পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গীত ঐগিরীন্দ্রশেখর বসু অবতরণিকা পুরাকালে মগধ দেশে শীলক নামে এক মহাতেজস্বী ধনবান ব্রাহ্মণ বাস করিতেন । শব্বীলক শালপ্রাংশু মহাভুজ ও অসীম শক্তিশালী । তাহার পাণ্ডিত্যের থ্যাতি চতুদিকে ব্যাপ্ত হইয়াছিল। নানাদেশ হইতে বহু শিষ্য তঁাখার নিকট অধ্যয়ন করিতে আসিত । যুজন-যাজন ও শাস্ত্রচচ্চায় তাহার গৃহ সৰ্ব্বদা মুখরিত থাকিত । মগধে শৰীলকের সম্মানের সীমা ছিল না । শব্বালকের পুগুরীক নামে এক পুত্র ছিল । পুত্রটি তীক্ষুবুদ্ধিসম্পন্ন, অল্প বয়সেই নানা শাস্ত্রে জ্ঞান লাভ করিয়াছিল । পুগুরীক ষোড়শ বর্ষে উপনীত হইলে একদিন প্রত্যুষে তাহার পিতা তাহাকে ডাকিয়া বfললেন,—“বৎস, আজ অতি শুভদিন, আজ তোমাকে দীক্ষা দিব স্থির করিয়াছি । তুমি আজ সমস্ত দিন উপবাস করিয়া শুদ্ধাচারে থাকিবে, রাজি দ্বিপ্রহরে অমাবস্ত পড়িলে তোমাকে আমাদের কৌলিক প্রথায় দীক্ষিত করিব ; তুমি সন্ধ্যা হইতে নিজ গৃহে নিজনে অবস্থান করিয়া একাগ্রচিত্তে ভগবানের ধ্যান করিও।” পিতার উপদেশ-মত পুণ্ডরীক সারাদিন অনাহারে থাকিয়া রাত্রে নিজগৃহে ভগবানের নাম স্মরণ করিয়া পিতার প্রতীক্ষায় বসিয়া রহিল । অমাবস্তার দ্বিপ্রহর রাঞ্জি ; সমস্ত পুরী নির্জন নিস্তব্ধ । সহসা পুণ্ডরীকের গৃহদ্বার খুলিয়া গেল। ক্ষীণ দীপালোকে পুণ্ডরীক দেখিল—কৌপানধারী এক বিরাট পুরুষ গৃহদ্বারে দণ্ডায়মান ; সৰ্ব্বাঙ্গে তাহার তৈললিপ্ত—উভয় স্কন্ধে শাণিত কুঠার । এই বীভৎস মূৰ্ত্তি গৃহমধ্যে প্রবেশ করিলে, ভীত পুওরীক নিজ পিতাকে চিনিতে পারিয়া অতীব বিস্থিত হইল। গম্ভীর কণ্ঠে শকীলক বলিলেন, “বংস, নিৰ্ভয় হও । তোমার দীক্ষাকাল উপস্থিত । কাষায় বস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া কৌপীন ধারণ কর ; সৰ্ব্বাঙ্গে তৈল লেপন করিয়া এই কুঠার হস্তে আমার অনুগমন কর—কোন প্রশ্ন করিও না ।” এই বলিয়া শকীলক পুত্রের হাতে একখানি শাণিত কুঠার দিলেন, অপর কুঠার তাহার স্বন্ধে রহিল । পুণ্ডরীক মন্ত্ৰমুগ্ধের মত পিতার নির্দেশ প্রতিপালন করিল। নানাপথ অতিক্রম করিয়া শীলক পুত্রকে মগধ হইতে বারানগী যাইবার রাজবক্সের পার্শ্বে এক বৃহৎ বটবৃক্ষতলে আনিয়া উপস্থিত করিলেন। বলিলেন,— “তুমি এই অন্ধকারে সতর্ক ইয়া স্থিরভাবে দাড়াইয়ু থাক, কেহ যেন তোমাকে দেখিতে না পায়।” শকীলকণ্ড পুত্রের পাশ্বে উদ্যত কুঠার হস্তে অপেক্ষা করিতে লাগিলেন । ভয়ে বিস্ময়ে ও অন্ধকারে ভ্রমণ-জনিত পথশ্রমে পুগুরীকের হৃৎকম্প হইতে লাগিল। অনিশ্চিতের প্রতীক্ষায় মুহূৰ্ত্তকে যুগ বলিয়া ভ্রম হইতে লাগিল । কপালে স্বেদসঞ্চার হইল, শরীর কণ্টকিত হইতে লাগিল । ধনবীর শ্রেষ্ঠ বিশেষ প্রয়োজনীয় রাজকাধ্যে রাজগৃহ হইতে বারানী যাইতেছিলেন । শীঘ্র পৌছিবার আদেশ থাকায় রাত্রেও তাহাকে পথ চলিতে হইতেছিল । সঙ্গে র্তাহার চৰ্ম্ম-পেটিকায় বদ্ধ দশ সহস্ৰ স্বর্ণমুদ্রা। পথ বিপদসঙ্কুল বলিয়া শকটের সম্মুথে চারিজন ও পশ্চাতে চারিজন সশস্ত্র প্রহরী চলিতেছে। শকট যেমনি সেই বৃহৎ বটবৃক্ষের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইল, অমনি বিকট হুঙ্কার করিয়া শববীলক অতকিতভাবে শকট আক্রমণ করিলেন । শকটের স্নান আলোকে র্তাহাকে অতি ভয়ঙ্কর দেখাইতে লাগিল। শকট-চালক ও রক্ষিগণ প্রাণভয়ে যে যেদিকে পারিল, পলায়ন করিল। শাণিত কুঠার ঘুরাইয়া শীলক ধনবীরের মস্তকে প্রচণ্ড আঘাত করিলেন,—রুধিরাক্ত ছিন্নমুণ্ড ভূমিতলে লুটাইল । স্বর্ণমুদ্রার স্ববৃহৎ গুরুভার পেটিকা অক্লেশে পৃষ্ঠদেশে ফেলিয়৷ শীলক বটবৃক্ষমূলে ফিরিয়া আসিলেন। এই