পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা ] ফাষ্ট বুক ও চিত্রাঙ্গদা ১৭৩ দু-টাক তিন টাকা ও-সব বড় মাহষী কথা, খুব কমের মধ্যে কত লাগে ? নকুড় কহিলেন—বোধ হয় গগুী-চারেক পয়সা নেবে, কিনিনি কখনও। মাষ্টারীর পয়সা—মুখে রক্ত-ওঠানো পয়সা । ও রকম বাজে খরচ করলে চলে ? পশুপতি তখন ফৰ্দ বাহির করিয়া আর একবার পড়িতে পড়িতে জিজ্ঞাসা করিল—আর, পাথুরে চুন দু-সের ? নকুড় কহিলেন—তিন আনা । এবারে নকুড়ের হাতে কমলের চিঠিটুকু দিল । কহিল,—মজাটা দেখুন মশাই, ছেলে আবার চিঠি লিখেছে—ফরমায়েসটা দেখুন পড়ে একবার । বলিয়া হা হা করিয়া হাসিতে লাগিল । তারপর বড় ফর্দখানি দেখাইয়া বলিল—বড় সমস্যায় পড়েছি, একটা সংযুক্তি দিন ত নকুড়বাৰু । পুজি মোটে পাচ টাকা দু-আনা—ফন্ধের কোন কোনটা বাদ দি ? দেখি—বলিয়া নকুড় চশমা বাহির করিয়া নাকের উপর পরিলেন । তারপর বিশেষ প্রণিধান করিয়া বলিলেন,-ছেলেপিলের ঘর, দুধ মেলে না বোধ হয়—তাই বালির কথা লিখেছে ; ওটা নিয়ে ষেও। তা জিরেমরিচ চুন-টুণ সব বাদ দাও । ছবির বই পয়সা দিয়ে কিনে কি হবে ? যা বললাম পার ও একখানা ক্যাটালগ নিয়ে যেও । তোমরা বোঝ না, ছেলেপিলে যখন আবদার করে মোটে আস্কারা দিতে নেই । তাদের শিখিয়ে দিতে হয়, এক আধলাও যাতে বাজে খরচ না করে। গোড়া থেকে মিতব্যয়িত শিখুক, তবে ত बश्ष इ८क्— - মনে কেমন কেমন লাগে বটে, কিন্তু মোটের উপর নকুড়ের কথাটা ঠিক। পশুপতির স্মরণ হইল, সেও ক্লাসের একখানি বাংলা বহিতে সেদিন পড়াইতেছিল—“অপব্যয় না করিলে অভাব হয় না । হে শিশুগণ, তোমরা মিতব্যয়ী হইতে অভ্যাস করিবে । তাহ হইলে জীবনে কদাপি দুঃখকষ্ট ভোগ করিতে হইবে না--- এমনি অনেক ভাল ভাল কথা। ছবির বই জিরামরিচ ও চুন কিনিয়া কাজ নাই তবে, বালতী ৰালি ও কাপড়জামা किनिब्र जहे८णहे छणि८ब ।। ج صناعية নকুড় কহিতে লাগিলেন,—তিল কুড়িয়ে তাল । হিসেব ক’রে দেথ ত ভায়া, ছেলেবেলা থেকে আজ পধ্যস্ত আমরা কত পয়সা অপব্যয় করেছি। সেইগুলো যদি জমানে থাকৃত তবে আজ ছুঃখ কিসের ? বাঙালী জাত দুঃখ পায় কি সাধে ? পশুপতি আর কথা না কহিয়া ভাবিতে ভাবিতে চলিল । গ্রামের মধ্যে কয়েক বাড়ি দেবীর ঘটস্থাপন হইয়াছে। বড় মধুর সানাই বাজিতেছে, পশুপতির কানে নুতন লাগিল, এমন বাজনা সে অনেকদিন শোনে নাই। হঠাৎ সে হাসিয়া উঠিল । বলিল,—কথা যা বললেন নকুড় বাবু।–ঠিক কথা। আমরা কি হিসেব ক'রে চলি ? আমাকে আজ দেখছেন এই রকম— সথ ক’রে আমিই একবার একখানা বই কিনি—সেও একরকম ছবির বই, স্কুল কলেজে পড়ায় না,-দাম পাচ টাকা পুরো । নকুড় শিহরিয়া উঠিলেন,–পাচ টাকার বাজে বই— বল কি ? - —ম্ব, পাচ টাকা । তখন কি আমার এই দশ ? বাবা বেঁচে। পায় পম্প শু-মাথায় টেড়ি। কলকাতায় বোডিংয়ে থেকে পড়তাম । মাসে মাসে টাকা আসে । ফুৰ্ত্তি কত বইখানার নাম চিত্রাঙ্গদা—সেই যে অর্জুন আর চিত্রাঙ্গদা—পড়েন নি ? নকুড় কহিলেন,—পড়িনি আবার-কতবার পড়েছি । বল ষে মহাভারত । আজকাল সেই মহাভারত বিকুচ্ছে এগার সিকের । পশুপতি কহিল,—মহাভারত নয়, তাহলেও বুঝতাম বই পড়ে পরকালের কিছু কাজ হবে। এমনি একখানা পদ্যের বই—পাতায় পাতায় ছবি । রাতদিন তাই পড়ে পড়ে মুখস্থ করতাম। এখন একটা লাইনও মনে নেই । পশুপতির নির্বদ্ধিতার গল্প শুনিয়া নকুড় আর কথা বলিতে পারিল না। মহাভারত রামায়ণ নয়, মহামান্য ডিরেক্টর বাহাদুরের জন্থমোদিত স্কুল বা কলেজ পাঠ্য বই নয়, এমন বই লোকে পাচ টাকা দিয়া কিনিয় পড়ে ।