পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] আশার বাসা ఫెసి ক্ষুদ্র সংসারটির সমস্ত কাজ সারিয়া সাবিত্রীকে আজকাল সেলাই ফোড় লইয়া আরও বেশী সময় দিতে হয় । পাড়ার দু-চার ঘর ভরসা—তাদের রূপায় দু-দশট। জামাকাপড় সেলাই করিয়া দিয়া যা আসে । ' কিন্তু তাহাও চলিল না । সাবিত্রীর স্বাস্থ্যে কুলাইল না । মাসেক পরেই সে শয্যা লইল। ভারত চোখে অন্ধকার দেখিল । এমনি এক অন্ধকার দিনে একটি পনর টাকার মনিঅৰ্ডার আসিল । ভারতের গল্পটি মনোনীত হুইয়া ছাপা হইয়া গিয়াছে এ সংবাদটিও কুপনে লেখা ছিল । ভারত চাকৃরিতে এবং ভাস্করপুত্র শচীন্দ্র কলেজে ছিল, কাজেই সাবিত্রীকে মণিঅর্ডার সই করিয়া লইতে হইয়াছিল । ভারত বাড়ি ফিরিয়া সাবিত্রীর কাছে এই শুভসংবাদটি শুনিয়াও মনমরা হইয়া রহিল । সাবিত্ৰী তথন আর তাহাকে কিছু বলিল না। পরে এক সময় বলিল, এমন দুঃসময়ে টাকাটা এল এ কি ভগবানের আশীৰ্ব্বাদ ব’লে তোমার মনে হচ্ছে না ? ভারত বলিল,—গল্প যখন মনোনীত হয়েছিল তখন টাকাটা আসতই, কিন্তু তার সঙ্গের দুঃসময়টা ও পাঠিয়ে দেবার বন্দোবস্তটা বিধাত না করলেও পারতেন । সাবিত্ৰী বুঝিল, ভারত তাহার জন্য খুব ভাবনায় পড়িয়াছে, তাহার মধ্যে আর কথা বাড়াইয়া ভারতকে বিরক্ত করা উচিত নয়। তাই কথাটা খুরাইয়া লইয়া বলিল,–এ টাকাটা দিয়ে কি করব জান ? ভারত সাবিত্রীর মুথের দিকে চাহিয়৷ রহিল। সাবিত্রী হাসিয়া বলিল,-আমার জন্য অত ভেবে না। আমি দিন তিনেকের মধ্যেই খাড়া হয়ে উঠব। একটু ভাল হলেই এ টাকা থেকে আমার জন্ত একখানা ভাল এগার হাত শাড়ী, সমর আর শীলার জন্য জামার কাপড়, তোমার জন্ত একটা চায়ের পেয়ালা,আর—আর— সমরের পড়বার জন্য একটা হারিকেন লণ্ঠন, দশটাকার মধ্যে এ সব সারতে হবে—আর থাকে পাচ টাকা এই পাচ টাকা দিয়ে—এ পর্য্যন্ত বলিয়াই সাবিত্রী খুব হাসিতে লাগিল । ভারত মুখ গম্ভীর করিয়া দাড়াইয়া আছে দেখিয়া বলিল, —না তুমি রাগ করতে পারবে না। বাকি পাচ টাকা দিয়ে একদিন আমরা ভাল ক’রে চারটি ঘি-ভাত মার ংস খাব। যদি পয়সায় কুলোয় একটু পায়েস—শচীন ভালবাসে । ফরমাস শুনিয়া ভারত অবাক । তাহার তখন মনে হুইতেছিল আর ক”দিন পরেই ত ডাক্তারখানার মোটা বিল শোধ করিতে হুইবে । তাহাকে চিস্তিত দেখিয়া সাবিত্ৰী হাসিয়া বলিল— আমাকে পাগল ভাবছ, না ? ভাবছ আমার জন্ত যে এত ওষুধপত্র এল তার টাকা দেব কোথেকে । তার জন্ত ভাবনা করে না, আরেকটা গল্প লিখে পাঠিয়ে দাও, খরচার টাকা এসে যাবে। ভারত ভাবিল, বার বার কি তা হয় 1 বিশেধ কিছু না বলিয়া মনিঅৰ্ডারের কুপনটার দিকে চাহিয়া শুধু বলিল, হু । e সাবিত্রী ছাড়িল না। বালল,—হু নয়। এ টাকা থেকে আমি এক পয়সা দিচ্ছিনে জেনে রেখো । এ আমার প্লটের দাম, তোমার গল্পের নয় । সাবিত্রীর ছেলেমান্তষী দেখিয়া ভারত আর না হাসিয়া পারিল না । সাবিত্ৰীও হাসিয়া বলিল,—হাসি নয়, কালই আপিসফেরত জিনিষগুলো কিনে আনবে-জ নইলে আমাদের ধে তপ্ত খোল, কোথায় এ টাকা উবে যাবে। রাখে কেষ্ট মারে কে যেমন, আবার মারে কেষ্ট রাথে কে-ও তেমনি । একটি রাত্রি মাত্র টাকা কয়টা তাদের বাক্সে বাসি হুইতে পাইল । সকাল বেলাই একটি পাওনাদার বন্ধু আসিয়া টাকার জন্য বড় কড়া তাগিদ দিল । বন্ধু হইলেও টাকাটা অনেকদিন পড়িয়া আছে। বন্ধু যে সকল কথা শুনাইল তাহাতে মাথা খুড়িয়া হইলেও টাকা কয়টা ফেলিয়া দিতে ইচ্ছা হয় । ভারত অনেক কালের ঋণ শোধ করিতে পাইয়া একটু যেন হালকা বোধ করিল। সাবিত্ৰী হাসিয়া বলিল, টাকা কয়টা গেল ত ? ভারত মুখ কাচুমাচু করিয়া বলিল,—অনেকদিন হয়ে গেল এনেছিলাম, ভাগ্যিস স্বাজ দিতে পারলাম, বলিয়া সে সাবিত্রীর মুখের দিকে চাহিল । সাবিত্ৰী বিছানায় উঠিয়া বসিয়াছে। বলিল—ভাবছ