পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৫৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা ৷ আলেয়া ૯૭૭ আ’লচোৱা ! কৌতুহলবশে সে বিলের দিকে তাকাষ্ঠল । তাই ত! উহাই হয়ত আলেয়া ! দেখিল, যেদিক হইতে পেচার ডাক আসিতেছে ডাহারই অনেকটা পুবে বিলের মাঝামাঝি পাচ সাত স্থায়গায় আগুন জলিতেছে আবার নিবিয়া মিবিয়া যাইতেছে । পাড়াগায়ের ছেলে, বিলের কাছাকাছি বসতি, এই আ’লচোরার গল্প পঞ্চানন আশৈশব শুনিয়া আসিতেছে । আলচোরা একরকম অপদেবত, ভূত-প্রেতের জ্ঞাতিগোষ্ঠী হইবে হয়ত, তাহাদেরই মত মানুষের রক্তের উপর ঝোকটা কিছু বেশী । শিকারও বছরে জোটে নিতান্ত মন্দ নয় । আরও হয়ত ঢের বেশী জুটিত, কিন্তু আ’লচোরাদের মস্ত অস্ববিধা এই যে কিছুতেই ডাঙায় উঠিয়া আসিতে পারে না। বিলের যে-অংশ বড় নাবাল, কয়টা খাল ডালপালা মেলিয়া চলিয়া গিয়াছে এবং বারমাসের মধ্যে কখনও জল শুকায় না তাহারই নিকটবত্তী অঞ্চলে সারারাত্রি ইহার শিকারের সন্ধানে ঘুরিয়া বেড়ায়। মুখের ভিতরে দাউ দাউ করিয়া আগুন জলে, যখন মুখ মেলে সেই আগুনের হস্কা বাহির হইয়া আসে, মুখ বন্ধ করিলে আগুন আর দেখা যায় না। যদি কোন পথিক তেপাস্তুরের বিলে রাত্রিবেঙ্গ একবার পথ হারাষ্ট্ৰয় ফেলে আ’লচোরার অমনি তাহ বুঝিতে পারে, দলে দলে নানাদিকে মুখ মেলিয়া আগুন জালাইয়া পথহারাকে আর ও বিভ্ৰাম্ভ করিয়া তোলে। পথিক মনে করে, বুঝি সেই দিকে গ্রাম, মাঙ্গুষের বসতি—তা নহিলে আগুন জলিতেছে কেন ? আকুল হষ্টয়া ছুটিয়া ধায় । হঠাৎ সামনের আগুন নিভিয়া অন্ধকার হয়, পিছনে খানিক দূরে জলিয় উঠে। আশায় আগ্রহে আবার সে সেই দিকে ছুটে । এমনি করিয়! নির্জন নিশীথে ছুটাছুটি করিয়া বেড়ায় আর আ’লচোরার ভুলাইয়া ভুলাইয়া ক্রমশঃ তাহাকে জলার কাছাকাছি লইয়া ফেলে। তারপর ভয়ে ক্লাস্তিতে অশক্ত হইয়া যদি একবার মাটিতে পড়িয়া গিয়াছে—আর রক্ষা নাই— অমনি মুহূর্তে রক্ত-বুভূক্ষু অপযোনির দল চারিদিক হইতে জড়াইরা ধরিয়া তাহার রক্ত শুধিতে আরম্ভ করে । রাত্রিকালে বহুবিস্তৃত বিলের মাঝখানে, যেখানে কাদিয়া টেচাইয়া গলা ফাটাইয়া ফেলিলেও মাছবের সাড়া মেলে না কেবল সুবিপুল নিঃসঙ্গত হিমশীতল বাতাসে মিলিয়। থমথম করিতে থাকে—হঠাৎ খানিক দূরে আলো দেখিলে বিপন্ন মানুষের সুদৃঢ় ধারণা হয়, উছা নিশ্চয় গ্রামের আলো । কোনটা গ্রামের আলে। আর কোনট। ধে জলাভূমির, নজর করিয়া ভাহা চিনিবার উপায় নাই । কিন্তু চিনিবার একটা উপায় সৰ্ব্বমঙ্গলা মহালক্ষ্মী সদয় হইয়া করিয়া দিয়াছেন । কোন কালে কি কারণে তুষ্ট হুইয়া ভিনি বর ধিয়াছিলেন, সেই অবধি র্তার বাহন পেচা সমস্ত রাত্রি জাগিয়া জাগিয়া বিল পাহারা দেয়। অ'লচোরার পিছনে যদি কেহ ছুটে অমান নিশ্চয় তাহার মাথার উপর পেচা ডাকিয় উঠবে। তবে আতঙ্কে বিহবল হইয়া সকলে এই সঙ্কেত ধরিতে ፵፬ር¢ ă ! এমন অনেক দিন হইয়া থাকে, মিশুল্ক গভীর রাত্রি, আশপাশের সমস্ত অঞ্চল নিযুপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, সেই সময়ে হয়ত কোন গ্রাম-জননী হঠাৎ জাগিয়া উঠিয়া শুনতে পান বিলের দিক হইতে লক্ষ্মীপেচার কর্কশ আওয়াঞ্জ আলিতেছে। কোন এক অপরিচিত দুর্ভাগ্য পথিকের বিপদ আশঙ্কা করিয়া তাহার বুক কঁাপিয়া উঠে । বিছানার উপর উঠিয়া বসিয়া আকুল কণ্ঠে অনেকক্ষণ ডাকিতে থাকেন—নারায়ণ ! নারায়ণ ! --- ইহার পর চলিতে চলিতে আ’লচোরার প্রসঙ্গ হইতে লাগিল । পঞ্চানন তার কলেজে-পড়া বিদ্যা অনুসারে বুঝাইবার চেষ্টা করিতেছিল ষে এই আলেয়া এক রকম বাতাস, তাহাদের পেটে চোরা বুদ্ধি কিছু নাই ; কিণ্ড অপর পক্ষ বিশ্বাস করিতেছিল না। এইবার বাড়ির কাছাকাছি আসিয়া সে চুপ করিল, হঠাৎ মনে । অন্তপ্রকার আশঙ্কা জাগিতে লাগিল । এপন রাত্রি কত হুইয়াছে কে জানে ? আবার আগের দিনের মত কাও ঘটিয়া না বলে ! বাড়ি আসিয়া খাওয়া-দাওয়া চুকাইয়া সে জার তিলাদ্ধ দেরি করিল না, তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকিবার