারের শ্র তখন ফিরে যাবে, সমরের ছেলে মেয়ে কত আনন্দ করবে, আমরা তাই অবাক হয়ে দেখ ব—এই আশা কি কম স্বথের ? অাশা ফলুক না ফলুক, কিছু আসে যায় না—আশায় বেঁচে থাকাটাই আমাদের পরম সৌভাগ্য । ওকে তোমরা তেতো করে দিও না, ওকে তোমর। মানুষের মন থেকে একেবারে নির্মুল করবার চেষ্টায় এমন করে উঠে-পড়ে লেগে না —বলিতে বলিতে সাবিত্রীর চোখ জলে ছল ছল করিয়া উঠিল। তবু সে মনের আবেগে বলিতে লাগিল—কি হয়েছে কষ্ট আছে, কি হয়েছে বেদনার ভারে মাহুষের মন ভেঙে যাচ্ছে ? তবু আশা করতে দাও মাহুবকে—এত দুঃখেরও হয়ত শেষ আছে, হয়ত পার আছে, হয়ত একদিন বাংলার