পাতা:প্রবাসী (একত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৬৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২৬ টাকা আন ।" বলিয়া হাত দুইট প্রসারিত করিয়া দিল । হাসিলাম ; প্রতিশ্রুতি দিলাম, কাল নিশ্চয় আনিব । ` তারপর— রাত্রি তখন গভীর হুইয়া আসিতেছে । ছেলেমেয়েগুলি নিজামগ্ন । মল্লিকার কাজ তখনও সারা হয় নাই, আমি আহারাস্তে শয্যায় পড়িয়া চিন্তা করিতেছি—কাল পয়ল। মাহিনী ও পাইব ; কিন্তু পয়তাল্লিশটি টাকায় কি হুইবে ? পনের টাকা ধরভাড়া, বাকী টাকায় গোয়াল, মুর্দী ও প্রতিদিনের বাজার আদি। ঋণভার ক্রমেই দুৰ্ব্বহ হষ্টয়া উঠিয়াছে। রাত্রি পোহাইলেই উত্তমর্শ আসিয়া দরজায় দাড়াইবে । ইহার উপর কাহারও অঙ্গে বক্স নাই। যেগুলি আছে শত ছিন্ন, গলিত ও গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে বিচিত্র। সম্মুখে দুরন্তু শীত। এই স্যাতসেতে ঘর, চিরক্রশ্ন ছেলেমেয়েগুলি, অমুপযুক্ত শয্যা । কাহারও শীতবস্ত্র বলিতে কিছু নাই। আবার দুইটি ছেলেমেয়ে অমৃস্থ হইয়া পড়িল । তাহারা না পাইতেছে উপযুক্ত পথা, না দিতে পারিতেছি ঔষধ। হাসপাতাল আছে— আমার মত দরিদ্রের তাহ পরম সহায় । কিন্তু মিথ্যা অহঙ্কার ঠেলিয়া তাহার দরজায় গিয়া দাড়াইতে পারি না। রোগ ও দারিদ্র্য দেহ-মনকে নিষ্পেষিত করিতেছে, মৃত্যুর পদশকে সহসা চমকিত হইয়া উঠি। তথাপি অন্তরভরা সাধ, আশা, অহঙ্কার। ইহারা মরে না, জীবনকে কখনও গভীর-মর্শ্ব-পীড়ায় দুৰ্ব্বিষহ, কখনও আনন্দোছুল করিয়া তোলে। জীবনের এ রহস্ত-সহস৷ চিন্তায় বাধা পড়িল । তাকাইয়া দেখি পাশে মল্পিকা । মান দীপালোকে তাহার মান মুখখানি আরও মান হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু আয়ত চোখ দুইটিতে স্নিগ্ধতার ধারা টল টল করিতেছে। সে কহিল, “কি ভাবছ ?” “নতুন কিছু নয়—” সে ধীরে আমার বুকের উপর মাথা রাখিয়া শুইয়া পড়িল ; তারপর কহিল, “এত ভাব কেন ? এ দুঃখ কি কেবল আমাদের একলার ?” “জানি মণি। দেশজোড়া হাহাকার—” “আমাদের দিন তো চলে যাচ্ছে - প্রবাসী—ফাঙ্কন, ১৩৩৮ [ ৩১শ ভাগ, ২য় খণ্ড “ত যাচ্ছে । মাতুয যতক্ষণ বেঁচে থাকে, দিন তার চলে যায়ই । কিন্তু এর নাম কি বেঁচে থাকা ? সময় সময় আমার সন্দেহ হয়, আমরা মৃত্যুলোকে বাস করছি না ত ? যfক—একট, শুভ পবর দিই ।” “কি ?” “একটা মাষ্টারীর সন্ধান পেয়েছি । ছেলেটি শুামবাজারে থাকে। দু-বেলা পড়াতে হবে, দক্ষিণ বারে টাকা ।” মল্লিক। চট্‌ করিয়া উঠিয়া বসিল। মুখখানিকে আরও কঠিন করিয়া কহিল, “না কিছুতেই তা হবে না। এত থার্টুনির ওপর আবার দু-বেলা মাষ্টারী ?” হাসিয়া ফেলিলাম, কহিলাম, “এই জন্যেই তোমায় আগেভাগে বলতে চাইনি। আচ্ছ, এত খাটুনি তুমি দেখলে কোথায় ? তোমার খাটনির কাছে—” ” “তোমার ঐ এক কথা। আমায় তুমি এত বড় ক’রে দেখ কেন ?” “আর আমিই কি এত ছোট ? পারব না ? সব পারব। দরিদ্র যারা তারা না পারে কি ?” “জানি, জানি গো, জানি। সবই তাদের সইতে হয়, বইতে হয়। তাই তোমার দিকে, ছেলেমেয়েগুলোর দিকে তাকাই আর একথাটা মনে মনে ভাবি।” স্বর ব্যথিত, চোখ দুইটি দেখিতে পাইলাম না, বলিতে বলিতে সে খুকুকে বুকে জড়াইয়া শুইয়া পড়িল । छूझे পরদিন তখন প্রাসাদারণ্যশিরে রৌদ্র ছড়াইয়া পড়িয়াছে, ছেলেটর বাড়ির সম্মুখে গিয়া দাড়াইলাম। যেন ইন্দ্রপুরী। প্রকাও ফটক, ঢুকিতে ভয় করে। এ দুইয়ের মাঝে সযত্নরোপিত ফুলের বাগান ও সবুজ শল্পকোমল একট লন। কিন্তু কোন পুণ্যবলে জানি না প্রবেশকালে তেমন বাধা পাইলাম না এবং স্থপারিশের জোরে কাজেও বহাল হইলাম। গৃহস্বামী বৃদ্ধ। বিপুল ঐশ্বৰ্য্য—নানাদিকে নানারূপে চমকিত। ছাত্রটিও বেশ গৌরকাস্তি, নধর দেহ, বালক বয়স। পাঠ অপেক্ষ বেশভূষা ও জাহাৰ্য্যেই মন অধিক। ইতিমধোট সে অর্থকে চিনিয়া ফেলিয়াছে।