পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয়া শ্ৰী প্রবোধকুমার সাদ্যাল প্রথম বিবাহ যখন হয় তখন প্রথম ধেীবনের সমারোহু । প্রণধেশের জীবনে সেদিন নবীন বসন্তের আবির্ভাব । বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, আনন্দ-উল্লাস—ইহাদেরই ভিতর দিয়া সে মৃন্দরী শিক্ষিতা বধূ ঘরে আনিয়াছিল। সংসার ছিল আনন্দের হাট। তারপর একদিন আকাশের চেহারা বদলাইল, দিকৃদিগন্ত আচ্ছন্ন করিয়৷ কালবৈশাখী নামিয়া আসিল । গুরু গুরু মেঘের গর্জন, দিকৃচিহ্নহীন অন্ধকার, শিলাবৃষ্টি, তারপর বজ্রাঘাত । শাখা ও সি দুর পরিয়া প্ৰণবেশের প্রথম স্ত্রী বিদায় লইল । তাহার পর দ্বিতীয় স্ত্রী । ধ। শুকাইয়াছে, কিন্তু দাগ তখনও মিলায় নাই । তবু প্ৰণবেশ ঘর বাধিল ; ফাটলগুলি মেরামত করিল, চুনকাম করিল, জানালা দরজা খুলিয়া আলো-বাতাসের পথ করিয়া দিল । দ্বিতীয় স্ত্রীর মধ্যে প্রথমাকে সে আবিষ্কার করিয়া লইল । স্ত্রী যথেষ্ট স্বাস্থ্যবতী নয়। এক বৎসর কায়ক্লেশে ঘর করিয়া অবশেষে সে শয্যাগ্ৰহণ করিল । শয্যা সমেতই প্রণবেশ একদিন তাহাকে ট্রেনে করিয়া বাপের বাড়ি লইয়া গেল। ফিরিবার সময় দেখা গেল, স্ত্রী তাহার সঙ্গে নাই—প্ৰণবেশ একা ; অশ্রুসিক্ত তাহার মুথ । সেই হইভে কয়েক মাস সে অসঙ্গ যন্ত্রণার মধ্যে দিন কাটাইয়াছে । সুশিক্ষিত, সচ্চরিত্র ও সদ্বংশের সস্তান— জীবনে সে অন্যায় করে নাই, জীবন-বিধাতাকে সে কোনোদিন অপমানও করে নাই ! তবু সে পথে পথে ঘুরিয়াছে, অসথ লজ্জায় সমাজ হইতে দূরে সরিয়। গিয়াছে, রাত্রে দুঃস্বপ্ন দেখিয়া সে চীৎকার করিয়া উঠিয়াছে । জীবনের প্রতি তাহার গোপন মমতা ও ভালবাসা মৃত্যু: মধ্য দিয়া একটু একটু করিয়া বাড়িয়াছে, কিন্তু সে আর কাহাকেও বিশ্বাস করে না । মাচুষ তাহার কাছে অসহায়, ক্ষুদ্র, খেলনা । অবস্থার দাস,--নিয়তির পেয়ালের তারপর তৃতীয় । বিবাহ-বাড়ির গোলমাল চুকিয়ছে, একে একে সব আলোগুলি নিবিয়া গেল । এ বিবাহুে আনন্দের চেয়ে স্বস্তিই যেন বেশ । উত্তেজন নাই, একটি মন্থর ক্লাস্তির ভাব । ফুলশয্যার রাত। আলোট একধারে টিম টম্ করিয়া জলিতেছে, আর কয়েক মিনিটের মধ্যে নিবিয়াও যাইতে পারে । ধরের বাহিরে আড়ি পাতিবার মত মাহ্য কেহ নাই। না অাছে কাহারও ধৈয্য, না অভিরুচি। ঘরের উত্তর দিকে দাড়াইয়া প্রণবেশ জানালার বাহিরের শুক্ল রাত্রির দিকে তাকাষ্টয়া ছিল, ঘরের দক্ষিণ দিকে দরজার কাছে স্থললিত মাথা হেঁট করিয়া বসিয়া । দেখিলে মনে হয় একজনের কথা ফুরাইয়া গেছে, আর একজনের কথা আরম্ভ করিবার পথ নাই । ঘরের মাঝখানে খাটের উপর শষ্য রচনা করা ছিল, স্থললিত এক সময় উঠিয়া আসিয়া একপাশে শুইয়। পড়িল । বিছানায় শুইয়া জাগিয়া থাকিবার অভ্যাস সে করে নাই, সে ঘুমাইবার চেষ্টা করিতে লাগিল । প্রণবেশ তাহার দিকে একবার তাকাইল, তারপর অত্যঃ স্নিগ্ধকণ্ঠে দূর হটতেই বলিল,-চোখে লাগছে, আলোট নিবিয়ে দেবে ? স্থললিতা স্পষ্ট কণ্ঠে কঠিল,—না। এমন সহজ ও পরিচ্ছন্ন গলার আওয়াজ প্রণবেশ জীবনে শোনে নাই। সে চুপ করিয়া রহিল। অনেকক্ষণ কাটিয়া গেল, প্রণবেশ ক্লান্ত হইয়া জানালার কাছ হটতে